ক্ষেপণাস্ত্র নয়, কক্ষে লুকিয়ে রাখা রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমার বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন হানিয়া

লেবাননের সিডনে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করছেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া। ফাইল ছবি: রয়টার্স (২০২০)
লেবাননের সিডনে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করছেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া। ফাইল ছবি: রয়টার্স (২০২০)

বুধবার ভোরে একটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত ও উন্নত প্রযুক্তির বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, প্রায় ২ মাস আগে চোরাই পথে বোমাটি তেহরানে নিয়ে আসা হয় এবং তেহরানের গেস্টহাউসে হামাস নেতার কক্ষে লুকিয়ে রাখা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সূত্র হিসেবে এক মার্কিন ও মধ্যপ্রাচ্যের অপর সাত কর্মকর্তার কথা উল্লেখ করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তাদের মধ্যে দুইজন ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর (আইআরজিসি) সদস্য। এর আগে ইরানের আইআরজিসি নিয়ন্ত্রিত তাসনিম নিউজ এজেন্সি ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, বিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন হানিয়া ও তার এক দেহরক্ষী।

প্রয়াত হামাস নেতা হানিয়া। ফাইল ছবি: রয়টার্স
প্রয়াত হামাস নেতা হানিয়া। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়, এই হামলার পেছনে ইসরায়েল দায়ী।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে তিন ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়, হানিয়ার হত্যাকাণ্ড আইআরজিসির জন্য 'অত্যন্ত লজ্জাজনক' কারণ হানিয়া ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মেহমানরা যে গেস্টহাউসে অবস্থান করছিলেন, তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ইরানের এই বিশেষায়িত সেনাদল।

ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে আসেন হানিয়া।

ইসরায়েল এই হত্যার দায় স্বীকার ও করেনি, অস্বীকার ও করেনি। তবে ইরান ও তার সহযোগীরা এর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ ও শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

আইআরজিসির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করে, বিস্ফোরণে হানিয়ার কক্ষের জানালার কাঁচগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয় এবং কমপাউন্ডের একটি দেয়ালের অংশবিশেষ ধসে পড়লেও, সার্বিকভাবে ভবনের ক্ষয়ক্ষতি ন্যুনতম। সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে, তাদের কাছে এ বিষয়টির প্রমাণ হিসেবে কিছু ছবি রয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ মতে, ক্ষতির মাত্রা থেকে বোঝা যায় এই ভবনে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেনি। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে তা ইরানের আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এতো সহজে ফাঁকি দিতে পারতো না বলে সংবাদমাধ্যমটি মন্তব্য করে।

তেহরানের এই গেস্টহাউসেই ছিলেন হানিয়া। ছবি: সংগৃহীত
তেহরানের এই গেস্টহাউসেই ছিলেন হানিয়া। ছবি: সংগৃহীত

এমন কী, এই বিস্ফোরণে হানিয়ার পাশের কক্ষেরও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এই কক্ষে ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ নাখালেহ থাকছিলেন। ইরানের দুই কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তারা (নিউইয়র্ক) টাইমসকে জানান, 'এ থেকে বোঝা যায় যে হানিয়াকে হত্যার জন্য কতটা নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।'

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য কর্মকর্তারা টাইমসকে জানান, বিস্ফোরণটি এতোটাই নিখুঁত ছিল যে মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় বেশ কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা ও পূর্ণাঙ্গ নজরদারির পরই এই হামলা চালানো হয়েছে।

কীভাবে এবং কবে এই বোমাটি হানিয়ার রুমে স্থাপন করা হয় তারা তা জানেন না বলে দাবি করেন ইরানের দুই কর্মকর্তা। তবে অপর পাঁচ কর্মকর্তা জানান, এটি প্রায় দুই মাস আগে বসানো হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই পাঁচ কর্মকর্তা টাইমসকে বলেন, 'ঘটনার পরপরই ইসরায়েলি গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সরকারকে এই অভিযানের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে ব্রিফিং দেন।'

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তার 'বিশ্লেষণ', ইসরায়েলই হানিয়াকে হত্যার জন্য দায়ী।

খামেনির সঙ্গে বৈঠক করছেন হানিয়া ও ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ নাখালেহ। ছবি: রয়টার্স (৩০ জুলাই, ২০২৪)
খামেনির সঙ্গে বৈঠক করছেন হানিয়া ও ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ নাখালেহ। ছবি: রয়টার্স (৩০ জুলাই, ২০২৪)

আইআরজিসির সদস্যরা টাইমসকে জানান, এর আগে একইরকম নিখুঁত কায়দায় রিমোট নিয়ন্ত্রিত মেশিন গানের গুলিতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে ২০২০ সালে হত্যা করেছিল।

মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ কর্মকর্তা জানান, নিশ্চিত ভাবেই দূরবর্তী কোনো অবস্থান থেকে রিমোটের মাধ্যমে বোমাটি সচল করা হয়।

তেহরানের উত্তরে একটি বিলাসবহুল মহল্লায় নেশাত নামের আইআরজিসির কমপাউন্ডে অবস্থান করছিলেন হানিয়া। এই কমপাউন্ডটি গোপন বৈঠক, হানিয়ার মতো 'গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের' থাকার জায়গা হিসেবে ও প্রয়োজনে 'লুকিয়ে' থাকার কাজে ব্যবহার হয়।

প্রতিবেদন মতে, স্থানীয় সময় ভোর রাত ২টায় বোমা বিস্ফোরণের পর চিকিৎসাকর্মীরা হানিয়ার কক্ষে ছুটে যান। তাকে ঘটনাস্থলেই মৃত ঘোষণা করা হয়। দেহরক্ষীকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তারা।

জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা খলিল আল-হাইইয়া ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান। সেখানে তিনি হানিয়ার মরদেহ দেখতে পান।

হানিয়ার জানাজা পড়াচ্ছেন খামেনি। ছবি: রয়টার্স
হানিয়ার জানাজা পড়াচ্ছেন খামেনি। ছবি: রয়টার্স

ইরানের তিন কর্মকর্তা জানান, আইআরজিসির কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল ইসমাইল ঘানিকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয়। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে এই হানিয়ার মৃত্যুসংবাদ জানান।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিনি সংগঠন ও এর শীর্ষ নেতাদের নির্মূল করার অঙ্গীকার করে ইসরায়েল।

প্রায় এক মাস আগে ইসরায়েলি বিমানহামলায় গাজার খান ইউনিসে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ নিহত হন। এ বিষয়টি গতকাল বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে।

হানিয়াকে হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগেই বৈরুতে ইসরায়েলি বিমানহামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ কমান্ডার ফুয়াদ শোকর।

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ও সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শোকর (বাঁয়ে)। ফাইল ছবি: হিজবুল্লাহর ওয়েবসাইট
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ও সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শোকর (বাঁয়ে)। ফাইল ছবি: হিজবুল্লাহর ওয়েবসাইট

 

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

5h ago