ঈদযাত্রায় ঢাকা-বরিশাল সড়কপথে তীব্র যানজট

ছবি: টিটু দাস

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা থেকে সড়কপথে বরিশালগামী যাত্রীরা তীব্র যানজটের মুখোমুখি হচ্ছেন, বিশেষ করে পদ্মা সেতু পার হওয়ার পর থেকেই এই ভোগান্তির শুরু।

গতকাল সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজটের অবস্থা ছিল গুরুতর, যা হাইওয়ে পুলিশও স্বীকার করেছেন। তাদের আশঙ্কা, আজও এই পরিস্থিতি থাকতে পারে।

ঈদের ছুটিতে যাওয়া যাত্রীদের অনেকে জানিয়েছেন, এখানে মহাসড়ক সরু হয়ে যায় এবং রিকশা, অটোরিকশা ও স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (যেমন— হিউম্যান হলার, ট্রলি ভ্যান) নিয়ম ভেঙে মহাসড়কে ঢুকে পড়ায় গাড়ির গতি মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা থাকলেও যাত্রীরা ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ধরে রাস্তায় আটকে থাকছেন।

হানিফ পরিবহনের বাসে পরিবার নিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানান, তিনি সকাল ৭টায় গুলিস্তান থেকে বাসে উঠে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বরিশাল পৌঁছেছেন। দীর্ঘ যানজটের কারণে তাদের বাস অনেক জায়গায় একদম থেমে ছিল, যা ছিল খুবই ক্লান্তিকর।

এই প্রতিবেদকও একই বাসে ভ্রমণ করে দেখেছেন যে, সকাল ৭টায় গুলিস্তান থেকে ছেড়ে দুপুর ১টায় বরিশাল পৌঁছাতে হয়েছে। শুধু পদ্মা সেতু টোল প্লাজার দুই কিলোমিটার যানজট কাটাতেই প্রায় ৪০ মিনিট লেগেছে। এছাড়াও, ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে বাবুবাজার এবং কেরানীগঞ্জেও যানজটে পড়তে হয়েছে।

পোশাক শ্রমিক আনোয়ারা বেগম বলেন, সকাল ৮টার বাস বরিশালে পৌঁছাতে তার ছয় ঘণ্টা লেগেছে। তিনি আফসোস করে জানান, 'আগে লঞ্চে বরিশাল যেতাম। এবার ভেবেছিলাম দ্রুত হবে, কিন্তু ছয়-সাত ঘণ্টা সময় লেগেছে।'

ব্রজমোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইমরানুল হাকিম জানান, তারা সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের বাসে ঢাকা থেকে উঠলেও বাস ছেড়েছে রাত ৮টায়। রাত ২টার সময়ও তারা বাটাজোরে আটকে ছিলেন এবং অবশেষে আজ ভোর ৪টার দিকে বরিশাল পৌঁছেছেন।

যাত্রীরা আরও জানিয়েছেন, ভূরঘাটা এবং গৌরনদীর মধ্যে তিন থেকে চার কিলোমিটার দীর্ঘ তীব্র যানজট ছিল। বরিশাল শহরে ঢোকার আগে গড়িয়ার পাড় থেকে কাশিপুর মোড় পর্যন্তও দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে।

বরিশালের নথুল্লাবাদে দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেছেন, ঢাকা থেকে আসা বেশিরভাগ দূরপাল্লার বাস রাতভর যানজটে আটকে থাকার পর সকালে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছেছে।

যাত্রীরা ভূরঘাটা থেকে রহমতপুর পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ থেমে থেমে যানজটের কথা জানিয়েছেন, যা সময় বাড়ার সাথে সাথে আরও খারাপ হয়েছে।

বিএমএফ পরিবহনের সুপারভাইজার এনামুল বলেন, 'গতকাল ও আজ আমরা সবচেয়ে বেশি যাত্রী দেখেছি। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে অনেক ছোট যানবাহনও যাত্রী বহনের জন্য মহাসড়কে ঢুকে পড়ায় যানজট আরও বেড়েছে।'

গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, 'আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজ করছি, কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই যানবাহনের অস্বাভাবিক চাপ ছিল।'

তিনি আরও জানান, বাটাজোরে গ্রীনলাইন পরিবহনের একটি বাস বিকল হওয়ায় যানজট আরও বেড়ে যায় এবং হঠাৎ করে মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ির আনাগোনা যানজটকে আরও তীব্র করে তোলে।

'যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকায় ধীরগতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না। আমাদের জনবলেরও সীমাবদ্ধতা আছে, বলেন তিনি।

ঈদের ছুটিতে লঞ্চে যাত্রা

মহাসড়কের যানজটের বিপরীতে, লঞ্চে যাত্রা ছিল তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ। আজ সকালে ঢাকা থেকে অন্তত ১৩টি লঞ্চ বরিশালে এসে পৌঁছেছে। লঞ্চগুলোতে যাত্রী থাকলেও উপচেপড়া ভিড় ছিল না। শুধুমাত্র কীর্তনখোলা-১২ লঞ্চটি ইঞ্জিন সমস্যার কারণে পৌঁছাতে পারেনি।

অনেক পরিবার সড়কে যানজটের ঝামেলা এড়াতে নদীপথে ভ্রমণ বেছে নিয়েছেন।

মাইনুল ইসলাম নামে একজন লঞ্চ যাত্রী বলেন, মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা এড়াতে লঞ্চকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। এতে কোনো সমস্যার মধ্যে পড়েননি বলে জানান।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক এবং বরিশাল নদী বন্দরের কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে লঞ্চ যাত্রীর সংখ্যা কমেছে।

তবে, তিনি উল্লেখ করেন যে, ঈদে সাধারণত এই সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, 'ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি থাকায়, আমরা এবার অতিরিক্ত যাত্রীচাপ আশা করছি না। তবুও, আমরা আমাদের বিশেষ পরিষেবার অংশ হিসেবে ছয়টি লঞ্চ প্রস্তুত রেখেছি।'

তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা সবসময়ই আমরা প্রাধান্য দিই, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Students’ unions: Legal bars, admin delays stall polls in many universities

Of 56 public universities across the country, only seven have the legal provision for a central students' union

9h ago