শিশুদের গল্পের বই পড়ার অভ্যাস করতে যা করবেন

গল্পের মধ্য দিয়ে কোনো কিছু শিখলে সেটা মনেও থাকে এবং বাচ্চারাও সহজেই সেই জিনিসটা বুঝতে পারে। ছবি: মনিরা শরমিন

ডেভেলপমেন্টাল অ্যান্ড বিহেভিওরাল পেডিয়াট্রিক্স জার্নালে প্রকাশিত ২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে শিশুরা প্রতিদিন গল্প বা অন্য বই পড়ে তারা প্রতি বছর প্রায় ৭৮ হাজার শব্দের দেখা পায়। এর মানে হলো, শিশুরা জন্ম থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন শব্দের সংস্পর্শে আসে। এটি ভবিষ্যতে তাদের ভাষা দক্ষতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি, বাচ্চাদের অ্যাকাডেমিক সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করতে বাবা-মায়ের জন্য সবচেয়ে সহজ উপায়গুলোর এটি একটি।

গল্পের মধ্যে এমন জাদু থাকে যা মনের ভেতর ভিন্ন জগত তৈরি করে। তাই গল্পের মধ্য দিয়ে কোনো কিছু শিখলে সেটা মনে থাকে এবং বাচ্চারা সহজেই সেই জিনিসটা বুঝতে পারে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাক্ষরতা প্রচারকারী দাতব্য প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের একটি জার্নালে বলা হয়, নিয়মিতভাবে ভালোবেসে বই পড়ার অভ্যাস বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় করে এবং শক্তিশালী পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। প্রিয় গল্পের লাইনগুলোও পারিবারিক অভিধানে প্রবেশ করে, ব্যবহৃত হয়। যে পরিবারে বই পড়ার চর্চা হয় সেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই বেশি থাকে আলোচনার সুযোগ, সহানুভূতি এবং পারস্পরিক সংযুক্তি। আজীবন আনন্দের জন্য পড়ার যাত্রাও শুরু হয় এর মাধ্যমেই। যে শিশুরা আনন্দের জন্য পড়ে তারা স্কুলে বিভিন্ন বিষয়ে আরও ভালো ফলাফল করে। বাচ্চাদের মানসিক সুস্থতায়ও এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

প্রথম প্রথম রঙিন ছবিসহ বই দিতে পারেন। এতে শিশু বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবে। ছবি: মনিরা শরমিন

সন্তানকে গল্প পড়ে শোনাবেন কি না বা কী ধরনের গল্প শোনাবেন তার ওপর নির্ভর করে তার বেড়ে ওঠার বেশ কিছু গুণাবলী। টিভি, কার্টুন, ট্যাবের বাইরেও ব্যস্ত থাকার অনেক উপকরণ আছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাহিত্যের বিশাল জগতের দরজাটা খুলে দেওয়া জরুরি তার জন্য। এজন্যই বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হয় ছোট থেকেই। এ যাত্রাকে আরও সহজ করতে কাজে লাগতে পারে এই বিষয়গুলো-

  • পৌরাণিক কাহিনী, জীবনী, প্রকৃতি, ভ্রমণ, রূপকথা বা কার্টুন-বাচ্চার যেখানে আকর্ষণ বেশি সেই গল্পের বই পড়ে শোনান। তাতেই বেশি আগ্রহ পাবে সে। শোনা ও পড়া এই দুটোর অভ্যাসই তৈরি হবে।
  • গল্প শোনানোর সঙ্গে কিছু জিনিস অভিনয় করে, কিছু বিষয় অভিব্যক্তি দিয়ে, কখনো বা আবৃত্তি করে দেখাতে পারেন। এতে চোখের সামনে ব্যাপারটার কিছুটা চিত্রায়ন করতে পারবে। গল্প কল্পনার জগতের পরিধিকে বাড়িয়ে দেয়।
  • কেবল গল্প বলার সময়ই নয়, দিনের অন্য সময়ও গল্পের চরিত্রের সঙ্গে ওকে পরিচিত করুন। যেমন সিংহ আর ইদুঁরের গল্পের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলুন, কাউকেই ছোট ভাবতে হয় না ইত্যাদি।
  • প্রতিদিন গল্প শুরু করার আগে আগেরদিনের টুকটাক ফলোআপ নিতে থাকুন। এ ছাড়া কাছাকাছি অন্য শব্দের অর্থ জানান। সন্তানের বয়স অনুযায়ী ওয়ার্ড গেইমও খেলতে পারেন৷
  • সঠিক সময়ে সঠিক বই নির্বাচনে সচেতন হোন। খুব সহজ বই কিংবা খুব কঠিন বই এড়িয়ে বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বই কিনুন।
  • বয়স বাড়লেই বই পড়ার জন্য সময় তো দেবেনই। পাশাপাশি, বই শেষ করলে প্রিয় খাবার খাওয়াবেন- এমন তাৎক্ষণিক পুরস্কার ঘোষণা করুন। এতেও নিয়মিত বই পড়তে উৎসাহিত হবে সন্তান। চেষ্টাও করবে।
  • গল্প পড়ার সময় সহজ করে বলুন। কোনো জটিল ব্যাপারও সহজ করে বলতে পারলে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে। একঘেয়েভাবে, গুরুগম্ভীরভাবে বোঝালে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ তৈরি হয়। সেটা বাচ্চারা অপছন্দ করে। বরং স্কুলের পড়াও গল্পের মতো করে বোঝালে পাঠদান সহজ হবে। এইভাবে পড়াশোনাটাও ওর কাছে আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে।
  • বাচ্চার গল্পের বই পড়ার অভ্যাস না থাকলে জন্মদিনে বা কোনো উপলক্ষে গল্পের বই উপহার দিতে পারেন। প্রথম প্রথম রঙিন ছবিসহ বই দিতে পারেন। এতে সে বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবে।

     

Comments

The Daily Star  | English

Tk 2 for a day's labour: Prisons chief pushes to reform inmate pay

"This is why prison-made products are so cheap. But this also makes inmates lose interest in work"

45m ago