হৃদরোগীদের রোজা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ

হৃদরোগীদের রোজা
ছবি: সংগৃহীত

রোজার সময় নিয়মিত খাদ্যাভাস ও জীবনাচারে পরিবর্তন আসে। অধিকাংশ হৃদরোগীর পক্ষেই রোজা রাখা সম্ভব। তবে অন্যান্যদের তুলনায় রোজা রাখার বিষয়ে তাদের কিছু বিষয়ে সর্তক হতে হবে। হৃদরোগীদের রোজা সম্পর্কে জানিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন।

হৃদরোগী কারা রোজা রাখতে পারবেন

অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, হৃদরোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তার মধ্যে অধিকাংশ হৃদরোগীরাই রোজা রাখতে পারেন।

হার্টের বিভিন্ন ধরনের রোগ থাকে। যেমন- হার্টের ওপরের কাভারিং পেরিকার্ডিয়াম বলে তার কিছু রোগ থাকে, মায়োকার্ডিয়াম বা হার্টের পেশীর কিছু রোগ থাকে, হার্টের রক্তনালি থাকে করোনারি আর্টারি যে রক্তনালির ব্লকের জন্য হার্ট অ্যাটাক হয় এ ধরনের কিছু রোগ থাকে। আবার হার্টের ইলেকট্রিক সাপ্লাই আছে যেটির জন্য হার্টবিট কমে যায় সেগুলোর কিছু রোগ থাকে। এর মধ্যে বিশেষ করে যাদের হৃদযন্ত্রের পাম্পিং ক্ষমতা কম থাকে তাদের জন্য রোজা রাখা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

হৃদযন্ত্রের পাম্পিং ক্ষমতা কম সাধারণত বিভিন্ন কারণে হয়। ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি অথবা ইসকেমিক ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি রোগীদের হার্ট বা হৃদযন্ত্রের পাম্পিং ক্ষমতা কম থাকে এবং হার্ট ফেইলিউর থাকে। যেসব রোগীদের হৃদযন্ত্রের পাম্পিং ক্ষমতা কম থাকে অর্থাৎ ইজেকশন ফাংশন ৩০ এর নিচে থাকে, তাদের সমস্যাকে সিভিয়ার এলভি ডিসফাংশন বলা হয়। এসব রোগীদের পানি পানের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, ২৪ ঘণ্টায় ১ বা দেড় লিটারের বেশি পানি পান করতে পারবেন না।

কোনো রোগী যদি ১২ ঘণ্টায় ১ বা দেড় লিটারের বেশি পানি পান করেন তাহলে তার হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বাড়তে পারে এবং বাকি ১২ ঘণ্টা পানি পান না করে পানিশূন্যতা হতে পারে।

সেক্ষেত্রে যাদের হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা একেবারেই কম এবং হার্ট ফেইলিউর থাকে তাদের ক্ষেত্রে রোজা না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। হৃদরোগে যদি সমস্যা বেশি না হয় তাহলে রোজা রাখবেন, আর খারাপ লাগলে কোনো ধরনের শারীরিক অসুবিধা বিবেচনায় রোজা রাখবেন না।

সতকর্তা

বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগের রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। তবে অবশ্যই কিছু নিয়ম ও সতকর্তা মেনে চলা জরুরি।

১. ইফতারের সময় অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়াই ভালো।

২. চর্বিজাতীয় ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

৩. অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। একবারে প্রচুর পরিমাণে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪. চিড়া, টক দই, ডায়াবেটিস না থাকলে গুড় অথবা চিনি, কলা দিয়ে ইফতার করা যেতে পারে। শরীরের জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

৫. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে যাতে দিনের বেলায় ডিহাইড্রেশন না হয়। ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত সময়ে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। আর যাদের হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কম তারা চিকিৎসকের পরামর্শে এক থেকে দেড় লিটার পানি সমানভাবে বন্টন করে পান করবেন ইফতার থেকে সেহেরি অবধি। পানি একবারে বেশি পান করা যাবে না।

৬. হৃদরোগীদের কিছু ওষুধ ভরাপেটে এবং সকাল ও বিকেলে খেতে হয়। রোজার সময় সেহেরি ও ইফতারের সময় কোন ওষুধ কীভাবে খাবেন সেটি চিকিৎসকের পরামর্শে সমন্বয় করে নিতে হবে।

৭. অনেক হৃদরোগীর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে। তাদের অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা এবং কোন সময় নেবেন সেটি ঠিক করে নিতে হবে রোজা রাখার আগে।

৮. হৃদরোগীদের রোজা রাখার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

5h ago