থেরাপিস্টের কাছে কিছু লুকাবেন না যে কারণে

মনে রাখবেন, তিনি আপনার থেরাপিস্ট, মাইন্ড রিডার নন।
থেরাপিস্ট
ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত কোনো ধরনের মানসিক সমস্যায় পড়লে, কাজের চাপ বা পারিবারিক সমস্যায় বিপর্যস্ত হলে কিংবা কোনো কারণে অ্যাংজাইটিতে ভুগলে মানুষ থেরাপিস্টের কাছে যায়। থেরাপিস্ট, যিনি সাধারণত হন একদম অপরিচিত মানুষ; তার সঙ্গে দেখা করে তৎক্ষণাৎ কিন্তু মনের আগল খুলে ফেলা যায় না। শুরুতে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে।

কিন্তু এটাও ঠিক যে, নিজের সমস্যার সমাধান পেতে থেরাপিস্টের কাছে সব কিছু খুলে বলা জরুরি। যেমন শরীরের কোনো সমস্যা হলে আমরা খুঁটিনাটি সব বলি চিকিৎসককে।

নতুন একজন থেরাপিস্টের কাছে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার মতো সম্পর্ক তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং, তবে নিজের সুস্থতার জন্য তা জরুরিও।

মনোরোগ বিষয়ক মার্কিন গণমাধ্যম সাইকোলজি টুডের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে থেরাপিস্টের সঙ্গে সেবাগ্রহীতা বা রোগীর সম্পর্ক তৈরির পদ্ধতিগুলো।

সাইকোলজি টুডে বলছে, অন্য সব সম্পর্কের মতো এখানেও যোগাযোগ তৈরির মূল চাবিকাঠি হলো সততা। থেরাপিস্টের কাছে সব খুলে বলার ক্ষেত্রে চারটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন।

১. যে সমস্যার সমাধান প্রয়োজন, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা

হয়তো কিছুদিন আগেই আপনার প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেছে আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে নিজের সঙ্গেই লড়তে হচ্ছে আপনাকে। কিংবা বেড়ে ওঠা সন্তানের অবাধ্যতা দেখে ক্রমাগত প্যানিক অ্যাটাকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আপনি।

থেরাপিস্টের কাছে যখন যাবেন, ঠিক এ কথাগুলোই খুলে বলবেন। 

তার বদলে যদি গিয়ে বলেন, আপনি জীবন নিয়ে অসুখী; তাহলে তিনি কিছুই বুঝবেন না। অর্থাৎ, ঠিক কোন বিষয়টা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, কোন কোন ঘটনায় আপনি উদ্বিগ্ন, সেগুলো স্পষ্ট করে বলতে হবে। তাহলেই তিনি আপনাকে সঠিকভাবে সাহায্য করতে পারবেন।

২. নিজের প্রত্যাশা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন

আপনি যদি আগে কোনো থেরাপিস্টের কাছে গিয়ে থাকেন, তাহলে তো নিশ্চয়ই জানেন যে সেখানে কেন গিয়েছিলেন বা কী চান। তেমনি আপনি যদি প্রথমবার কারও কাছে যান, তার আগে ঠিক করে যাবেন যে, থেরাপিস্টের কাছ থেকে ঠিক কোন সহায়তা চাইছেন।

অর্থাৎ, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বিষয় থেকে উত্তরণে সহায়তা চান, নাকি চান কেউ একজন আপনার মনের কথা শুনুক? কিংবা সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রে নতুন কোনো উপায় জানতে চান কি না বা প্যানিক অ্যাটাক কাটিয়ে চলার পদ্ধতি জানতে চান; সেটা থেরাপিস্টকে জানান।

তাহলে তিনি বুঝতে পারবেন যে কোথায় নজর দিতে হবে কিংবা কোন উপায়ে আপনাকে তিনি সাহায্য করতে পারেন।

৩. অভিজ্ঞতা, খরচ আর সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করতে ভয় পাবেন না

ধরুন, আপনার গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। আপনি তো যেকোনো দোকানে ঢুকে বলবেন না যে সেটি ঠিক করে দিতে হবে। আপনি কোনো মেকানিক শপ বা গ্যাস স্টেশনে গিয়েই গাড়ি ঠিক করানোর বিষয়ে কথা বলবেন, তাই না? সেখানে হয়তো তারা বলবে যে গাড়িতে কী হয়েছে বা কোন ধরনের কাজ করালে গাড়ি আরও ভালো চলবে।

থেরাপিস্ট খোঁজাও অনেকটা একই ধরনের কাজ। বেশিরভাগ থেরাপিস্টেরই ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ থাকে। যেখানে তাদের কাজের ধরন, ঘরানা বা মৌলিক বিষয়গুলো লেখা থাকে। অনেকেই তাদের ওয়েবসাইটে লিখে দেন যে, যত্নের সঙ্গে ও সহায়ক পরিবেশে তারা সেবা দিয়ে থাকেন।

এই কথাটুকুও নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, এটাও কিন্তু আপনার উদ্বেগ কমাতে এবং আপনাকে নিরাপদ বোধ করাতে সাহায্য করবে।

সেজন্য কথা বলুন এবং খুঁজে বের করুন যে আপনি যেসব সমস্যার জন্য থেরাপিস্টের কাছে যেতে চাইলেন, তার সেগুলো নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে কি না। অবশ্য এজন্য থেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে তা নয়, চাইলে টেলিফোনে বা ইমেইলে খোঁজ নিতে পারেন। কিংবা অনলাইনে তার সম্পর্কে যে রিভিউগুলো আছে সেগুলোও পর্যালোচনা করতে পারেন।

৪. নিজেকে গ্রাহক বা ক্রেতা বিবেচনা করুন এবং সে অনুযায়ী মতামত দিন

থেরাপিস্টের কাছে যখন আপনি যাবেন, তখন নিজেকে তার পরিষেবার গ্রাহক বা ক্রেতা হিসেবে বিবেচনা করুন। ভালো-মন্দ সম্পর্কে খোলাখুলি বলুন।

অনেকেই আছেন সরাসরি মন্দ কথা বা যাকে আমরা নেগেটিভ রিভিউ বলি তা দিতে পারেন না। ভাবেন অপরপক্ষের মন খারাপ হবে। কিন্তু আপনি যে সেবার জন্য গিয়েছিলেন বা অর্থ দিয়েছিলেন, সেটি যথাযথভাবে পাওয়া আপনার অধিকার। এটি ভুলে যাবেন না।

বেশিরভাগ থেরাপিস্টই এসব বিষয়ে সংবেদনশীল হন, সমস্যাটি ধরিয়ে দিলে পরবর্তী সিটিংয়ে বা অন্য রোগীর ক্ষেত্রে তারা সে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।

নিজের সমস্যাগুলো সম্পর্কে খোলাখুলি বলার পাশাপাশি থেরাপিস্টের বলা উপায়ে কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে সেটাও তাকে পরের সিটিংয়ে জানান। কারণ আপনি তার কাছে সমস্যার সমাধান করতেই গিয়েছেন, সমস্যা বাড়াতে নয়।

থেরাপিস্টকে সব খুলে না বললে তিনি বুঝতে পারবেন না। মনে রাখবেন, তিনি আপনার থেরাপিস্ট, মাইন্ড রিডার নন। আপনি তার কাছে একটি নির্দিষ্ট সেবা নিতে গিয়েছেন। দুজনের মধ্যে কিছুসময়ের জন্য একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠলে আপনি যেমন সহজেই সব বলতে পারবেন, তিনিও সহজেই সমাধানের পথ বাতলে দিতে পারবেন বা আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

Comments

The Daily Star  | English
Indian Padma Vibhushan industrialist Ratan Tata dies at 86

Ratan Tata no more

The 87-year-old industrialist was admitted to Breach Candy Hospital for age-related ailments

2h ago