ব্রেন টিউমার মানেই কি ক্যানসার? কারণ ও লক্ষণ কী

ব্রেন টিউমার
ছবি: সংগৃহীত

ব্রেন টিউমার মানেই ব্রেন ক্যানসার এমন ভীতি খুব সাধারণ জনমনে। ব্রেন টিউমার কী এবং কখন এটি ক্যানসারের কারণ হতে পারে এই সম্পর্কে জানিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী।

ব্রেন টিউমার কী

অধ্যাপক জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ব্রেন বা মস্তিষ্কের আশেপাশের কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্রেন টিউমার বলে। টিউমার মস্তিষ্ক থেকে উৎপন্ন হতে পারে এগুলো হলো প্রাইমারি বা প্রাথমিক ব্রেন টিউমার। কিংবা শরীরের অন্য অংশ থেকে উৎপন্ন হয়ে ব্রেনে ছড়াতে পারে এগুলো হলো সেকেন্ডারি বা মেটাস্ট্যাটিক ব্রেন টিউমার।

ব্রেন টিউমারের প্রকারভেদ

১. বিনাইন টিউমার, যা নিরীহ টিউমার ক্যানসারযুক্ত নয়।

২. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা ক্যানসার জাতীয় টিউমার

৩. মেটাস্ট্যাটিক টিউমার, যা শরীরের অন্য অংশ থেকে উৎপন্ন হয়ে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।

কেন হয়

ব্রেন টিউমার হওয়ার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে গবেষণায় সম্ভাব্য কিছু কারণ বের হয়েছে। সেগুলো হলো-

১.  জিনগত মিউটেশন এর কারণে ব্রেন টিউমার হতে পারে।

২.  বংশগত কারণে হতে পারে, পরিবারে কারো যদি ব্রেন টিউমার হয়ে থাকে তাহলে অন্যদের ব্রেন টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

৩. রেডিয়েশন বা বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কারণে ব্রেন টিউমার হতে পারে।

৪.কিছু ক্ষতিকারক কেমিক্যাল বা রাসায়নিক এবং বিষাক্ত বস্তুর সংস্পর্শ ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায়।

ব্রেন টিউমার মানেই কি ব্রেন ক্যানসার

অধ্যাপক জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, সব ব্রেন ক্যানসার ব্রেন টিউমার কিন্তু সব ব্রেন টিউমার ব্রেন ক্যানসার নয়।

ব্রেন ক্যানসার বলতে ম্যালিগন্যান্ট ব্রেন টিউমারকে বোঝায় যা দ্রুত বাড়ে এবং আশেপাশের ব্রেন টিস্যুকে আক্রমণ করে। বিনাইন টিউমার ধীরে বাড়ে এবং অন্য টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে না। ম্যালিগন্যান্ট ব্রেন টিউমার বেষি বিপজ্জনক, কারণ এগুলো দ্রুত ছড়ায় এবং জীবনের জন্য হুমকি।

লক্ষণ

১.  ক্রমাগত মাথা ব্যথা হয়, সকালে মাথা ব্যথার তীব্রতা বাড়ে

২.   খিঁচুনি হতে পারে

৩.  বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

৪.    দষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি কমে যায়

৫.   স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়

৬.  ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়

৭.    দুর্বলতা

৮.  ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন হতে পারে

চিকিৎসা

অধ্যাপক জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ব্রেন টিউমারের ধরন, আকার ও অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করে টিউমার শনাক্ত করতে হবে এবং বায়োপসি করে টিউমারের ধরন নিশ্চিত হতে হবে।

চিকিৎসা হিসেবে ব্রেনের টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এছাড়া রোগীকে টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি দেওয়া হয়।

ব্রেন টিউমারের লক্ষণ প্রকাশ পেলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রেন টিউমার শনাক্ত হলে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব। আর সঠিক চিকিৎসা অভাবে সময়ের সঙ্গে রোগের জটিলতাও বাড়বে।

প্রতিরোধ

যেহেতু ব্রেন টিউমার হওয়ার সঠিক কারণ জানা নেই, তাই একে প্রতিরোধের উপায় নির্ণয় করা যায়নি। তবে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যেমন-

১.  রেডিয়েশন বা বিকিরণ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে।

২. ক্ষতিকারক কেমিক্যাল বা রাসায়নিক ও বিষাক্ত বস্তু থেকে নিজের বাঁচানো বা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

৩.  স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৪.  মোবাইল ফোন এবং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সরঞ্জামের ব্যবহার কমাতে হবে।

৫.   পর্যাপ্ত ঘুম এবং দুঃশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে।

৬.  নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Polytechnic students block Tejgaon road over six-point demand

The blockade has caused a long tailback on roads in the neighbouring areas.

14m ago