জুতা পরলে পায়ে দুর্গন্ধ হয় কেন, এড়াবেন কীভাবে

পায়ে দুর্গন্ধ, জুতা, মোজা,
ছবি: সংগৃহীত

অনেকের ক্ষেত্রেই পায়ের দুর্গন্ধ হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে শীতকালে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। পায়ে দুর্গন্ধের কারণে নানা সময়েই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা যে কারো জন্যই অস্বস্তির কারণ।

জুতা পরলে পা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় কেন ও করণীয় কী—বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নিন নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খানের কাছ থেকে।

জুতা পরলে পায়ে দুর্গন্ধ হয় কেন

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, জুতা পরলে পায়ে দুর্গন্ধ হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ঘাম। পায়ের পাতায় তৈরি হওয়া ঘাম দীর্ঘসময় জমে থাকার কারণে জুতা ও মোজার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস জন্মায় এবং দুর্গন্ধ বের হয়। যাদের ঘাম বেশি হয় তাদের পায়ে দুর্গন্ধও বেশি হয়। যাদের ঘাম কম হয় তাদের পায়ের পাতা সহজেই শুকিয়ে যায়।

বিভিন্ন কারণে পায়ের পাতায় ঘাম বেশি হয়ে দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে। যেমন—

১. ঘাম কমবেশি সবারই হয়। শরীরের যত জায়গায় ঘাম গ্রন্থি আছে তার মধ্যে পায়ের পাতা অন্যতম, পায়ের পাতায় প্রচুর পরিমাণে ঘাম গ্রন্থি রয়েছে যার কারণে অতিমাত্রায় ঘাম হয়।

২. হরমোনাল কারণে অনেকের ঘাম বেশি হয়। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা আছে যাদের, তাদের থাইরয়েড কমে গেলে কিংবা বেড়ে গেলে উভয় কারণেই ঘাম বেশি হয়। সেক্ষেত্রে ঘাম বেশি হওয়ার কারণে পায়ের পাতায় ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস জমে দুর্গন্ধ হয়।

৩. হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘাম বেশি হয়। যেমন: অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়, কিশোর-কিশোরী কিংবা বাড়ন্ত বয়সে ঘাম বেশি হয় হরমোনের তারতম্যের কারণে। মানসিক চাপের কারণেও ঘাম বেশি হয় অনেকের।

৪. পায়ের পাতা ও হাতের তালুতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সমস্যাকে হাইপারহাইড্রোসিস বলে। এই সমস্যা যাদের আছে তাদের পায়ের পাতায় ঘাম জমে দুর্গন্ধ হয়।

৫. শরীরে জিংকের ঘাটতি হলে পায়ের পাতায় দুর্গন্ধ হতে পারে। জিংক মানবদেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, জিংক শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। শরীরের জিংকের ঘাটতি থাকলে ডিটক্সিফিকেশন যখন কম হয়, তখন বিষাক্ত উপাদান ঘামের সঙ্গে বের হয়ে দুর্গন্ধ তৈরি করে।

৬. দীর্ঘ সময় জুতা পরে থাকা, একই জুতা প্রতিদিন ব্যবহার করা এবং ব্যবহৃত জুতা রোদে না দেওয়া, ধুয়ে পরিষ্কার না করা, সারাদিন এক জোড়া মোজা পরে থাকা এবং একই মোজা কয়েকদিন ব্যবহার করার কারণে জুতা ও মোজায় ঘাম জমে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিস্তার ঘটে। সে কারণে দুর্গন্ধ ছড়ায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা তীব্র হতে থাকে।

৭. অনেকে সঠিকভাবে পা পরিষ্কার করে না, যার ফলে ঘাম ছাড়াও ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস জন্মায়। এ ছাড়া পায়ে বিভিন্ন রোগ হতে পারে, যে কারণে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

যারা দীর্ঘসময় জুতা-মোজা পরে থাকে, অফিসকর্মী, শিক্ষার্থী, পুলিশ, খেলাধুলায় জড়িত ব্যক্তি, যাদের ফরমাল বা বদ্ধ জুতা লম্বা সময় পরে থাকতে হয়, তাদের পায়ে দুর্গন্ধ বেশি হয়।

করণীয়

১. সঠিকভাবে পায়ের যত্ন নিতে হবে প্রতিদিন। গোসলের সময় ভালো করে পা পরিষ্কার করতে হবে, নখ, নখের কোণা পরিষ্কার করতে হবে যাতে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস জন্মাতে না পারে। সম্ভব হলে পায়ের যত্নে মাসে এক থেকে দুই বার পেডিকিউর করতে পারেন।

২. সারাদিন যদি মোজা পরে থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে একবার মোজা পরিবর্তন করে নিলে দুর্গন্ধ কম হবে।

৩. প্রতিদিন একই জুতা ব্যবহার না করে জুতা পরিবর্তন করতে হবে।

৪. জুতা রোদে দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে জুতা ধুয়ে পরিষ্কার করে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

৫. ভেজা পায়ে জুতা-মোজা পরা উচিত নয়, পা ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে জুতা বা মোজা পরতে হবে।

৬. বিভিন্ন ধরনের মোজা পাওয়া যায় বাজারে। যাদের ঘাম বেশি হয় তাদের সুতির পাতলা মোজা ব্যবহার করা উচিত। সেক্ষত্রে ঘাম জমে থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ সুতির মোজা পায়ের ঘাম শোষণ করে।

৭. পায়ের পাতায় বোটক্স করলে ঘাম গ্রন্থি থেকে ঘাম কম হয় তিন থেকে পাঁচ মাস। ঘাম কম হলে দুর্গন্ধও কম হবে।

৮. অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট কিছু স্প্রে পাওয়া যায়, সেগুলো রাতে ঘুমানোর আগে পায়ের পাতায় ব্যবহার করলে ঘাম কম হয়।

এছাড়া হাইপারহাইড্রোসিস, মানসিক চাপ, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। শরীরে জিংকের ঘাটতি থাকলে জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। দুর্গন্ধ এড়াতে পায়ের যত্নে সচেতন হতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

5h ago