ঈদে সতেজ ত্বক পেতে প্রস্তুতি নিন এখন থেকেই

চাইলে ভালো কোনো স্যালনে গিয়ে ত্বকের ধরন বুঝে করিয়ে নিতে পারেন ফেসিয়াল। তবে ঈদ যেহেতু চলেই এসেছে প্রায়, এখন নতুন ধরনের ফেসিয়াল না করাই ভালো হবে। আগে যে ফেসিয়াল আপনার ত্বকে করিয়েছেন, সেটিই করান।
ছবি: সংগৃহীত

ঈদ আসতে বেশিদিন আর বাকি নেই। রোজায় ব্যস্ততার কারণে অনেকেই নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিতে পারেন না। তার ওপর রোজায় খাওয়াদাওয়া এবং ঘুমের সময়ে পরিবর্তন ত্বকের উপরও যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। অপর্যাপ্ত পানি পান, ইফতারে ভাজাপোড়া খাওয়ার কারণে ত্বকের লাবণ্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া কাঠফাটা রোদের তীব্রতা তো আছেই।

তাই ঈদের দিন সতেজ ও সজীব ত্বক পেতে ত্বকের যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে এখন থেকেই।

চাইলে ভালো কোনো স্যালনে গিয়ে ত্বকের ধরন বুঝে করিয়ে নিতে পারেন ফেসিয়াল। তবে ঈদ যেহেতু চলেই এসেছে প্রায়, এখন নতুন ধরনের ফেসিয়াল না করাই ভালো হবে। আগে যে ফেসিয়াল আপনার ত্বকে করিয়েছেন, সেটিই করান।

আর ঘরোয়া যত্ন তো থাকছেই। চলুন জেনে নিই ঈদের আগে বাড়িতে ত্বকের যত্ন নেবেন কীভাবে-

শুষ্ক ত্বক

শুষ্ক ত্বকে এমনিতেই আর্দ্রতা কম থাকে। পানির অভাবে ত্বক যাতে আরও শুষ্ক না হয়ে যায় সেজন্য ইফতারের পর প্রচুর পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি তরল খাবার, মৌসুমি ফল, ফলের জুস ও শাকসবজি খেতে হবে।

শুষ্ক ত্বককে সুন্দর রাখতে চাই ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার। শুষ্ক ত্বকে মধু ম্যাসাজ করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। আপনার ত্বকের যে অংশটি বেশি শুষ্ক, সেই জায়গায় মধু ম্যাসাজ করে ২-৩ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। অ্যালোভেরা জেল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের শুষ্ক ভাব কমবে।

শুষ্ক ত্বকের যত্নে আরেকটি কার্যকর উপাদান হতে পারে দুধ। দুধের সরের সঙ্গে ২-৩ ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন স্ক্রাব করলে উপকার পাবেন। মুলতানি মাটির সঙ্গে দুধ বা গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ১০-২০ মিনিট মুখে, ঘাড়ে, গলায় লাগিয়ে রাখুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় হবে।

তৈলাক্ত ত্বক

যাদের তৈলাক্ত ত্বক, গরমের দিনে তাদের ভোগান্তি বেশি হয়। এ ছাড়া অনেকে আবার রান্নাবান্না করেন। চুলার আঁচে ত্বক আরও তৈলাক্ত হয়ে যেতে পারে। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। কিছু নিয়ম মেনে যত্ন নিলে ঈদের দিনে তৈলাক্ত ত্বক থাকবে সুন্দর ও মসৃণ, ব্রণ হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে শসার রস খুবই কার্যকর। এখন থেকে প্রতিদিন শসার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ঈদের আগে মুখের তৈলাক্ত ভাব কিছুটা কমে আসবে।

একটি ডিমের সাদা অংশ, শসার রস ও পুদিনা পাতার পেস্ট মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। সপ্তাহে ২ দিন এই প্যাক ব্যবহারে তৈলাক্ত ভাব কমে ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হবে। এ ছাড়া তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে এক চা চামচ বেসন, সামান্য টক দই ও সামান্য হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক সপ্তাহে ১ বা ২ দিন ব্যবহার করতে পারেন।

লেবুর রস ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বকের যত্নে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন লেবুর রস। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কমলার খোসা হতে পারে কার্যকর উপাদান। কমলার খোসা বেটে এর সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে মুখ, ঘাড় ও গলায় মেখে রাখতে পারেন।

স্বাভাবিক ত্বক

স্বাভাবিক ত্বক সুন্দর রাখতে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না। কিছু বেসিক নিয়ম মেনে চললেই স্বাভাবিক ত্বক সুন্দর ও মসৃণ থাকে। নিয়মিত মুখ ধোয়া, ফেসওয়াশ দিয়ে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করা, মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার দেওয়া, বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন লাগানো, মেকআপ তোলার সময়  ডাবল ক্লিনজিং করা— এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে ত্বকে কোনো সমস্যা হবে না। তবে মাঝেমাঝে যত্ন করতে চাইলে ঘরোয়া যে কোনো প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক আরও বেশি লাবণ্যময় হয়ে উঠবে। পাকা পেঁপে মুখে ও গলায় মেখে কিছুক্ষণ রেখে এরপর ধুয়ে ফেলুন। মসুর ডাল বেটে এর সঙ্গে মধু, কাঁচা দুধ ও কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে ও গলায় ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক ভালো থাকবে।

যেকোনো ত্বকের যত্নে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি-

● ত্বকের যত্নে ক্লিনজিং, টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। দিনে ২ বার সকালে ও রাতে ত্বক পরিষ্কার করুন। মুখে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

● বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ত্বকের ধরন বুঝে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই গরমে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে কখনোই ঘর থেকে বের হবেন না।

● ইফতারে এখন থেকেই ভাজাপোড়া বা মসলাদার খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন। ঈদের দিন ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে চাইলে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলমূল খান।

●  প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, চোখের নিচে কালি পড়ে।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, মায়ো ক্লিনিক

Comments