চমেকে ১০ দিনেও ঠিক হয়নি রেডিওথেরাপি মেশিন, দুর্ভোগে রোগী

চমেক হাসপাতাল
চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

তিন সপ্তাহের চেষ্টার পর ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর রেডিওথেরাপির জন্য সিরিয়াল পেয়েছিলেন সুরাইয়া আক্তার। কিন্তু গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে দেখেন রেডিওথেরাপি মেশিনটি অচল থাকায় এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।  

'আমরা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে বাঁশখালী উপজেলা থেকে এসেছি। তিন সপ্তাহ চেষ্টা করার পর সিরিয়াল পেয়েছিলাম কিন্তু এখন ফিরে যেতে হবে। চট্টগ্রামের অন্য কোনো হাসপাতালেও তো রেডিওথেরাপি নাই। আমরা এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।'

অসহায় হয়ে কথাগুলো বলছিলেন সুরাইয়া।

সুরাইয়ার স্বামীর মতো অনেক ক্যান্সার রোগীকেই হাসপাতাল থেকে সেবা না পেয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১৬ আগস্ট থেকে চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি মেশিনটি বিকল। একজন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারের অভাবে হাসপাতালের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি মেরামত করা যাচ্ছে না, ফলে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।  

বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগেই কেবল ক্যান্সার রোগীদের রেডিওথেরাপি সেবা দেওয়া হয়। এই অঞ্চলে অন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে এই সুবিধা নেই। 

চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, সাড়ে ১০ কোটি টাকা দামের মেশিনটি ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগে স্থাপন করা হয় এবং তারপর থেকে এটি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩০ জন ক্যান্সার রোগীকে সেবা দিয়ে আসছে।

গত ১০ দিন ধরে মেশিনটি অকার্যকর। চমেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্থানীয় পরিবেশক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করার পরও কোম্পানির কোনো প্রকৌশলী এখনও হাসপাতালে আসেননি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, রেডিওথেরাপি মেশিনের কাউচটি গত ১৬ আগস্ট থেকে কাজ করছে না।

গতকাল বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'মেশিন মেরামতের জন্য ইঞ্জিনিয়ার পাঠাতে আমরা ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানিকে বেশ কয়েকবার জানিয়েছি কিন্তু তারা এখনও আসেনি।' 

ডা. সাজ্জাদ বলেন, রোগীরা অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে চমেক হাসপাতালে রেডিওথেরাপি সেবা পান, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেশিনটি মেরামত করা গেলে দরিদ্র রোগীরা উপকৃত হবে।

জানা গেছে, একজন রোগীকে চমেক হাসপাতালে রেডিওথেরাপি নিতে গড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয় যেখানে বেসরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।

বর্তমানে চট্টগ্রামের কোনো বেসরকারি হাসপাতালে এই সুবিধা নেই,  তাই চমেক হাসপাতালে মেশিনটি অচল থাকায় রোগীদের সেবা নিতে ঢাকায় যেতে হচ্ছে যা শুধু তাদের জন্য দুর্ভোগের কারণই নয়, ঢাকায় গিয়ে সেবা নেওয়া বেশিরভাগ রোগীর আর্থিক সামর্থ্যেরও বাইরে।    

চমেক হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে মত ব্যক্ত করে ডা. সাজ্জাদ বলেন, হাসপাতালে  চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত মেশিনগুলি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং দ্রুত মেরামতের জন্য বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগদান অত্যন্ত জরুরি।

চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৫৭ সালে হাসপাতালটি চালু হওয়ার ৬৫ বছর পরও চমেক হাসপাতালে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারের কোনো পদ নেই। 

১৯৫৭ সালে শহরের আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল থেকে তার যাত্রা শুরু করে চমেক হাসপাতাল এবং পরে ১৯৬০ সালে শহরের কেবি ফজলুল কাদের রোডে ১২০ শয্যা ও কিছু সরঞ্জাম পরিষেবাসহ বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬৯ সালে এটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১৯৯৬ সালে ৭৫০ শয্যার, ২০০১ সালে ১০১০ শয্যার এবং ২০১৩ সালে ১৩১৩ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হয়। এই বছরের জুন মাসে হাসপাতালটিকে ২২০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। এখন চমেক হাসপাতাল দেশের অন্যতম বৃহত্তম সরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে শতাধিক বায়োমেডিকেল মেশিনের মাধ্যমের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।     

যোগাযোগ করা হলে, চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারের অভাব হাসপাতালে সুষ্ঠুভাবে পরিষেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

'আমরা রেডিওথেরাপি মেশিনের ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানিকে বারবার জানিয়েছি যে মেশিনটি  অচল হয়ে আছে এক সপ্তাহের ওপরে কিন্তু তারা  এখনও ইঞ্জিনিয়ার পাঠাচ্ছে না,' বলেন তিনি।

'হাসপাতালের মেশিনগুলি আমরা যাদের মাধ্যমে ক্রয় করি, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষেবা দেওয়ার জন্য চুক্তি আছে। এইজন্য তাদেরকে বাৎসরিক ফি দেওয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায় না। বিভিন্ন অজুহাতে তারা কালক্ষেপণ করে।' 

তিনি বলেন, 'আমরা বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুইজন বায়োমেডিকেল প্রকৌশলীসহ অতিরিক্ত জনবলের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।'

অভিযোগ নিয়ে রেডিওথেরাপি মেশিনের ডিস্ট্রবিউটর কোম্পানি প্রযুক্তি ইন্টারন্যাশনালের মহাব্যবস্থাপক মো. জামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম যেহেতু মেশিনটির ওয়ারেন্টি এখনও আছে তারা মাদার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমরা কালই আমাদের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব।'

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago