ঐতিহ্য আর ট্রেন্ডের মিশেল: সাজে থাকুক ঝুমকা

‘আজকাল মাঝারি থেকে বড় সাইজের ঝুমকার চাহিদাই বেশি দেখা যায়। আবার কয়েক লেয়ারের ঝুমকাও খুব চলছে।’
গয়না ও ছবি: দ্য পার্পল বক্স

কানের দুল ছাড়া কোনো সাজই যেন পরিপূর্ণ হয় না। প্রাচ্য থেকে প্রাশ্চাত্য সব জায়গার ফ্যাশনেই দুলের ব্যবহার রয়েছে। নানা রকম কানের দুলের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের নারীদের মধ্যে একটি আবার বেশিই জনপ্রিয়, সেটি হচ্ছে ঝুমকা।

ঝুমকা এক ধরনের ঘণ্টাকৃতির ও ঝোলানো বিশেষ কানের দুল। অনেককাল আগে থেকেই এটি নারীদের মনে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। তাই বিভিন্ন গানেও ঝুমকার উল্লেখ পাওয়া যায়। 'ঝুমকা গিরা রে, বরেলি কে বাজার মে' বলিউডের এই বিখ্যাত গানটি হয়তো অনেকেরই চেনা। সম্প্রতি বলিউডের 'রকি অর রানি কি প্রেম কাহানি' সিনেমার 'হোয়াট ঝুমকা' গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ। সেখানে ঝুমকায় আলিয়া ভাটের লুক নজর কেড়েছে সবার।

ঝুমকার আদ্যোপান্ত

ঝুমকায় অনন্য আলিয়া ভাট। ছবি: সংগৃহীত

মূলত ভারতবর্ষ থেকে ঝুমকার জনপ্রিয়তা শুরু হলেও বর্তমানে অনেক জায়গাতেই নারীদের মধ্যে ঝুমকা পরার প্রচলন রয়েছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশে আছে ঝুমকার বিশেষ চাহিদা। প্রাচীন গয়নার মধ্যে ঝুমকা অন্যতম, যার প্রচলন শুরু হয়েছিল রাজ পরিবারগুলো থেকে। তবে মুঘল আমলে এর বিবর্তন ঘটেছে এবং এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন ধরনের আধুনিক ডিজাইন।

ঝুমকা এখন যেমন

ঝুমকা সবসময়ই অভিজাত, ফ্যাশনেবল ও ট্রেন্ডি।

বর্তমানে এর চাহিদা ও দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে অনলাইন জুয়েলারি পেজ দ্য পার্পল বক্সের স্বত্বাধিকারী মালিহা জামান ইনা বলেন, 'ঝুমকার কদর কখনোই কমে যায়নি। আমি সেই ছোটকালেও যেমন মা-ফুপুদের ঝুমকা পরতে দেখেছি, আজকে ছোট বোনদেরও পরতে দেখি। জেনারেশন ধরে চলে আসছে ঝুমকার চল। আজকাল মাঝারি থেকে বড় সাইজের ঝুমকার চাহিদাই বেশি দেখা যায়। আবার কয়েক লেয়ারের ঝুমকাও আজকাল খুব চলছে।'

তিনি বলেন, 'ঝুমকায় নানা রঙের পুতি-মুক্তার ঝুল বা লহরটাই আজকাল বেশি দেখা যায়। আমাদের পেজে অনেক বেশি অনুরোধ আসে কালার কাস্টমাইজেশন নিয়ে। হাতে বানানো ঝুমকার দাম শুরু হয় ৫০০ টাকা থেকে। তবে ইমিটেশনেরগুলো ১০০ থেকে শুরু।'

গয়না ও ছবি: দ্য পার্পল বক্স

আজকাল শুধু সোনা বা রূপা নয়, দেশীয় নানা উপাদান ব্যবহার করেও ঝুমকা তৈরি করা হচ্ছে। ঝুমকার ঝোলানো ঘণ্টা আকৃতির পাশাপাশি যেখন যোগ হয়েছে চারকোণা, ত্রিভুজসহ নানা আকৃতি। ডিজাইনেও যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।

এবার ঝুমকার রং নিয়ে কথা বলা যাক। সোনা, রূপার চিরাচরিত আদি নকশার ঝুমকা ছাড়াও এখন ইমিটেশনের ওপর ঝুমকার নানা ডিজাইন দেখা যায়। বিভিন্ন রঙের পুঁতির এবং মুক্তার ব্যবহার এবং কয়েক লেয়ারের ঝুমকা আজকাল খুব চলছে। এখন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বা কনট্রাস্ট করে বিভিন্ন রঙের ঝুমকা বেছে নিতে দেখা যায়।

ঝুমকায় সাজ

পোশাক ও মুখের গড়নের সঙ্গে মিলিয়ে যেকোনো উপলক্ষেই পরতে পারেন ঝুমকা। বিয়ের জমকালো সাজ থেকে শুরু করে প্রতিদিনের সাজে ঝুমকার ব্যবহার দেখা যায়। আগে শুধু শাড়ি, কামিজ বা দেশীয় কাপড়ের সঙ্গে ঝুমকা পরা হলেও এখন সব ধরনের সাজের সঙ্গে মানানসই ঝুমকা পাওয়া যায়।

ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের ঝুমকা পাওয়া যায়। তবে প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য ছোট সাইজের ঝুমকাগুলোর বেশি চাহিদা। পোশাক ও মুখের গড়নের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে হবে কোন ধরনের ঝুমকা আপনাকে বেশি মানায়। ভারী মেকআপ থেকে শুরু করে হালকা মেকআপ সব ধরনের সাজের সঙ্গেই ঝুমকা পরা যায়।

অনেক ঝুমকায় একটি লম্বা চেইনের মত অংশ থাকে, যা চুলের সঙ্গে লাগানো যায়। একটু জমকালো অনুষ্ঠানের জন্য এমন ঝুমকা বেছে নিতে পারেন।

কোথায় পাবেন ও দরদাম

যেকোনো গয়নার দোকানেই মিলবে ঝুমকা। ধরন ও সাইজের ওপর নির্ভর করে এর মূল্য। কম দামে বিভিন্ন রকম ঝুমকা কিনতে পাওয়া যায় ঢাকা নিউমার্কেট, গাউসিয়া, মৌচাকসহ বিভিন্ন মার্কেটে। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের ঝুমকা পাবেন যাবে এখানে।

এ ছাড়া সব ধরনের শপিং মলেও পাবেন। আড়ংয়ে সোনা, রূপা, তামা ও ইমিটেশনের ঝুমকা পাওয়া যায়। ম্যাটেরিয়াল ভেদে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের ঝুমকা আছে এখানে। এ ছাড়া, বিভিন্ন অনলাইন পেজেও মিলবে ঝুমকা। কিছু কিছু অনলাইন পেজে নিজের মতো কাস্টমাইজেশনের সুযোগ থাকে।

 

Comments