উচ্চ রক্তচাপ রোগীর রোজা নিয়ে যে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক

উচ্চ রক্তচাপ রোগীরাও রোজা রাখতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা ছাড়া রোজা রাখা সহজ হবে।
উচ্চ রক্তচাপ রোগীর রোজা সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান।
উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের মধ্যে কারা রোজা রাখতে পারবেন
ডা. আবেদ হোসেন বলেন, অনেকেই মনে করেন উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন না। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল ধারণা। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরাও অন্যদের মতোই রোজা রাখতে পারবেন। এজন্য রোজায় কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনি রোগ থাকলে রোজা রাখা নিরাপদ কি না তা মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ দীর্ঘ সময় খাদ্য ও পানি পান থেকে বিরত থাকার কারণে রোগীর পানিশূন্যতা, হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা শরীরে লবণের তারতম্য হতে পারে। এতে রক্তচাপের রোগীর রক্তচাপ কমে বা বেড়ে যেতে পারে। এ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখা যাবে না।
রোজা রাখায় সতকর্তা
ডা. আবেদ হোসেন বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই। তবে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন-
১. লবণযুক্ত খাবার, তেলে ভাজা ও চর্বিযুক্ত খাবার রক্তচাপ বাড়াতে পারে। তাই ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করতে হবে।
২. ইফতারে ফল, ফলের রস, স্যুপ, সালাদ, সেদ্ধ খাবার, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন ও পূর্ণ শস্য খাওয়া উচিত।
৩. টেস্টিং সল্ট, বিট লবণ, পিংক সল্ট, সস ইত্যাদি খাবারে প্রচুর লবণ থাকে। তাই তেলযুক্ত যেমন- ফাস্টফুড, বিরিয়ানি আর লবণ সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে।
৪. লো ফ্যাট দুধ ও দই খাওয়া যাবে। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ইফতারে পটাশিয়াম ও ইলেক্ট্রোলাইটস সমৃদ্ধ ফল যেমন- তরমুজ, খেজুর, কলা, আনারস, বেল এসব খাবার খাওয়া যেতে পারে।
৫. ইফতারের পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত নিয়মিত পানি পান করতে হবে যাতে শরীর পানিশূন্য না হয়।
৬. সেহরি ও ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
৭. রোজার আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে একবার দেখা করে রক্তচাপ এবং শারীরিক অন্য সমস্যা যেমন- হৃদরোগ বা কিডনি রোগ যা রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলে তার ব্যাপারে পরামর্শ করতে হবে।
৮. রোজার সময় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার সময়ে পরিবর্তন আসবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ করার সময় সমন্বয় করে নিতে হবে।
ডা. আবেদ হোসেন বলেন, রোজা রেখে অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিকভাবে রক্তচাপ মাপতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ করেন, অতিরিক্ত ঘামে তাদের রক্তে লবণের তারতম্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অসুস্থ বোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইলেকট্রোলাইটস পরীক্ষা করতে হবে ও প্রয়োজনে ওষুধের সমন্বয় করতে হবে।
রমজান মাসে রাত না জেগে আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করতে হবে। ঘুম পর্যাপ্ত না হলে রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে। দিনের বেলা কাজের ফাঁকে কিছু সময় বিশ্রাম বেশ উপকারী। যারা নিয়মিত ঘুমের ওষুধ সেবন করেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের সমন্বয় করবেন।
ধূমপান ও তামাক পাতার ব্যবহার রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। ইফতার শেষে ধূমপান উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই রমজান মাসই ধূমপান ত্যাগের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়।
Comments