রুশ-মার্কিন বৈঠক

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কমিটি, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশা মস্কোর

সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক। ছবি: এপি

সৌদি আরবের রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউক্রেন শান্তি আলোচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তে সম্মত হয়েছে দুই পক্ষ।

আলোচনায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দিতে না দেওয়ার দাবি উঠেছে। পাশাপাশি যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। 

আজ মঙ্গলবার রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ প্রতিনিধিদের বৈঠক নিয়ে রয়টার্স ও এপির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া মস্কোর জন্য একেবারে অগ্রহণযোগ্য। কিয়েভকে ন্যাটোতে যোগ দিতে দেওয়া হবে না, কেবল এই প্রতিশ্রুতি রাশিয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।

ন্যাটোকে ২০০৮ সালের বুখারেস্ট প্রতিশ্রুতিও পরিত্যাগ করার দাবি জানায় মস্কো।

'কিয়েভকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তই আমাদের জন্য যথেষ্ট না। ন্যাটোকে অবশ্যই ২০০৮ সালের বুখারেস্ট প্রতিশ্রুতি পরিত্যাগ করতে হবে,' বলেন জাখারোভা।

রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে ২০০৮ সালের ন্যাটো সম্মেলনে ইউক্রেন ও জর্জিয়াকে এই সামরিক জোটের সদস্যপদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে এই দুই দেশের সদস্যপদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেয়নি ন্যাটো।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, 'আজ রিয়াদে অনুষ্ঠিত রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে চার ঘণ্টার বৈঠক "সফল" হয়েছে।'

উশাকভের বরাত দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, বৈঠকে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকের শর্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এই বৈঠকের জন্য এখনো কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

বৈঠকের পর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহারের আশা দেখছে মস্কো।

এ বিষয় নিয়েও আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মস্কোর অর্থনৈতিক আলোচনার দায়িত্বে থাকা কিরিল দিমিত্রিয়েভ।

তিনি আজ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমরা (অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের লক্ষ্যে) বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে, যা আমাদের (মার্কিন) সহকর্মীরা ভেবে দেখছে। আমার মনে হয়, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে কিছু অগ্রগতি দেখা যাবে।'

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, এই বৈঠকে উভয় পক্ষ তাদের দূতাবাসগুলোর জনবল পুনর্বহাল এবং ইউক্রেনে শান্তি আলোচনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের দল গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

বার্তাসংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠকের পর রুবিও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে চলা বৈরিতার ফলে উভয় দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোর সক্ষমতা কমে গেছে।

'কার্যকর ও সচল কূটনৈতিক মিশন দরকার আমাদের, যা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবে। এতে করে ভবিষ্যতে এরকম সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে,' যোগ করেন তিনি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, মঙ্গলবারের বৈঠকে চারটি নীতিতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।

সেগুলো হচ্ছে–উভয় দেশের রাজধানীতে দূতাবাস পুনপ্রতিষ্ঠা করবে অপর দেশ, ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা শুরু এবং আজকের বৈঠকে অংশ নেওয়া সব পক্ষ আলোচনা প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English
Pathways to a new political order

Pathways to a new political order

The prospects for change are not without hope in Bangladesh.

9h ago