ব্যাক পেইন কেন হয়, সমাধান কী

ব্যাক পেইন
ছবি: সংগৃহীত

ব্যাক পেইন অতি পরিচিত এক সমস্যার নাম যাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষই কম-বেশি ভুগছেন। ব্যাক পেইন সম্পর্কে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুর কেটিপিএইচের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান এবং এনাম মেডিকেল কলেজের রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ‍্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. হাবিব ইমতিয়াজ আহমাদ।

ব্যাক পেইন কী ও কেন হয়

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, ব্যাক পেইন বা পিঠের ব্যথা সাধারণত আপার ব্যাক বা পিঠের উপরের অংশ এবং লোয়ার ব্যাক বা নিচের পিঠ/কোমর এই দুই অংশে বিভক্ত। আপার ব্যাক বলতে পাঁজরের উপরিভাগ পর্যন্ত অংশ বোঝায় আর পাঁজরের নিচ থেকে নিতম্ব পর্যন্ত অংশটি হচ্ছে লোয়ার ব্যাক।

ব্যাক পেইন পিঠের যেকোনো অংশে হতে পারে, তবে এটি সাধারণত লোয়ার ব্যাক বা কোমরের নিচের অংশে বেশি অনুভূত হয়। কোমর ব্যথাকে অনেকেই ব্যাক পেইন হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। লো ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি।

একেক বয়সে একেক কারণে ব্যাক পেইন হতে পারে। ব্যাক পেইন নানাবিধ কারণে হয়। যেমন-

১. মাংশপেশীতে টান, রগে টান, সায়াটিকা রোগের কারণে হতে পারে।

২. দীর্ঘসময় একই ভঙ্গিতে বসে থাকা, নিচু হয়ে বসে থাকা, ভুল ভঙ্গিতে বসা কিংবা দীর্ঘক্ষণ একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ব্যাক পেইন হতে পারে। একই ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ বসে কিংবা দাঁড়িয়ে যেকোনো কাজ করার কারণেও হতে পারে।

৩. ভারি কাজ, ভারি বস্তু তোলার কাজ করলেও হতে পারে।

৪.  আর্থ্রাইটিস বিশেষ করে স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিসের কারণে হতে পারে।

৫.  কিছু রোগ ও সংক্রমণজনিত কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে।

৬.  বয়স বাড়ার সাথে হাড় ক্ষয় শুরু হয়। হার ক্ষয়ের কারণে ব্যাক পেইন হতে পারে।

৭. ক্যানসার আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ক্যানসার কোমরের হাড়ে ছড়িয়ে পড়ার কারণেও ব্যাক পেইন হতে পারে।

৮. স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন থাকার কারণে হতে পারে।

লক্ষণ

ব্যাক পেইনের প্রধান উপসর্গ হচ্ছে ব্যথা। হালকা থেকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। নড়াচড়া করলে ব্যথা বাড়তে পারে। কোমরে বা পিঠের যেকোনো অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। কখনো কখনো ব্যথা পায়ের দিকে যেতে পারে যেটি সায়াটিকা রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়। সংক্রমণজনিত কারণে ব্যথার সঙ্গে জ্বর হতে পারে। মূলত ব্যাক পেইন কী কারণে হচ্ছে সেটির ওপর নির্ভর করে লক্ষণ প্রকাশ পায়।

তবে ব্যাক পেইনের কিছু রেড ফ্ল্যাগ বা গুরুতর লক্ষণ আছে, যা দেখা দিলে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যেমন-

ব্যাক পেইনের সঙ্গে যদি জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, শরীরের এক পাশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া, স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে না পারা, পায়খানা-প্রস্রাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা, আগে থেকে ক্যানসার বা দীর্ঘমেয়াদী কোনো রোগের ইতিহাস আছে, বয়স ৬৫ বছরের বেশি, বয়স ২০ বছরের কম, কোনো দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়েছেন, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেয়েছেন— এই ধরনের ইতিহাস যাদের আছে এবং সঙ্গে ব্যাক পেইন আছে সেক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসা

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, ব্যাক পেইন কী কারণে হচ্ছে প্রথমে সেটি নির্ণয় করতে হবে। ব্যাক পেইনের চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণ ও ব্যথার তীব্রতার ওপর। যদি দেখা যায় ভারি বস্তু তোলার কারণে, দীর্ঘক্ষণ বসে কিংবা দাঁড়িয়ে কাজ করার কারণে ব্যথা হচ্ছে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। একইসঙ্গে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয় রোগীকে, যেমন- একটানা বসে কিংবা দাঁড়িয়ে না থাকা, নিচু টুল, মোড়া, পিঁড়ি কিংবা নিচু কোনোকিছুতে না বসা, সিঁড়ি ব্যবহার না করা, ভারি বস্তু না তোলা, ভারি কোনো কাজ না করা।

এর পাশাপাশি গরম সেঁক দিতে পারেন ব্যথার স্থানে। বিভিন্ন ধরনের থেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় রোগীকে।

আর ব্যথা যদি আর্থ্রাইটিসের কারণে হয় তাহলে আর্থ্রাইটিসের ওষুধ দিতে হবে, হাড় ক্ষয় থাকলে সেটি বন্ধ করার জন্য ওষুধ দিতে হবে, সায়াটিকার জন্য ব্যাক পেইন হলে তার জন্য ওষুধ, থেরাপি দেওয়া হয়। আর তাতে কাজ না হলে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন পড়ে।

প্রতিরোধ

১. ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। সঠিক খাদ্যাভাস, নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করতে হবে।

২. সিঁড়ি যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করা, উঁচু-নিচু স্থান পরিহার করে চলা।

৩. দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না, মাঝে মাঝে পরিবর্তন করতে হবে।

৪. হাই কমোড ব্যবহার করা।

৫. ভারি বস্তু তোলার সময় সতর্ক থাকা, যতটা সম্ভব না তোলাই ভালো।

 

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat calls for mass rally after Juma prayers demanding AL ban

The announcement came during an ongoing protest programme that began last night in front of Jamuna.

3h ago