প্যারেন্টিং

সন্তান হোমওয়ার্ক করতে চায় না, জেনে নিন উপায়

সন্তান হোমওয়ার্ক করতে চায় না, জেনে নিন উপায়
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার একটি নাম করা স্কুলে পড়ে দীপা। কিন্তু, দীপাকে নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছে বাড়ির সবাই। কারণ, হোমওয়ার্কের কথা শুনলেই রেগে যায় দীপা। ওকে দিয়ে হোমওয়ার্ক করানো কঠিন হয়ে যায়। স্থির হয়ে বসে থাকতে চায় না, নানান বায়না করে উঠে যায়।

এদিকে দীপার স্কুলে পড়ালেখার চাপও তুলনামূলক বেশি। প্রতিদিন অনেক হোমওয়ার্ক দেওয়া হয়। ঠিক মতো হোমওয়ার্ক করে নিয়ে না গেলে বকাঝকা করে। কখনো কখনো স্কুলে অভিভাবককে ডাকা হয়, সেখানে থাকে শিক্ষকের কড়া কড়া মন্তব্য।

এই সমস্যা শুধু দীপার অভিভাবকের নয়। কমবেশি অনেক বাবা-মাকে এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। মূলত, শিশুদের পড়ার টেবিলে বসানো একটি দুরূহ কাজ। তারপর এতগুলো হোমওয়ার্ক ওদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। তাই শুধু ভালো স্কুলে ভর্তি করালেই হবে না। বরং সন্তান যেন সেই স্কুলের পড়ালেখার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে অভিভাবক হিসেবে সেটাও দেখতে হবে। ওদের সঙ্গে পড়ার টেবিলে অভিভাবককেও বসতে হবে। সমস্যা কোথায় সেটা খুঁজে বের করতে হবে। সেই অনুযায়ী তাদের সাহায্য করতে হবে। তবে, অবশ্যই ভুলে যাবেন না হোমওয়ার্ক করার দায়িত্ব আপনার সন্তানের, আপনার নয়। আপনি শুধু তাকে সাহায্য করবেন। সবকিছু করে দিতে যাবেন না। তাহলে আবার ফল উল্টো হবে। ও কিছুই শিখতে পারবে না।

নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসা

আপনার সন্তান প্রতিদিন কখন পড়তে বসবে তার একটি সময় সুনির্দিষ্ট করুন। প্রয়োজনে বাড়ির সবার সঙ্গে আলোচনা করে সময় ঠিক করতে পারেন। নিজের পারিবারিক কাজকে গুরুত্ব দিয়ে সময় ঠিক করলে ভালো হবে। না হলে এসব কাজ পড়ায় ব্যঘাত ঘটাতে পারে। তাই কাজ শেষ করে অথবা হোমওয়ার্ক করানোর পর কাজ শেষ করুন।

সবার স্কুলের সময় আবার এক হয় না। কারো স্কুল অনেক সকালে, আবার কারো স্কুল একটু বেলা হলে শুরু হয়। মাথায় রাখতে হবে পড়ার পাশাপাশি বিশ্রাম নেওয়া খুব জরুরি। তাই স্কুল থেকে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে হোমওয়ার্ক করাতে বসে যাবেন না। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একটি রুটিন ঠিক করে নেওয়া।

কখন ঘুম থেকে উঠবে, কখন স্কুল থেকে ফিরবে, কতক্ষণ বিশ্রাম নেবে, কখন খেলবে- সবকিছু রুটিনে উল্লেখ থাকতে হবে। কত সময় পড়বে সেটাও ঠিক করে নিতে পারেন। পড়ার টেবিলের সামনে রুটিনটি টানিয়ে দিতে পারেন।

মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহযোগিতা

প্রতিদিনের হোমওয়ার্কের জন্য বা পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে নিন। ড্রয়িংরুমে পড়তে বসানো ঠিক হবে না। কারণ, ড্রয়িংরুমে পরিবারের সদস্যরা যাতায়াত করতে পারেন, বা বাইরে থেকেও কেউ আসতে পারেন- এতে ওর মনোযোগ নষ্ট হবে। তাই এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে সহজে কেউ যাবে না। তাহলে আপনার সন্তান সহজেই পড়ায় মনোযোগী হতে পারবে। আবার খেয়াল রাখতে হবে পড়ার সময় যেন টিভি চালু না থাকে। যদি থাকে তাহলে টিভির শব্দ যেন পড়ার ওখানে না পৌঁছায় সে ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রয়োজনে নিজের মোবাইল ফোনটিও এসময় বন্ধ রাখুন। তাহলে হঠাৎ কারো কল এসে তাকে বিরক্ত করতে পারবে না।

দরকারি জিনিস কাছে রাখুন

হোমওয়ার্ক করানোর সময় সন্তানের বই, খাতা, পেন্সিল হাতের কাছে রাখুন। প্রয়োজন হলে যেন সহজেই পাওয়া যায়। এতে অকারণে সময় নষ্ট হবে না। অনেক সময় শিশুরা নিজের জিনিস ঠিক মতো গুছিয়ে রাখতে পারে না, তাই সময় নষ্ট হতে পারে। এজন্য তাদের ওপর রাগ দেখানো ঠিক হবে না। বরং তাকে বুঝিয়ে বলুন, কিছু হারিয়ে ফেললে বা ফুরিয়ে গেলে যেন আপনাকে জানিয়ে রাখে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি রাবার, পেন্সিল, খাতা এগুলো বাড়িতে অতিরিক্ত কিছু কিনে রাখেন। তাহলে হারিয়ে গেলে বা ফুরিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাছেই পাবেন। নাহলে আবার দোকানে ছুটতে হবে।

পড়ালেখায় আগ্রহ তৈরি

শুধু হোমওয়ার্ক, আর বইয়ের পড়া সব নয়। এসবের বাইরে গল্পের বই বা ম্যাগাজিন পড়া দরকারি। তাই অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব সন্তানের হাতে ভালো কিছু বই তুলে দেওয়া এবং পড়ার প্রতি তার আগ্রহ তৈরি করা। এতে ক্লাসের বইয়ের বাইরেও ওর জানার পরিধি বাড়বে। আর এটি অন্যদের চেয়ে ওকে এগিয়ে রাখবে। বর্তমান সময় হলো ইন্টারনেটের যুগ। ও যদি ক্লাসে নতুন কিছু শেখে তাহলে সেই বিষয়টি নিয়ে ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করুন। তাকে সঙ্গে রাখুন। তাহলে ক্লাসের জানার বাইরে বিষয়টি নিয়ে আরও জানতে পারবে। কিংবা অঙ্ক করানোর সময় ক্লাসের বই থেকে না করে অন্য কোনো বইয়েরও সাহায্য নিতে পারেন। এতে আপনার সন্তানের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Media freedom may turn into empty promise: TIB

The graft watchdog voices serious concerns over the state of press freedom in the country

20m ago