পঁচাত্তর-পরবর্তী দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত সংকলন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর কঠিন এক প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির ওপর নেমে আসে অত্যাচার নির্যাতন। সারাদেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থানও হত্যাযজ্ঞে বিপর্যস্ত সারাদেশ। সেই ভয়াবহ সময়েও আস্তে আস্তে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর কঠিন এক প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির ওপর নেমে আসে অত্যাচার নির্যাতন। সারাদেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থানও হত্যাযজ্ঞে বিপর্যস্ত সারাদেশ। সেই ভয়াবহ সময়েও আস্তে আস্তে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। 

রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি কবি-লেখক, শিল্পীরাও সামিল হন এই প্রতিবাদে। ১৯৭৭ সালের দিকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত লেখা প্রকাশ করা শুরু হয়। তখন মূলত তরুণদের সাহসী উদ্যোগে কয়েকটি প্রতিবাদী সংকলনও প্রকাশিত হয়। সেই সংকলনগুলো নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন। 

মাসিক সমকাল  

কবি সিকান্দার আবু জাফর প্রতিষ্ঠিত মাসিক পত্রিকা 'সমকাল' প্রকাশিত হতো ঢাকার মতিঝিলের সমকাল মুদ্রায়ণ ও সমকাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে। তার মৃত্যুর পর ১৩৮৪ বঙ্গাব্দের আষাঢ় পর্যন্ত সমকাল পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কবি হাসান হাফিজুর রহমান। পরবর্তীতে ইসমাইল মোহাম্মদ (লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক উদয়ন চৌধুরী) ছিলেন এ পত্রিকার সম্পাদক। তখন সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন কথাসাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদদীন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর এই পত্রিকার ভূমিকা ছিল অসাধারণ। তখন সমকাল অফিসে কবি- লেখকরা সমবেত হতেন। বিশেষ করে ১৯৭৭-১৯৮০ এই সময়কালে অনেকগুলো প্রতিবাদী লেখা প্রকাশ করেছে সমকাল; যা সে সময়ের প্রেক্ষাপটে  ছিল অচিন্তনীয়।

১৩৮৩ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে (১৯৭৭ সালে) সমকাল পত্রিকার দ্বাদশ সংখ্যায় ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হয়েছিল আবুল ফজলের গল্প 'মৃতের আত্মহত্যা'; যা ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রথম প্রতিবাদী গল্প। পরে তিনি 'নিহত ঘুম' ও 'ইতিহাসের কণ্ঠস্বর' নামে সমকালে আরও দুটি প্রতিবাদী গল্প লিখেছিলেন। এ সময়ে সমকাল পত্রিকায়  বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ও সামরিক শাসন বিরোধী  অনেক প্রবন্ধ ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।

কবিতা লিখেছেন হাসান হাফিজুর রহমান, মহাদেব সাহা, মোহাম্মদ রফিক, নির্মলেন্দু গুণ, শাহজাহান চৌধুরী, ত্রিদিব দস্তিদার, আতাহার খান, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী প্রমুখ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ‘সমকাল’ পত্রিকার ভূমিকা ছিল অসাধারণ। ছবি: সংগৃহীত

জয়ধ্বনি 

এই সংকলনটি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক প্রকাশিত; ১৯৭৭ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় (১৩৮৩ বঙ্গাব্দ। এটি সম্পাদনা করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছড়াকার আলতাফ আলী হাসু। প্রচ্ছদ আঁকেন কাইয়ুম চৌধুরী। এতে অধ্যাপক আবুল ফজলের লেখা 'একুশ মানে মাথা নত না করা'সহ ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমানের লেখাসহ বেশ কয়েকটি গদ্য-পদ্য প্রকাশিত হয়। কামাল চৌধুরীর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা 'জাতীয়তাময় জন্মমৃত্যু' নামের কবিতাটি এ সংকলনে প্রকাশিত হয়।

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যতরুণ গোষ্ঠী ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ সংকলনটি প্রকাশ করে। কবি শামসুর রাহমানের ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানকালে লেখা কবিতার লাইন 'এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়' দিয়ে  সংকলনের নাম দেওয়া হয়। এটি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তী সময়ে তাকে নিবেদিত প্রথম প্রকাশিত সংকলন; যা বাংলাদেশে কবিদের সমন্বিত প্রতিবাদের সাক্ষ্য হিসাবে পরিগণিত। এখানে প্রতিটি কবিতা ও ছড়া বঙ্গবন্ধুকে  নিয়ে লেখা।

এই সংকলনে প্রকাশিত একমাত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের কবিতা ছাড়া সব লেখাই ছিল নতুন। এটি প্রকাশের নেপথ্যে মূল উদ্যোক্তা ছিলেন দৈনিক সংবাদের 'খেলাঘর' পাতার তৎকালীন সম্পাদক আবদুল আজীজ। তার সঙ্গে লেখা সংগ্রহ ও অন্যান্য দায়িত্বে ছিলেন আলতাফ আলী হাসু, সিরাজুল ফরিদ, ভীষ্মদেব চৌধুরী, লুৎফর রহমান রিটন, নূর-উদ্‌-দীন শেখ, ফেলু বাসিত। প্রচ্ছদ আঁকেন মানিক দে।

সংকলনটির রঙিন প্রচ্ছদে কয়েকটি শেডসহ বঙ্গবন্ধুর চশমার চিত্র আঁকা ছিল। এ সংকলনটির প্রকাশ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বাবুবাজারের একটি লেটার প্রেসে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মুদ্রণ কাজ সম্পন্ন হয়। এটিই প্রথম সংকলন; যেখানে সকল কবি-ছড়াকার স্বনামে কবিতা লেখেন। মোট ৩০ জন কবি ও ছড়াকার এই সংকলনে লিখেছেন।

এর মধ্যে কয়েকজন গল্পকার ও ঔপন্যাসিক ছিলেন। তারা হলেন- অন্নদাশঙ্কর রায়, দিলওয়ার, হায়াৎ মামুদ, রাহাত খান, মাশুক চৌধুরী, ফরিদুর রহমান বাবুল, সুকুমার বড়ুয়া, মোহাম্মদ মোস্তফা, মাহমুদুল হক, আমিনুল ইসলাম বেদু, নির্মলেন্দু গুণ, তুষার কর, আলতাফ আলী হাসু, মোহাম্মদ রফিক, আবদুল আজীজ, শান্তিময় বিশ্বাস, আখতার হুসেন, ভীষ্মদেব চৌধুরী, জিয়াউদ্দীন আহমদ, জাহিদুল হক, ইউসুফ আলী এটম, সিরাজুল ফরিদ, ফজলুল হক সরকার, লুৎফর রহমান রিটন, নূর-উদ্‌-দীন শেখ, মহাদেব সাহা, জাফর ওয়াজেদ, ওয়াহিদ রেজা, কামাল চৌধুরী ও খালেক বিন জয়েন উদ্দীন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যতরুণ গোষ্ঠী ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ সংকলনটি প্রকাশ করে। ছবি: সংগৃহীত

এপিটাফ

বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় শাহাদত বার্ষিকী সংখ্যা। এর সম্পাদক ছিলেন মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী। প্রচ্ছদ আঁকেন মিনার মনসুর। ৩৮৬ সিরাজুদ্দৌলা সড়ক, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম থেকে ১৫ ই আগস্ট ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সৌজন্যে প্রকাশিত এ সংকলনের প্রকাশক ছিলেন বশির উদ্দিন মাহমুদ। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৮। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম থেকে এটিই প্রথম  প্রকাশিত সংকলন।

কার্টিজ পেপারে কাঠের ব্লকে মুদ্রিত প্রচ্ছদজুড়ে ছিলো বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ছবি। নিউজপ্রিন্টে লেটারপ্রেসে মুদ্রিত ডিমাই ১/৮ সাইজের এ সংকলনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৪টি প্রবন্ধ, একটি সম্পাদকীয় (পুনর্মুদ্রিত) এবং ১২টি কবিতা ছাপা হয়। লেখেন ওবায়েদ-উল হক, ড. হুমায়ুন কবির (রাজীব হুমায়ুন), রঞ্জন চৌধুরী, খোরশেদ আলম সুজন। যাদের কবিতা ছাপা হয় তারা হলেন- ইউসুফ পাশা, তারাপদ রায়, সানাউল হক খান, ময়ূখ চৌধুরী, মুশফিক হোসাইন, নিতাই সেন, মনসুর আলী মিনার, মৃণাল বড়ুয়া, নাজিম উদ্দিন নাজু, শাহাবুদ্দীন নাগরী, দিলওয়ার চৌধুরী, ওমর আলী ও আসাদ মান্নান।

পৃথিবীর কাছে নোটিশ 

১৯৭৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের 'ড্যাফোডিল এফিউসন গ্রুপ' সংকলনটি প্রকাশ করে। এতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে  অনেকগুলো কবিতা প্রকাশিত হয়। এই কবিতা সংকলনে সম্পাদকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। নেপথ্যে সম্পাদনা করেছেন ওয়াহিদ রেজা ও হালিম আজাদ। নারায়ণগঞ্জের শাহেদ আলী মজনুর অনুপম মুদ্রায়ণে এটি ছাপা হয়। তখন প্রেসে পুলিশ হানা দিলে তারা ম্যাটার  লুকিয়ে ফেলেছিলেন।

এখানে লেখেন- অন্নদাশঙ্কর রায়, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, রাহাত খান, ওয়াহিদ রেজা, ইউসুফ পাশা, শিখা চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক, বজলুর রায়হান, বাকী বিল্লাহ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, নজরুল ইসলাম মিন্টু, মনীন্দ্র ঘটক, হালিম আজাদ, ইউসুফ আলী এটম, আনিসুর রহমান, শামিমা বেগম, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, গৌতম সরকার, রফিউর রাব্বি, মেহেদী ইকবাল, অশোক গুহ, নাহিদ আজাদ, ফজলুল বারী, মোঃ আসাদুজ্জামান, নিরঞ্জন রায় নিরু ও স্বপন দেব।

বঙ্গবন্ধু

১৯৭৯ সালের ১৫ ই আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রকাশিত । আওয়ামী লীগের  শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক  এস এম ইউসুফ এটি সম্পাদনা করেন। প্রকাশক দলের তৎকালীন প্রচার  সম্পাদক সরদার আমজাদ হোসেন। 

স্মরণিকায় উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন সৈয়দা জোহরা তাজুদ্দিন, আবদুল মান্নান, আবদুল মোমিন তালুকদার, কোরবান আলী, আবদুস সামাদ আজাদ, আবদুল মোমিন, জিল্লুর রহমান ও কামরুজ্জামান। পদাধিকারবলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। সংকলনটির শুভেচ্ছা মূল্য রাখা হয়েছিল ১০ টাকা। এটি মুদ্রিত হয় মতিঝিলের মধুমতি মুদ্রণালয় থেকে।

৬৪ পৃষ্ঠার এ স্মরণিকার শুরুতে সম্পাদকীয়র পর ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ মুদ্রিত হয়। এতে আবুল ফজল, কবীর চৌধুরী, আবদুল মতিন চৌধুরী, মযহারুল ইসলাম, দূর্গাদাশ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অজয় রায় ও আলী আকসাদের লেখা প্রকাশিত হয়। কবিতা লেখেন সুফিয়া কামাল, আসাদ চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, মুহম্মদ নুরুল হুদা, ত্রিদিব দস্তিদার, ফিউরি খোন্দকার, কামাল চৌধুরী ও এম কোরবান আলী।

বাতাসে লাশের গন্ধ

আবু হাসান শাহরিয়ার ও সৈয়দ আল ফারুকের সম্পাদনায় আরামবাগের খবর প্রকাশনী থেকে ১৯৭৯ সালের ১৫ আগস্ট প্রকাশিত হয় এ সংকলন। এর প্রকাশক ছিলেন মিজানুর রহমান মিজান। সহ-সম্পাদক ছিলেন লুৎফর রহমান রিটন, আনওয়ারুল কবীর বুলু, নাসির আহমেদ ও মনিরা  কায়েস। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মাসুক। সংকলনের শিরোনাম নেওয়া হয় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতা থেকে। আরামবাগের ফ্লোরা প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত হয় সংকলনটি।

সংকলনটিতে যাদের কবিতা ও ছড়া অন্তর্ভূক্ত হয় তারা হলেন- দিলওয়ার, অরুণাভ সরকার, আসাদ চৌধুরী, রাহাত খান, জুলফিকার মতিন, মোহাম্মদ রফিক, ফজল-এ-খোদা, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, ফারুক মাহমুদ, মাহমুদুল হক, আবু হাসান শাহরিয়ার, সৈয়দ আল ফারুক, নাসির আহমেদ, লুৎফর রহমান রিটন, আনোয়ারুল কবীর বুলু, খালেক বিন জয়েন উদ্দীন, মনিরা কায়েস, আমীরুল ইসলাম, মাহমুদ উল্লাহ, মাশুক চৌধুরী, শামসুল ইসলাম, সিরাজুল ফরিদ, লতিফ মোহম্মাদ, তুহীন রহমান, মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম, রোকেয়া বেগম কেয়া, আতাউল করিম, সাইফুল্লাহ্‌ মাহমুদ দুলাল, আসলাম সানী, আনিসুর রহমান আখন্দ, যৌবন চৌধুরী, মনজুরুর রহমান, রিটন রহমান ও ফজলুল হক সরকার।

শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা থেকে প্রকাশিত এই সংকলনটি সম্পাদনা করেন মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী। প্রচ্ছদ আঁকেন খালিদ আহসান। প্রকাশকাল ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর। প্রকাশক এপিটাফ প্রকাশনী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩২।

বঙ্গবন্ধুর চতুর্থ শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত এ-গ্রন্থটি ছিল পঁচাত্তরপরবর্তী সময়ে জাতির পিতাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রথম স্মারকগ্রন্থ। অফসেটে ৪ রঙে মুদ্রিত । সাদা কাগজে (কেপিএম) লেটার প্রেসে মুদ্রিত এ স্মারকগ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মোট ১০টি প্রবন্ধ/গদ্য এবং ২৫টি কবিতা ছাপা হয়েছিল।

এতে প্রবন্ধ ও গদ্য লেখেন ড. মযহারুল ইসলাম, ড. আবদুল মতিন চৌধুরী, কবীর চৌধুরী, ইসমাইল মোহাম্মদ, সন্তোষ গুপ্ত, স্বপন দত্ত, শিশির দত্ত, খোরশেদ আলম সুজন, ইসরাইল খান ও জমীর চৌধুরী। 

কবিতা লেখেন অন্নদাশঙ্কর রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আসাদ চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, জাহিদুল হক, ওমর আলী, শাহাদাত বুলবুল, ফজলুল হক সরকার, শামসুল আলম সাঈদ, খালিদ আহসান, কামাল চৌধুরী, মিনার মনসুর, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, জাফর ওয়াজেদ, দিলওয়ার চৌধুরী, আলমগীর রেজা চৌধুরী, হারুন রশিদ, নাজিম হাসান, সুজাউদ্দিন কায়সার, বিনতা শাহীন, সনজীব বড়ুয়া, রবীন্দ্রনাথ অধিকারী, ইকবাল করিম ও স্বপন দও।

১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা থেকে প্রকাশিত এই সংকলনটি সম্পাদনা করেন মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

শোক 

আসলাম সানী ও ইউসুফ হাসানের সম্পাদনায় ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় এই সংকলন। সংখ্যা ছিল ৩টি।

লেখেন কামাল চৌধুরী, আলমগীর রেজা চৌধুরী, আসলাম সানী, লুৎফর রহমান রিটন, মাশুক চৌধুরী, জাফর ওয়াজেদ, রবীন্দ্রনাথ অধিকারী, ইউসুফ হাসান, মুহম্মদ নুরুল হুদা, সপ্তক ওসমান, ফজলুল হক সরকার, ফারুক মাহমুদ ও ত্রিদিব দস্তিদার। কবি শামসুর রাহমান অনূদিত পাবলো নেরুদার কবিতা 'শোক' এর তৃতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

আবার যুদ্ধে যাবো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বিশেষ বুলেটিনটি প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালের ১৭ আগস্ট। সম্পাদক ছিলেন মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী। সাক্ষাৎকার গ্রহণে সহযোগিতা করেন মুজাহিদ শরীফ।

১০ পৃষ্ঠার এই বুলেটিনে শোকের প্রতীক হিসেবে প্রথম ও শেষ প্রচ্ছদ ছিল সম্পূর্ণ কালো। এতে সেই সময়ের দেশবরেণ্য তরুণ প্রজন্মের বহু রাজনীতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়। 

তারা হলেন- আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, সুফিয়া কামাল, আবদুল মতিন চৌধুরী, সন্তোষ গুপ্ত, কবীর চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, আবদুল জব্বার, কলিম শরাফী, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস, বেলাল চৌধুরী, দেবদাস চক্রবর্তী, নির্মলেন্দু গুণ, কবীর আনোয়ার, আবু জাফর শামসুদ্দীন, রাহাত খান, শিশির দত্ত, কামাল চৌধুরী, শাহাদাত বুলবুল, আহমদ আজিজ, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, জমীর চৌধুরী, আলী আকসাদ, আলী যাকের, স্বপন দত্ত ও অজয় রায়। 

বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এই বুলেটিনে মুদ্রিত প্রতিটি বক্তব্যই ছিল স্বাক্ষর সম্বলিত।

Comments