ছোট মাছ কি আসলেই চোখের জন্য উপকারী

ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। ছবি: স্টার

মাছে ভাতে বাঙালির প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে মাছ। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান প্রজন্মে অনেকেই মাছ খেতে চান না বা পছন্দ করেন না। কিন্তু জানেন কি নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদ-নদী পুকুর, খাল, বিল, হাওরে যেসব মাছ পাওয়া যায় তা কতটা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ? বিশেষ করে ছোট মাছের উপকারিতা শরীরের জন্য কতখানি?

দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ছোট মাছ ও এর অন্যান্য পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলেছেন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও ডায়াটেটিকস বিভাগের প্রধান নিশাত শারমিন নিশি।

ছোট মাছ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়

ছোট মাছ চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'এ' পাওয়া যায়। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

মলা, ঢেলা, চান্দা, পুঁটি, টেংরা, কাচকি, বাতাসি মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন ডি রয়েছে। যা চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে বলে জানান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি।

বিশেষ করে যদি চোখের কথা বলা হয় তাহলে ভিটামিন-'এ' এর পরিমাণ বেশি থাকায় এ ধরনের ছোট মাছগুলো চোখের জন্য ভীষণ উপকারী। ছোট মাছে মজুদ থাকা প্রোটিন চোখের নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

মলা ও চান্দা মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী মলা মাছে ২৫০০ মাইক্রোগ্রাম ও চান্দা মাছে ১৫০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ পাওয়া যায়।

পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, ছোট মাছ সম্পূর্ণ চিবিয়ে খাওয়া সম্ভব, কোনো কিছুই বাদ যায় না। ফলে পুষ্টির সবটুকু উপাদান আমরা সেখান থেকে পাই। বড় মাছের মতো পুষ্টির অপচয় হয় না ছোট মাছে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুরা বিশেষত গ্রামগঞ্জের শিশুরা এখনো চোখের নানা সমস্যায় ভুগতে থাকে। বিশেষ করে রাতকানা রোগ বা রাতে চোখে দেখতে না পাওয়া। এ ধরনের সমস্যাগুলো আমাদের দেশে সম্পূর্ণ কমে যায়নি।

সেক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন না হলেও যদি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ছোট মাছ রাখা যায় তাহলে এ ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।

শুধু চোখ নয় শরীরের জন্য ছোট মাছের অন্যান্য উপকারিতাও রয়েছে

কেবল চোখের জন্য নয় শারীরিক সুস্থতায় ছোট মাছের রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। ছবি: স্টার

একেক ধরনের ছোট মাছের পুষ্টিগুণও একেক রকমের।

মাছ হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে, কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রাখে। মাছ থেকে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়, কোষ মেরামত, পেশি তৈরি করতে ও ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ডোকোসাহেক্সায়েনোইক অ্যাসিড (ডিএইচএ) এবং ইকোসাপেন্টাইনয়িক অ্যাসিড (ইপিএ) থাকে ছোট মাছে যা বড়দের হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধরে রাখা ও শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক। ছোট মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকায় শরীরের জন্য বেশ উপকারী। শরীরের হাড় মজবুত রাখে ও চোখের সমস্যা দূর করে।

আমাদের দেশে নারীদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকে অনেকের। রক্তস্বল্পতা দূর করতে টেংরা মাছ বেশ উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী টেংরা মাছে প্রায় ৩২ মিলিগ্রাম আয়রণ, ১৮.৮ গ্রাম প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস পাওয়া যায়।

রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করতে টেংরা মাছ উপকারী। এছারাও কাশির সমস্যা থাকে অনেকের, কফ কমানোর জন্য টেংরা মাছ সাহায্য করে।

মাগুর মাছ শরীরে আয়রনের অভাব দূর করে। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী মাগুর মাছে প্রায় ০.৭ মিলিগ্রাম আয়রন, ৩০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস ও ১৭২ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

প্রোটিন সমৃদ্ধ শিং মাছ সহজে হজম হয়, ২১ মিলিগ্রামের মতো প্রোটিন, আয়রন ২.৩ মিলিগ্রাম ও ফসফরাস ৬৭০ মিলিগ্রাম থাকে খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম শিং মাছে। স্তনদানকারী মায়ের জন্য উপকারী শিং মাছ, এটি শরীরে শক্তি যোগায়।

শোল মাছ রক্তস্বল্পতার জন্য উপকারী, অরুচি দূর করে, কোষ্টকাঠিন্য যাদের আছে তাদের জন্য শোল মাছ ভালো।

সামুদ্রিক ছোট মাছের পুষ্টিগুণ

সামুদ্রিক মাছে আয়োডিন ও ওমেগা থ্রি এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। কোরাল, রূপচাদা, লইট্যা, লাক্ষা, চিংরি, সোনালি বাটা সামুদ্রিক মাছ। সমুদ্র থেকে যেসব ছোট মাছ পাওয়া যায় সেগুলো ভালো হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে না খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। যাদের প্রেশার হাই থাকে, গিটেগিটে ব্যাথা বা যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের না খাওয়াই ভালো।

ছোট মাছের পুষ্টিগুণ ধরে রাখতে করণীয়

ছোট মাছ রান্নায় অনেকে প্রচুর তেল ব্যবহার করেন সেটি উচিত নয় জানান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি। কম তেলে ভাঁপ দিয়ে অথবা অল্প আঁচে ছোট মাছ রান্না করলে তার পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে। মাছের কোন কিছু না ফেলে দিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার পরামর্শ পুষ্টিবিদের। একই সাথে মাছ কাটার সময় শুধু ময়লা অংশটুকু ফেলে দিয়ে ভালো করে ধুয়ে রান্না করতে হবে। ওজন যাদের বেশি তাদের, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি আছে তাদের বড় মাছ না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক বেলা ছোট মাছ রাখলে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Tribute to July uprising: Drone show lights up Dhaka's sky

In 12 vivid motifs, the July uprising came alive, tracing the heroism of Abu Sayed and the stirring role of women in the movement

8h ago