ব্যক্তি জীবনে পারফিউমের প্রভাব

ব্যক্তি জীবনে পারফিউমের প্রভাব
ছবি: সংগৃহীত

জার্মানের বিখ্যাত লেখক প্যাট্রিক সাসকাইন্ড ১৯৮৫ সালে রচনা করেন পারফিউম নামের একটি বই। যা পৃথিবীর ৪৫টি ভাষায় অনুদিত হয়। সেই বইকে পর্দায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন জার্মান পরিচালক টম টাইকার।

লেখক শঙ্কিত ছিলেন তার বইয়ের চরিত্রগুলো উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই ১৫ বছর বিভিন্ন জনকে ফিরিয়ে দেন। অবশেষে ২০০০ সালে তিনি গল্পটি তুলে দেন টম টাইকারের হাতে।

পারফিউমের কাঙ্ক্ষিত ঘ্রাণের জন্য নোড কি মারাত্মক তারতম্য আনে তা বলাই বাহুল্য। কেন্দ্রীয় চরিত্র জ্য ব্যাপ্টিস্ট গ্রানুইলির মতোন প্রখর ঘ্রাণশক্তি হয়তো উপন্যাসেই সম্ভব। কিন্তু ঘ্রাণের পরিধি এবং গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মানুষের কাছেও কম নয়।

ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশেও ঘ্রাণ বড় ভূমিকা রাখে। কোন পারফিউম বা সেন্ট ব্যবহার করছেন তা অন্যদের কাছে প্রথমেই আপনার অলিখিত পরিচয় করিয়ে দেয়। অনেকসময়ই ভালো এ্যারোমার জন্য ধরেই নেওয়া হবে, আপনি মানুষ হিসেবে স্মার্ট। পরিচিতি না থাকলেও আপনার ওপর ইতিবাচক মনোভাব রাখে আশপাশের মানুষ। অর্থাৎ এর মনস্তাত্ত্বিক ভূমিকা বিস্তর।

সুঘ্রাণ মেজাজ, একাগ্রতা, স্মৃতি এবং আবেগকে প্রভাবিত করে। ধারণা করা হয়, মনোরম গন্ধের সংস্পর্শে আসার পর মেজাজের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নতি হয়।

নাইকির এক গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৮৪ ভাগ ক্ষেত্রে জুতোর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় ঘ্রাণের কারণে। এমনকি সুবাসিত পরিবেশ থাকলে গ্রাহক শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ মূল্য বেশি পরিশোধেও আপত্তি করে না।

জাপানি একটি কোম্পানি তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে, ল্যাভেন্ডার ও জেসমিনের সুবাস ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের স্ট্রেসকে প্রশমিত করে। আর লেবুর সুবাস তাদের কর্মীদের ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।

কর্মচারীদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং সন্তুষ্টি অর্জন করতেও ভূমিকা রাখে বিভিন্ন ঘ্রাণ। কর্ম পরিবেশকে উন্নত করতে আর আবেগ ও প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এমআরআই-এর সময় ক্লাস্ট্রোফোবিয়া (সীমাবদ্ধ স্থানের ভয়) কমাতে পারে ভ্যানিলার ঘ্রাণ। অর্থাৎ সুগন্ধির ব্যবহার বেশ চাপের পরিস্থিতিতেও মানুষের উদ্বেগ কমায়।

মেমোরিয়াল স্লোন-কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারে এমআরআই চলাকালীন ১৬০ জন রোগীর মধ্যে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে তারা এতই মানসিক চাপ অনুভব করেন যে, দ্রুত এমআরআই শেষ করতে হয়। আবার তাদের এক তৃতীয়াংশ ক্যান্সার আছে মনে করে চিন্তিত হয়ে যান। ফলে একসময়, ওই ক্যান্সার সেন্টারের শ্যারন ম্যানে এবং উইলিয়াম এইচ রেড চৌম্বকীয় অনুরণন ইমেজিংয়ের সময় রোগীদের দুর্দশা কমাতে সুগন্ধিসামগ্রী ব্যবহার করেছিলেন। ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী, এমআরআই স্ক্যান করা ওই ৫৭ জন রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় হেলিওট্রপিনের (ভ্যানিলা এবং অ্যালমন্ডের মতো গন্ধ) সংস্পর্শে আসা রোগীদের উদ্বেগ অন্য রোগীদের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ৬৩ শতাংশ কম ছিল।

এছাড়াও সার্জারির পূর্বে এবং দাঁতের রোগীদের শান্ত করতেও ভূমিকা রাখে সুবাস। দেখা যায়, রোগীরা তাদের অ্যাপয়েনমেন্ট বাতিল করাও কমিয়ে ফেলে। ঘ্রাণের উচ্চতর অনুভূতি রোগীদের জন্য অপ্রীতিকর গন্ধকে প্রশমিত করে এবং আরাম দেয়। আর এই ধরনের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে সাইট্রাস।

ঘ্রাণ শুধুমাত্র মানসিক চাপ কমায় না, ঘুমকেও প্রভাবিত করে। যেমন, পেপারমিন্ট মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করতে পারে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। হেলিওট্রপিন (ভ্যানিলা ও অ্যালমন্ডের মতো গন্ধ) মস্তিষ্ককে শান্ত করতে পারে। বাড়াতে পারে ঘুমও।

লেবুর সুগন্ধ সৃজনশীল কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ল্যাভেন্ডারের সুগন্ধ বিশ্রামে সাহায্য করে এবং আশপাশের মানুষদের প্রতি আরও বেশি বিশ্বাসী করে তোলে।

ফুলের ঘ্রাণ মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং এমনকি নতুন কিছু শিখতে মস্তিষ্ককে সাহায্য করতে পারে। অ্যারোমা থেরাপি নিতে কিংবা দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে, যে কারণেই হোক, বিভিন্ন ধরনের সুঘ্রাণ অন্যরকম প্রশান্তি দেয়।

তাই স্পা সেন্টার কিংবা বাসায় ব্যবহার বেড়েছে ফ্লোরাল মোমবাতির, এ্যারোমেটিক উপকরণের। সাধ আর সাধ্য মিলিয়ে সুবাসিত কোনো উপকরণ বেছে নিতে না পারলে, অন্তত বারান্দায় রাখতে পারেন রঙিন আর সুবাসিত দুটি গাছ।

সূত্র: কম্পিটিটিভ চয়েস- কেমিক্যাল, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সাপ্লাই ইন্ডাস্ট্রি, যুক্তরাষ্ট্র

Comments

The Daily Star  | English

Admin in favour BNP in many areas, polls not possible in this situation: Nahid

For a level playing field, a neutral administration, bureaucracy, and police must be ensured

11m ago