ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছেন নার্সরা

স্টার ফাইল ফটো

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করিডোরে রোগীদের চাপ ব্যাপক হারে বাড়ায় হাসপাতালটির নার্স ও ১১ মাস বয়সী শিশুর মা শাপলা বিশ্বাস তার কাজ ও মাতৃত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।

দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় শুধু শাপলা নয়, তার সব সহকর্মীকেই অতিরিক্ত এই চাপ শামলাতে হচ্ছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৫২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ডেঙ্গুতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৫৯৪ জন।

ফলে সহসা শাপলাদের চাপ কমার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

একদিনে হাসপাতালে ক্রমাগত রোগীর চাপ, অন্যদিকে স্বামী বিদেশে থাকায় শিশুর দায়িত্বও একাই সামলাতে হয় শাপলাকে। প্রায়ই রাতের শিফটে কাজ করতে হয় বলে শিশুর দেখভালের জন্য গৃহকর্মীর ওপর নির্ভর করতে হয় তাকে।

দ্য ডেইলি স্টারকে শাপলা বলছিলেন, 'কখনো কখনো এমনও হয় যে, আমার সন্তান গৃহকর্মীর সঙ্গে থাকতে চাচ্ছে না এবং আমি যাতে সঙ্গে থাকি, সেজন্য অনবরত কান্না করতে থাকে। কিন্তু পেশাগত দায়িত্বের কারণে সেই সময় আমার কিছুই করার থাকে না।'

হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই বোঝা যায় নার্সদের চ্যালেঞ্জ কতটা। শাপলার ভাষ্য, 'প্রতি শিফটে মাত্র ৪ জন নার্সকে প্রায় ১০০ জন রোগীর দেখভাল করতে হয়। কখনো কখনো রোগীর সংখ্যা ২০০-তেও পৌঁছায়।'

প্রায়ই এমন হয় যে, ৪ জনের মধ্যে ২ জন নার্স রোগীদের ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আর বাকি ২ জনকে রোগীদের দেখভাল করতে হয়।

ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরুষ নার্স আশিস কুমার ঘোষ ডেইলি স্টারকে জানান, নতুন রোগী ভর্তি করায় শুক্রবার রাতে তাদের ওয়ার্ডে প্রচণ্ড চাপ ছিল।

'ওয়ার্ডে তখন প্রায় ২০০ রোগী ছিল। এর মধ্যেই আমরা আরও ৩৮ জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। এত কম লোকবল দিয়ে এত রোগীকে যথাযথ সেবা দেওয়া বেশ কঠিন। তবে আমরা আমাদের দিক থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি', বলেন আশিস।

একই ভাষ্য পুরুষ নার্স শাহেদ মিয়ারও। 'এত চাপের মধ্যে থেকেও আমাদের সবসময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। কোনোভাবেই রেগে যাওয়া যায় না। কারণ আমরা গুরুতর রোগীদের সেবা দিচ্ছি।'

শাপলা, আশিস ও শাহেদের মতোই অবস্থা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত অন্যান্য নার্সদের।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, 'ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় নার্সদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ক্রমাগত তাদেরকে রোগীর প্রেসার, পালস, তাপমাত্রাসহ অন্যান্য কিছু জিনিস পরীক্ষা করতে হয়।'

'সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রতি ১০০ জন রোগীর জন্য ৩ জন নার্স থাকে', বলেন তিনি।

অধ্যাপক নাজমুল আহসান আরও বলেন, 'রোগীদের মধ্যে কারো কারো হয়তো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থেকে চিকিৎসা নেওয়া দরকার। কিন্তু শয্যা সংকটে তারা সাধারণ বেডেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তাদের আলাদা করে বেশি যত্ন নিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে নার্সদের। এতেও নার্সদের ওপর বেশি চাপ পড়ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Explosions rock Indian Kashmir

Sirens ring out in Jammu, projectiles in night sky; Islamabad says Indian drones earlier entered its airspace

6h ago