আর্জেন্টিনায় দারিদ্র্যের হার ৫৩ শতাংশ, ২ দশকে সর্বোচ্চ

চলতি বছরেই প্রায় ৩৪ লাখ আর্জেন্টাইন দরিদ্র হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
চলতি বছরেই প্রায় ৩৪ লাখ আর্জেন্টাইন দরিদ্র হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় হাভিয়ের মিলেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার নয় মাসের মাথায় দেশটিতে দারিদ্র্যের হার প্রায় ৫৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

আজ সোমবার যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার আর্জেন্টিনার পরিসংখ্যান অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এই সংখ্যা। দেশটিতে গত দুই দশকের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দারিদ্র্যের হার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরেই প্রায় ৩৪ লাখ আর্জেন্টাইনকে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

একটি দরিদ্র আর্জেন্টাইন পরিবার। ছবি: রয়টার্স
একটি দরিদ্র আর্জেন্টাইন পরিবার। ছবি: রয়টার্স

অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকতে থাকা আর্জেন্টিনার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজেট ঘাটতি দূর করতে সরকারের সর্বস্তরে ব্যয় সংকোচনের অঙ্গীকার দিয়ে গত ডিসেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই।

ব্যয় সংকোচনের প্রতীক হিসেবে একটি করাত হাতে (করাত দিয়ে খরচ কেটে ফেলার প্রতীকী প্রকাশ) নিজের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন তিনি।

তার প্রশাসনের অধীনে বিভিন্ন স্তরে পেনশন স্থগিত করা হয়েছে, বিনামূল্যে খাদ্যসেবা কমানো হয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কলেবর কমানো হয়েছে এবং সব ধরনের গণপূর্ত প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া দেশজুড়ে লাখো সরকারী কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

তা সত্ত্বেও, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে ভর্তুকি কমানোয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিকাল সায়েন্সের লাতিন আমেরিকা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কারস্টেন শেনব্রুক বলেন, 'কখনো দারিদ্র্যের হার এভাবে বাড়তে দেখিনি।'

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন এক দরিদ্র ব্যক্তি। ছবি: এএফপি
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন এক দরিদ্র ব্যক্তি। ছবি: এএফপি

মিলেইয়ের অর্থনৈতিক কর্মসূচি দরিদ্রদের কোনো সুরক্ষা দিচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে মিলেইয়ের ব্যয় সংকোচন নীতি খোলা বাজার ও বিনিয়োগকারীদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেখানে গত ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনার মাসিক মূল্যস্ফীতি ছিল ২৬ শতাংশ, সেটি কমে জুনে হয়েছে চার শতাংশ।

তবে দেশটির বার্ষিক মূল্যস্ফীতি এখনো ২৩০ শতাংশ। বিশ্বের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির দেশগুলোর একটি আর্জেন্টিনা।

ভোটারদের মাঝে এখনো মিলেইয়ের ভালো জনপ্রিয়তা থাকলেও তার পক্ষে জনসমর্থন কমতে শুরু করেছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরেই তার জনসমর্থন কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ।

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই। ছবি: রয়টার্স
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই। ছবি: রয়টার্স

সাম্প্রতিক আরেক জরিপে দেখা গেছে, আর্জেন্টাইনদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা এখন আর মূল্যস্ফীতি না। দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখন চাকরি হারানো ও দারিদ্র্যের শঙ্কায় আছে।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেন, পূর্বের বামপন্থী সরকারগুলোর অযোগ্যতায় একটি 'ভয়ানক অর্থনীতি' পেয়েছে মিলেই সরকার। 

'তারা এমন একটি দেশ রেখে গেছে, যেখানকার সব বাসিন্দা গরীব। যেকোনো স্তরের দরিদ্রতাই ভয়ঙ্কর। পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে আমাদের যা যা করা দরকার করছি', বলেন তিনি। 

 

Comments

The Daily Star  | English

A budget without illusions

No soaring GDP promises. No obsession with mega projects. No grand applause in parliament. This year, it’s just the finance adviser and his unemotional speech to be broadcast in the quiet hum of state television.

6h ago