নিউজিল্যান্ডে ক্রিস্টাল মেথ মেশানো চকলেট পাওয়া ৪০০ জনকে খুঁজছে পুলিশ

পুলিশ জানিয়েছে, চকলেটগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মেথ পাওয়া গেছে।
আনারসের স্বাদযুক্ত রিন্ডা চকলেট। ফাইল ছবি: এএফপি
আনারসের স্বাদযুক্ত রিন্ডা চকলেট। ফাইল ছবি: এএফপি

নিউজিল্যান্ডে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান আনারসের স্বাদযুক্ত চকলেট বিনামূল্যে বিতরণ করেছিল। কিন্তু এই চকলেটে নিষিদ্ধ মাদক মেথামফেটামিন (ক্রিস্টাল মেথ বা শুধু মেথ নামেও পরিচিত) মেশানো ছিল। 

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

পুলিশ জানিয়েছে, চকলেটগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মেথ পাওয়া গেছে।

ইতোমধ্যে এক শিশু, এক তরুণ ও ওপর এক দাতব্য কর্মী মাদক মেশানো চকলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

তারা কেউ গুরুতরভাবে অসুস্থ না হলেও পুলিশ ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ফৌজদারি তদন্ত প্রক্রিয়া চালু করেছে। পুলিশ এখন বাকি ৪০০ জনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, যারা এই চকলেটটি পেয়েছেন।

গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক গ্লেন বল্ডউইন বলেন, 'খুব দ্রুত সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে।'

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ১৬টি চকলেট খুঁজে পাওয়া গেছে।

পুলিশ মনে করছে, হলুদ রঙের 'রিনডা' চকলেটের প্যাকেটের ভেতর এই মাদক লুকিয়ে রেখেছিল কোনো মাদক ব্যবসায়ী।

তারপর সেগুলোকে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য নিবেদিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান অকল্যান্ড সিটি মিশনের কাছে কেউ দান করে দেয়। তারা এ বিষয়ে কিছু না জেনে-বুঝে চকলেটগুলো একটি ফুড ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করে।

বল্ডউইন বলেন, 'মাদক পাচার একটি জটিল বিষয় এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলো প্রায়ই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখে ধুলো দিতে নানা অভিনব পন্থায় এগুলো পাচারের চেষ্টা চালায়। শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, সারা বিশ্বেই এমনটা দেখা যায়।'

বল্ডউইন জানান, এক শিশু ও এক তরুণ চকলেট মুখে দেওয়ার পর সেটা গিলে না ফেলে উগড়ে দেয়। তারপর অসুস্থতার জন্য তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

'তারা দুইজনই এখন ভালো আছে', যোগ করেন তিনি।

দাতব্য সংস্থার এক কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার মাঝে মেথ গ্রহণের উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।

নিউজিল্যান্ড ড্রাগ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, উজ্জ্বল হলুদ রঙের মোড়কে মোড়ানো সাদা চকলেটটি আপাত:দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও পরীক্ষা করে এতে মেথামফেটামিন পাওয়া গেছে।

ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র সারাহ হেল্ম জানান, পরীক্ষায় এই চকলেটে ৩ গ্রাম মেথ পাওয়া গেছে। মাদকাসক্তরা সাধারণ এক ডোজে এর শতভাগেরও কম মেথ নিয়ে থাকেন।

'এই পরিমাণ মেথ হজমে গুরুতর অসুস্থতা, এমন কী মৃত্যুও হতে পারে', যোগ করেন তিনি।

তিনি সবাইকে অকল্যান্ড চ্যারিটির কাছ থেকে পাওয়া কোনো মিষ্টিজাতীয় দ্রব্য না খাওয়ার আর্জি জানান।

'আমরা জানিনা এটি কতখানি ছড়িয়ে পড়েছে', যোগ করেন সারাহ।

ক্রিস্টাল মেথ। ফাইল ছবি: এএফপি
ক্রিস্টাল মেথ। ফাইল ছবি: এএফপি

মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান রিন্ডা ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, তাদের ব্র্যান্ডের 'অপব্যবহার' হয়েছে এবং তারা তাদের 'কোনো পণ্য তৈরিতে অবৈধ মাদক ব্যবহার করে না'।

রিন্ডা জানিয়েছে, 'আমাদের প্রতিষ্ঠান নীতিমালা ও নিরাপত্তা মানদণ্ড বজায় রেখে পণ্য প্রস্তুত করে।'

অকল্যান্ড সিটি মিশনের হেলেন রবিনসন জানান, তার দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই দু:সংবাদে 'মর্মাহত'।

তিনি জানান, খুব সম্ভবত ৪০০ মানুষ এই চকলেট পেয়েছেন। মাদক মেশানো চকলেটের 'স্বাদ তিক্ত ও কটু।'

'জিহ্বার সঙ্গে সামান্য ছোঁয়া লাগলেও আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন', যোগ করেন তিনি।

মেথ সেবনে বুকে ব্যথা, হৃদকম্পন বেড়ে যাওয়া, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে বলে ড্রাগ ফাউন্ডেশন হুশিয়ারি দিয়েছে।

সারাহ রেডিও নিউজিল্যান্ডকে জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা প্রায়ই খাবারের মাঝে অবৈধ মাদক লুকিয়ে রাখেন।

'কেউ স্বেচ্ছায় শিশুদের বিষ খাওয়াতে চাইছিল বলে আমরা মনে করি না', যোগ করেন তিনি।

Comments