কোয়েলের মাংস খাবেন যে কারণে

কোয়েলের মাংসের উপকারিতা
ছবি: ইজি রেসিপি বাই ইলোরা

শরীরের প্রধান খাদ্য উপাদানের মধ্যে আমিষ বা প্রোটিন অন্যতম। আমিষের দৈনন্দিন চাহিদা পুরনের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন অর্থাৎ প্রাণিজ আমিষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই প্রাণিজ আমিষের ভালো একটি উৎস কোয়েলের মাংস। কোয়েল পাখির মাংস পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। এটি সুস্বাদু, সহজপাচ্য এবং বিভিন্ন শারীরিক উপকারিতার জন্য জনপ্রিয়।

চলুন জেনে নেই কোয়েলের মাংসের স্বাস্থ্য উপকারিতা। এ বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন লাইফ ট্রাস্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ মাহিনুর ফেরদৌস।

কোয়েলের মাংস পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে বিভিন্নভাবে উপকার করে। এটি হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা থেকে শুরু করে ত্বক উজ্জ্বল করা পর্যন্ত নানা কাজে সাহায্য করে। তবে যেকোনো খাবারের মতোই পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিক উপায়ে গ্রহণ করাই ভালো।

কোয়েলের মাংসের পুষ্টিগুণ

কোয়েলের মাংসে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে, যা শরীরের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়ক।

প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের মাংসে পাওয়া যায়

প্রোটিন: ২৫-৩০ গ্রাম

ক্যালোরি: ১৩৫-১৫০ ক্যালোরি

ফ্যাট: ৫-৭ গ্রাম (যার বেশিরভাগই স্বাস্থ্যকর ফ্যাট)

কোলেস্টেরল: অপেক্ষাকৃত কম

এ ছাড়াও রয়েছে  ভিটামিন বি৩, বি৬, বি১২ ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড।

কোয়েলের মাংসের উপকারিতা

উচ্চ প্রোটিনের উৎস

কোয়েলের মাংসে প্রোটিনের মাত্রা অনেক বেশি। প্রোটিন শরীরের কোষ গঠন, পুনর্গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্রীড়াবিদ এবং বডি বিল্ডারদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী।

হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো

কোয়েলের মাংসে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং কম কোলেস্টেরল হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

ভিটামিন বি৬ এবং বি১২ কোয়েলের মাংসে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। এটি শরীরকে বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে।

রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে

কোয়েলের মাংসে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শক্তি বাড়ায়।

হাড় এবং দাঁতের সুরক্ষা

ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। বয়স্কদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।

স্নায়ুতন্ত্রের উন্নতি

ভিটামিন বি গ্রুপ স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি মানসিক চাপ কমায়, ঘুমের সমস্যা দূর করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।

ত্বকের জন্য উপকারী

কোয়েলের মাংসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। এটি বার্ধক্যের ছাপ কমায়।

পাচনতন্ত্রের জন্য ভালো

কোয়েলের মাংস সহজে হজম হয় এবং এতে ফাইবার কম থাকার কারণে এটি গ্যাস্ট্রিক বা অন্যান্য পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে না।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

যারা ওজন কমানোর পরিকল্পনায় আছেন, তাদের জন্য কোয়েলের মাংস আদর্শ। এতে ক্যালরি কম এবং প্রোটিন বেশি থাকায় এটি পেশি গঠনে সাহায্য করে এবং ফ্যাট কমায়।

অ্যাক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানসমূহ কোয়েলের মাংসে প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যাল কমিয়ে অ্যাক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়

কোয়েলের মাংসে থাকা পটাশিয়াম এবং ওমেগা ফ্যাটি এসিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তনালীগুলিকে সুরক্ষিত রাখে।

শিশুদের জন্য বিশেষ উপকারী

কোয়েলের মাংসে থাকা প্রোটিন ও ভিটামিন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। এটি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কোয়েলের মাংস খাওয়ার কিছু বিশেষ দিক

প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত ফ্যাট: কোয়েলের মাংসে প্রাকৃতিক ফ্যাট থাকে, যা অন্যান্য মাংসের চেয়ে তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর।

হরমোনমুক্ত: সাধারণত কোয়েল প্রাকৃতিক খাদ্যে বড় হয়, তাই তাদের মাংসে কোনো কৃত্রিম হরমোন থাকে না।

গ্লুটেনমুক্ত: যারা গ্লুটেন এড়িয়ে চলতে চান, তাদের জন্য এটি একটি ভালো পছন্দ।

কোয়েলের মাংস বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়।

ঝোল বা কারি, গ্রিল করা, স্যুপ বানানো, ফ্রাই করা। এ ছাড়া সালাদের সাথে মিক্সড করে খাওয়া যায়। তবে কোয়েলের মাংস রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল বা মসলা ব্যবহার না করাই ভালো, যাতে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট না হয়।

কোয়েলের মাংস কাদের জন্য উপযোগী নয়

যদিও কোয়েলের মাংস খুবই পুষ্টিকর, কিছু মানুষের জন্য এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

১. অ্যালার্জি: যাদের পোল্ট্রিজাতীয় খাদ্যে অ্যালার্জি আছে, তারা এটি খাওয়ার আগে সতর্ক হোন।

২. হাই প্রোটিন ডায়েট সহ্য না করা: যারা কিডনি বা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৩. অতিরিক্ত সেবন: অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

 

Comments

The Daily Star  | English

How Dhaka’s rickshaw pullers bear a hidden health toll

At dawn, when Dhaka is just beginning to stir, thousands of rickshaw pullers set off on their daily grind.

19h ago