কাঁচা কাঁঠালের এই উপকারিতাগুলো জানেন কি

কাঁচা কাঁঠালের উপকারিতা
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ফল কাঁঠাল সুস্বাদু ও অতি পরিচিত একটি ফল । এটি কাঁচা অবস্থায় একটি সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং রান্নার পরে স্বাদে অনেকটা মাংসের মতো হয় বলে একে অনেক সময় 'গাছের মাংস' বা 'ভেজিটেরিয়ান মিট'ও বলা হয়।

বাংলাদেশে গ্রীষ্ম মৌসুমে কাঁচা কাঠাল পাওয়া যায় এবং এটি নানা রকমভাবে রান্না করা হয়ে থাকে। যেমন-কাঁঠাল ভুনা, কাঠালের কাবাব, চপ, কোফতা ইত্যাদি। কিন্তু এই সুস্বাদু সবজিটির যে অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তা অনেকেই জানেন না।

চলুন জেনে নিই কাঁচা কাঁঠালের পুষ্টিগুণ। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।

তিনি জানান, কাঁচা কাঠাল একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত সবজি, যা শুধু স্বাদে নয় বরং গুণেও অতুলনীয়। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় কাঁচা কাঠাল রাখলে হজম ভালো থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা হয়, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং শরীরের সামগ্রিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।

কাঁচা কাঁঠালের পুষ্টিগুণ

কাঁচা কাঠাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা কাঠালে যে সকল উপাদান থাকে তা হলো-

ক্যালরি: ৯৫-১০০ কিলোক্যালরি

কার্বোহাইড্রেট: ২০-২৫ গ্রাম (প্রধানত জটিল কার্বোহাইড্রেট)

প্রোটিন: ২.৫-৩ গ্রাম

ফ্যাট: ০.৫-১ গ্রাম (খুবই কম)

আঁশ (ফাইবার): ৩-৫ গ্রাম

এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, বি৬, সি, ও ফোলেট। খনিজ পদার্থের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

এই উপাদানগুলো শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করে এবং রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

কাঁচা কাঁঠালের উপকারিতা

হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে

কাঁচা কাঠাল একটি আঁশসমৃদ্ধ খাবার। এতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার পরিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, হজমে সহায়তা করে এবং মলত্যাগ সহজ করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

কাঁচা কাঠালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) তুলনামূলকভাবে কম, অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় না। এছাড়া এতে থাকা আঁশ রক্তে শর্করার শোষণ ধীরে করে দেয়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

কাঁচা কাঁঠাল কম ক্যালরিযুক্ত কিন্তু ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হ্রাস পায়। এটি ওজন কমানোর জন্য উপযোগী একটি খাদ্য।

হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী

এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। এছাড়া এতে ফ্যাট কম থাকায় এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি সর্দি-কাশি, ইনফেকশন ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী

ভিটামিন এ ও সির উপস্থিতির কারণে কাঁচা কাঠাল ত্বক মসৃণ রাখতে সহায়তা করে এবং বয়সের ছাপ কমায়। এছাড়া চুলের গোড়া মজবুত করে ও চুল পড়া রোধে ভূমিকা রাখে।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে

কাঁচা কাঠালে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। এটি অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক, বিশেষ করে নারীদের জন্য।

হাড় শক্ত করে

এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে। বয়স্কদের জন্য এটি হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

কাঁচা কাঠালে রয়েছে ফেনলিক যৌগ ও ফ্ল্যাভোনয়েড, যেগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এগুলো কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

প্রোটিনের উৎস

নিরামিষভোজীদের জন্য কাঁচা কাঠাল একটি প্রোটিনের বিকল্প হতে পারে। এর গঠন ও স্বাদ অনেকটা মাংসের মতো হওয়ায় এটি স্বাস্থ্যকর 'মিট-সাবস্টিটিউট' হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে সরাসরি প্রোটিনের বিকল্প বলা যাবে না।

ক্যানসার প্রতিরোধে সম্ভাব্য ভূমিকা

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঁঠালে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং টিউমার কোষের বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করতে পারে।

কাঁচা কাঠাল রান্নার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন কাঁঠাল ভুনা, কাঁঠালের চপ, কাঁঠাল কাবাব, কাঁঠালের কোফতা,মিক্সড সবজি। রান্না করার সময় অতিরিক্ত তেল বা মসলা ব্যবহার না করে হালকা রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।

সতর্কতা

কাঁচা কাঁঠাল অতিরিক্ত খেলে কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

পাচনতন্ত্রে সমস্যা: অতিরিক্ত আঁশ পেটে গ্যাস, ফোলাভাব বা ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

ওজন বাড়ার আশঙ্কা: অতিরিক্ত খেলে ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেটের কারণে ওজন বাড়তে পারে।

পটাশিয়াম অতিরিক্ত গ্রহণ: কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত পটাশিয়াম ক্ষতিকর হতে পারে। কাঁঠালে পটাশিয়াম আছে তাই এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অ্যালার্জি বা অস্বস্তি: কিছু মানুষের শরীরে কাঁঠাল হজমে সমস্যা বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

পুষ্টিগুণ থাকলেও কাঁচা কাঁঠাল পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই স্বাস্থ্যকর।

 

Comments

The Daily Star  | English

Parties agree on chief justice appointment, limiting emergency powers

Manifesto provision allows top-two judge choice; cabinet to approve emergency declaration

42m ago