শিমে পাবেন যেসব পুষ্টিগুণ

শিমের পুষ্টিগুণ
ছবি: সংগৃহীত

শিম একটি জনপ্রিয় সবজি যা এর পুষ্টিগুণ ও স্বাদের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। শীতকালীন সবজি হিসেবে এটি বাংলাদেশে বিশেষ জনপ্রিয়। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শিম রাখলে মিলবে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।

চলুন জেনে নেই শিমের পুষ্টিগুণ। শিমের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মাহফুজা নাসরিন শম্পা।

শিম একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি যা সবার খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত। শিমে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং আঁশ রয়েছে, যা মানবদেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত শিম খেলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ছাড়াও শিম মৌসুমি সবজি হওয়ায় শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

শিমের পুষ্টি উপাদান

শিমে প্রায় ৯০% পানি রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম শিম থেকে পাওয়া যায়-

ক্যালরি: প্রায় ৩৫-৪০ ক্যালরি

প্রোটিন: ২-৩ গ্রাম

কার্বোহাইড্রেট: ৭-৮ গ্রাম

ফাইবার: ৩-৪ গ্রাম

চর্বি: ০.১-০.২ গ্রাম

ভিটামিন সি: ২০-২৫ মিলিগ্রাম

ভিটামিন এ: ১০-১৫ মাইক্রোগ্রাম

 ক্যালসিয়াম: ৩৭-৪০ মিলিগ্রাম

আয়রন: ১-১.৫ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম: ২০০-২৫০ মিলিগ্রাম

শিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা

শিমের পুষ্টিগুণের ভিত্তিতে এটি শরীরের জন্য বিভিন্ন উপকার করে।

কোষ গঠন

শিম প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। এটি দেহের কোষ পুনর্গঠন এবং ক্ষয়পূরণ  সহায়ক। প্রোটিন পেশির বৃদ্ধিতেও সহায়ক এবং এটি দৈনিক প্রোটিন চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।

হৃদরোগ প্রতিরোধ

শিমে থাকা আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হৃদযন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ

আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়ক এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে। এবং শিমে বিদ্যমান ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় সহায়ক।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

শিমে জটিল শর্করা রয়েছে যা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। শিমের কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য।

পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি

শিমে প্রচুর আঁশ রয়েছে যা পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত করে। শিমে থাকা আঁশ হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এবং অন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

শিমে কম ক্যালরি থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি একটি কম ক্যালরিযুক্ত খাবার হওয়ায় যারা ডায়েট মেনে চলছেন তাদের জন্য আদর্শ। শিমে ক্যালরি কম এবং আঁশ বেশি থাকায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

শিমে থাকা ভিটামিন সি, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি সর্দি-কাশি, ফ্লু ইত্যাদি সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

হাড় ও দাঁতের মজবুত গঠন

ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস হাড় ও দাঁতের মজবুত গঠনে সাহায্য করে। এটি অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর।

ত্বক ও চুলের যত্ন

শিমে উপস্থিত ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং জিঙ্ক ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। এটি ত্বককে উজ্জ্বল এবং চুল মজবুত রাখতে সহায়ক।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস

শিমে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিকেল দূর করতে সাহায্য করে। এটি ক্যানসার, হৃদরোগ এবং ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

শরীর হাইড্রেটেড রাখে

শিমের প্রায় ৮৯-৯১% হলো পানি, যা শরীরের পানির অভাব পূরণে সহায়ক। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।

এ ছাড়া ও শিমে থাকা ভিটামিন এ চোখের জন্য ও উপকারী। শিমে আছে ফোলেট (ভিটামিন বি৯) যা অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নবজাতকের সঠিক স্নায়ুতন্ত্র গঠনে সহায়ক।

সতর্কতা

শিম সাধারণত একটি পুষ্টিকর সবজি হলেও কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক ও হজমের সমস্যা

শিমে ফাইবার ও কিছু প্রোটিন থাকে যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

অক্সালেটের উপস্থিতি

শিমে অক্সালেট নামক যৌগ থাকে, যা কিডনির পাথরের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যাঁদের কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি রয়েছে।

ফেভিজম

কিছু মানুষের মধ্যে শিম খেলে ফেভিজম নামক একটি বিরল শারীরিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এটি মূলত একটি জেনেটিক সমস্যা, যেখানে শিম খাওয়ার পর রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

অ্যালার্জি

শিমে উপস্থিত প্রোটিন কিছু মানুষের মধ্যে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে চুলকানি, ত্বকের লালচে দাগ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

কাঁচা শিমের ক্ষতিকর প্রভাব

কাঁচা শিমে লেকটিন নামক একটি ক্ষতিকর প্রোটিন থাকে, যা পাকস্থলীতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই শিম ভালোভাবে রান্না না করে খাওয়া উচিত নয়। পরিমাণমতো ও সঠিকভাবে রান্না করে শিম খেলে সাধারণত এ ধরনের ঝুঁকি কমে যায়।

 

Comments

The Daily Star  | English
NBR speeds up auction process of abandoned goods

NBR moves to speed up auction of abandoned goods

About 2 lakh tonnes of imported goods left abandoned at Chattogram port alone for years

2h ago