সারাদিন অফিস করেও যেভাবে ফুড কার্ট চালান এই দম্পতি

ফুড কার্ট
ছবি: ফেরদৌস উৎস

শাহজাদপুর ঝিল পাড়ের ফুড কার্টগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমার চোখে পড়ল অন্যরকম এক দোকান, যার ব্যানারে লেখা খাবারের তালিকায় ছিল চালের রুটি, ভুঁড়ি ভুনা, হাঁস ভুনা, গরুর মাংস এবং খিচুড়ি। রাস্তায় সচরাচর এসব খাবারের দেখা মেলে না, তাও আবার ঘরে বানানো!

ক্ষুধার্ত থাকায় এবং কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেলাম সেই ফুড কার্টটির দিকে। সাদামাটা শার্ট-প্যান্ট পরা এক ভদ্রলোক এবং সালোয়ার-কামিজ পরা এক ভদ্রমহিলার দেখা পেলাম। এই দম্পতি মিলেই গড়ে তুলেছেন এই ফুড কার্টটি।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম অফিস শেষে তারা এই কার্ট খুলে নিজেদের ঘরে বানানো মজাদার সব খাবার বিক্রি করেন। শুনতে বেশ অন্যরকম লাগছে, তাই না?

ফুড কার্ট
ছবি: ফেরদৌস উৎস

ইমু আখতার ও ফাসিউর রহমান দম্পতির বিয়ে হয় ছয় বছর আগে। প্রয়োজনের জন্য নয়, নিজেদের শখ থেকেই এই ব্যবসায় নামেন তারা।

ইমু আখতার বলেন, 'সাধারণত বাঙালিদের মানসিকতা এমন থাকে যে মেয়েরাই রান্নাসহ ঘরের যাবতীয় কাজ করবে। কিন্তু যখন আমার বিয়ে হয় আমি তখন রান্নাটাও ঠিকমতো করতে পারতাম না। আমার স্বামী আমার চেয়ে ভালো রান্না করতেন এবং রান্না করতে ভীষণ পছন্দও করতেন।'

ফাসিউর রহমান একজন ডেপুটি সেলস ম্যানেজার ও ইমু আখতার অফিস প্রশাসনে কর্মরত আছেন। খাবারের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তারা চাকরির পাশাপাশি এই ব্যবসা শুরু করার অনুপ্রেরণা পান। ইমু আখতার একদিন তার স্বামীকে একটি রেস্টুরেন্ট বা ফুড স্টল খোলার পরামর্শ দেন।  

নিজেদের ব্যস্ত সময় থেকে কিছুটা সময় বের করে তারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সাহস করেন। তাদের এই স্বপ্ন বাস্তব হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যায় যখন তারা ফেসবুকে একটি ফুড কার্ট বিক্রির পোস্ট দেখেন।

ফুড কার্ট
ছবি: ফেরদৌস উৎস

ইমু আখতার বলেন, 'হঠাৎ করেই কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া এই ব্যবসায় নামি আমরা। ৪০-৫০ হাজার টাকার মতো বিনিয়োগ, সঙ্গে ৪ হাজার টাকার মতো বাজার করে এই ব্যবসা শুরু করি।'

৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অফিস শেষে এই ফুড কার্টে সময় দেওয়া সহজ নয়।

'৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অফিস করে এই ফুড কার্টে সময় দেওয়াটা বেশ কঠিন। শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশ ক্লান্তিকর একটি বিষয় এটি। আমাদের অফিস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কার্টে চলে যাই', বলেন ইমু আখতার।

তবে এই কষ্টের ফল বেশ মধুর। প্রতিদিন নিজেদের ঘরে তৈরি করা খাবার বিক্রি করে তিন ঘণ্টায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করেন এই দম্পতি।

এই দম্পতি নিজেদের স্বপ্ন পূরণে শুরু থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ইমু আখতার বলেন, 'আমরা অনেকদিন ধরেই নিজেরা কিছু শুরু করতে চাচ্ছিলাম, তাই এক্ষেত্রে সবকিছু সামলানোর এই চাপ কোনো বাধা ছিল না। আমরা শুরু করে দেখতে চেয়েছিলাম কত দূর যেতে পারি।'

তাদের এই উদ্যোগের ফলে শহরের ব্যস্ত রাস্তায় ঘরের খাবারের স্বাদ পেতে পারে মানুষ। এই ফুড কার্টের সব খাবার বাসায় তৈরি করা হয়। খাবার তৈরিতে সহায়তা করার জন্য রয়েছেন একজন সাহায্যকারী।

আজকাল নানা ব্যস্ততায় আমরা নিজেদের শখ ভুলে যাই। এক্ষেত্রে ইমু আখতার ও ফাসিউর রহমান দম্পতি ব্যতিক্রম। তাদের এই ফুড কার্টের যাত্রা আমাদের শেখায় যে, কোনো কাজ শুরু করতে হলে অনেক বেশি পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই। নিজেদের প্রতি ভরসা রেখে কাজে নেমে পড়লেই সফল হওয়া সম্ভব।

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

18h ago