রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলীর পাড়ে ক্যাম্পিং

প্রতীকী ছবি।

ভোরের সূর্য শেষ কবে দেখেছেন, অনেকেরই হয়ত মনে নেই। তাঁবুর ভেতর থেকে চোখ মেলেই যদি দেখতে পান হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা পাহাড় আর তার নিচে বয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদী। আর পাহাড়ের সাথে খুনসুটি সেরে পৃথিবীতে আলো ছড়াতে একটু একটু করে জেগে উঠছে সূর্য। তারই আলোতে ঘুম ভাঙল আপনার, কেমন লাগবে সেই অনুভূতি? স্বর্গীয় এক অনুভূতি হবে নিঃসন্দেহে।

ছবি: স্মৃতি মন্ডল

আপনি কি রোমাঞ্চ প্রিয়?  প্রকৃতি ভালোবাসেন? ছকে বাঁধা জীবনের বাইরে গিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে চান? তবে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের ক্যাম্প সাইট হতে পারে আপনার ভীষণ ভালো লাগার। হাতে দু-এক দিন সময় নিয়ে ক্যাম্পিং করে আসতে পারেন সেখানে।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার রাঙামাটির কর্ণফুলী নদীর তীরে ক্যাম্পিং ভিন্ন মাত্রা যোগ করে অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের মনে। তাঁবুতে রাত্রি যাপনের অভিজ্ঞতা সেই সাথে প্রকৃতির কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, সে এক দারুণ অনুভূতি।

সবুজে মোড়া পাহাড় আর তার মাঝে বয়ে চলা স্বচ্ছ সুনীল জলের কর্ণফুলী নদী, পাখির কিচিরমিচির, বুনো ঘ্রাণ মাতাল করে তোলে ভ্রমণপিয়াসীদের।

কোথায় কোথায় যেতে পারবেন ক্যাম্প সাইট থেকে

কর্ণফুলী নদী ভ্রমণ

কর্ণফুলী নদী। ছবি: মো. আল আমিন

নদীর নিজস্ব এক সুর আছে, এক জীবন আছে। খুব কাছে থেকে দেখলে তা বোঝা যায়। ট্রলার ভাড়া নিয়ে নদী ভ্রমণ করতে পারবেন অনায়াসে। ভোরের আলোতে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা নদীর সৌন্দর্য অপূর্ব। নদী নির্ভর মানুষের জীবনযাত্রা জেগে উঠে বেলা বাড়ার সাথে সাথে। সূর্যাস্তের রক্তিম আভায় নদী হয়ে উঠে শান্ত, স্নিগ্ধ।

ওয়াগ্গাছড়া চা বাগান

ওয়াগ্গাছড়া চা বাগান। ছবি: স্মৃতি মন্ডল

কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে পাহাড়ি এলাকার ওয়াগ্গাছড়া চা বাগান অত্যন্ত মনোরম, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। জল এবং স্থল উভয় পথেই এই চা বাগানে যাওয়া যায়।

মু্প্পোছড়া ও ন'কাটা ঝরণা ট্রেইল

মুপ্পোছড়া ঝরণা। ছবি: স্মৃতি মন্ডল

বিলাইছড়ি উপজেলার বাঙ্গালকাটা এলাকায় অবস্থান মুপ্পোছড়া ও ন'কাটা ঝরণার। কাপ্তাই ঘাট থেকে ট্রলার রির্জাভ করে একদিনেই ঘুরে আসা যাবে। পথে বিজিবি চেকপোস্টে চেকআউট করে নিতে হবে। এছাড়া পথে আর্মি চেকপোস্ট পড়বে, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে অনুমতি নিতে হবে।

মুপ্পোছড়া ঝরণা

ট্রলার থেকে নেমে পাহাড়ি গ্রাম পেরিয়ে মুপ্পোছড়া ঝরণার পথ আপনাকে প্রতি মুহূর্তে মুগ্ধ করবে। পাথুরে ঝিরি পথ, ছোট বড় ঝরণার ক্যাসকেড, খাড়া পাহাড়ি পথ বেয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর দেখা মিলবে মুপ্পোছড়া ঝরণার। অনেক উঁচু থেকে প্রশস্ত পাহাড়ের বুক বেয়ে নামছে অজস্র জলের ধারা, অপূর্ব সূরের মূর্চ্ছনায় মুখরিত সেখানকার প্রকৃতি। পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে ঝরণার হিমশীতল জলের স্পর্শ।

ন' কাটা ঝরণা

ন'কাটা ঝরণা। ছবি: স্মৃতি মন্ডল

মুপ্পোছড়া থেকে খানিকটা দূরেই ন'কাটা ঝরণা। ঝিরি পথে ধরে এগুলেই ন'কাটা ঝরণার ক্যাসকেড চোখে পড়বে। পাহাড়ের বুকে উদ্দাম জলস্রোত নামছে নিচের দিকে। ন'কাটা ঝরণার নিচে নামার পথ আছে। উপভোগ করতে পারবেন নিজের মতো। ভেজা পোশাক পরিবর্তনেরও ব্যবস্থা পেয়ে যাবেন এখানে।

নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আলো থাকতেই ফিরে আসতে হবে একই পথ ধরে।

এছাড়াও অপরূপ সৌন্দর্য্যের মায়ায় ঘেরা কাপ্তাই হৃদ, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বৌদ্ধবিহার ঘুরে আসতে পারবেন ক্যাম্প সাইট থেকে।

কায়াকিং

কায়াকিং। ছবি: মো. আসিফ হাসান

কর্ণফুলী নদীতে কায়াকিং করতে পারবেন। প্রত্যেক ক্যাম্পিং সংস্থার নিজস্ব কায়াক বোটের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।

চাঁদের আলোয় বারবিকিউ

ক্যাম্পিংয়ের সময় আকাশে চাঁদ থাকলে তাঁবুবাস অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। নাগরিক জীবন থেকে দূরে প্রকৃতির মাঝে জোছনারাত উপভোগ করার মতো আনন্দের আর কিই বা হতে পারে। সেই সাথে যদি থাকে বারবিকিউ ব্যবস্থা। নিজেদের মধ্যে আড্ডা, গান কিংবা গল্পে মুহূর্তটা হতে পারে জীবনের বড় সঞ্চয়।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে রাঙামাটির কাপ্তাই যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি কোম্পানির বাস পেয়ে যাবেন। নিজের পছন্দমত টিকেট কেটে নিলেই হবে। রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসে বহদ্দার হাট বাস স্ট্যান্ড থেকে কাপ্তাইগামী বাস পেয়ে যাবেন।

কোথায় ক্যাম্পিং করবেন

ক্যাম্পিংয়ের জন্য পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে 'কাপ্তাই কায়াক ক্লাব'। কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে ক্যাম্প সাইট, তাঁবুতে জনপ্রতি ১ হাজার টাকার প্যাকেজ, ১ ঘণ্টার কায়াকিংসহ রাতের খাবার বা বারবিকিউ এবং সকাল ও বিকেলের নাস্তা।

প্রশান্তি তাঁবুবিলাস ও রিভার ভিউ পিকনিক স্পটেও হাজার টাকার মধ্যে প্যাকেজ পেয়ে যাবেন তাঁবুবাসের জন্য।

নিসর্গ পড হাউজে রয়েছে তাঁবুবাসের ব্যবস্থা, খরচ পরবে পনেরশ থেকে ২০০০ টাকা জনপ্রতি।

কর্ণফুলী নদীতে সূর্যাস্ত। ছবি: স্মৃতি মন্ডল

যা মনে রাখা জরুরি

১. ক্যাম্পিং করার মতো শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিকতা থাকতে হবে।

২. ক্যাম্পিংয়ে প্যাকেজের বাইরে যাবতীয় খরচ, যেমন- বোট ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ নিজেদের বহন করতে হবে।

৩. ক্যাম্পিং উপযোগী পোশাক, জুতা, ফাস্ট এইড কিট সাথে রাখা জরুরি।

৪. নৌ ভ্রমণ বা কায়াকিংয়ের জন্য সাঁতার জানা থাকলে ভালো।

৫. কাপ্তাই ভ্রমণে নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় পরিচয়পত্র, অথবা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি সাথে রাখতেই হবে। এগুলো ছাড়া আর্মি চেকপোস্ট অতিক্রম করে ঝরণা দেখতে যাবার অনুমতি পাওয়া যাবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Food, Fast: Behind delivery boom lies a workforce without rights or recognition

With a signature pink Foodpanda delivery bag slung across his shoulders, Abdul Kader pedals tirelessly through the congested and pothole-riddled roads of Dhaka.

12h ago