জন্মদিনের শ্রদ্ধা 

আজন্ম অনটনের এক কবি

"দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ"- এই বলে যে কবি শুরুতেই নিজের তকমা আঁটিয়ে দিয়েছেন তাকে আপনি যত ভাবেই অনুধাবন করুন না কেন, কবি তো তা স্বীকার করে নেবেন না। যদিও এমন স্ব-বিরোধী উপমা আর হয়না!

যাপিতকালে এমন স্বেচ্ছাধীন আনন্দময় জীবন খুব কম কবি-সাহিত্যিকের ভাগ্যে জুটেছে। তিনি যত দুঃখ দুঃখ করে কেঁদেছেন , লোকে তাকে তত তত ভালোবাসা দিয়েছে। বেদনা প্রশমনের যাবতীয় উপাদানে তার জীবন লোকে ভরিয়ে দিয়েছে। আমরা দেখেছি সেসব নির্জলা ভালবাসা। তবু তার হাহাকার থামেনি। অথচ, জীবনকে যথেচ্ছ ছুঁয়ে-ছেনে-চেখে ঈর্ষনীয় এক জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি। ইদানীং তার আফসোস বোধ কিছুটা তীব্র হয়েছে। কিঞ্চিত কল্পনা বিলাসও হয়তো তা। সুখকে অস্বীকার করবার এক ধরনের অনীহাও আছে। সেটা তার বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার কারণেই হয়তো এমত বোধ হয় আমার।

হ্যাঁ, কবির আজকাল শরীরটা বিগড়ে গেছে ভীষণ। দীর্ঘকাল শরীর নিয়ে খাম-খেয়ালী করবার একটা খেসারত তো আছে! এ নিয়ে বিষণ্ণতা রোগে ধরেছে তাকে। যৌবনের কবি বিমর্ষ বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়ে মুহ্যমান। জীবনের প্রতি রুচি হারিয়েছেন যেন। হঠাৎ হঠাৎ সেই নিস্তরঙ্গ পুকুরে ফেলে আসা সময় প্রবল ঘাই মারে। আঁকুপাকু করে বেরিয়ে আসতে চান জরা থেকে। আর তার অসংখ্য ভক্তকুল অসহায় চোখে চেয়ে চেয়ে তা দেখে মরমে মরে। আমি দেখি দুই পক্ষকেই। দেখাই আমার পেশা, নেশাও বটে! ভাবি, আমার কি হেলাল ভাইকে ঈর্ষা করা উচিত? কই আমিও তো একাকী, কিন্তু লোকে তো আমার জন্য ভাবিত নয়।  আমাকে কে দেখভাল করে, কে যত্ন আত্তি করে সে ভেবে তো কারো চোখে জল আসেনা। বরং হেলাল ভাইয়ের প্রেমিকারা এখনো তাকে ঘিরে বসে থাকে। বন্ধুরা আফসোস করে ঘুরে বেড়ায়। তবু কেন লোকের এত শোক তার কথা ভেবে! তবে কি এই শোকের ফল্গুধারা তিনিই বইয়ে দিয়েছেন কবিতার ইমোশনাল ব্ল্যাক-মেইলিংয়ে?

তার সকল ভক্তই তার কবিতার ছত্র মুখে মুখে নিয়ে ফেরে। কবি যা বলেন তাই বিশ্বাস করে। কবি জীবনের এ এক বিশাল অর্জন। এক একটি কবিতার পঙক্তিকে বেদবাক্যে পরিণত করতে পারা । তাই করে গেছেন হেলাল ভাই নিপুণ উদাসীনতায়। তার পিওরিটির জায়গাটা ঠিক ওইখানে—যা তিনি করেছেন তা এক ভণিতা বিহীন যাপন, কি কবিতায়, কি দৈনন্দিনতায়।

হেলাল হাফিজের সঙ্গে আমার সম্পর্কের সূত্রপাত সেই আশির দশকে, সদ্য কৈশোরে। আমাদের সময় এমনি এমনি সব জানা হয়ে যেত। আর হেলাল হাফিজ তো তখন আন্দোলন আর তারুণ্যের আইকন হয়ে বসে আছেন। "এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়"- এ ছাড়া কোন আন্দোলন হয়না, গ্রাফিতি হয়না, আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়না, রাজনৈতিক বক্তৃতা হয়না, অন্যায়ের প্রতিবাদ হয় না… আমরা জন্মেই দেখেছি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি। পুরো সময় এরশাদ বিরোধী আন্দোলন। আর যে রাজনৈতিক দল, যে সাংস্কৃতিক আন্দোলনই হোক না কেন-- সেজন্য চাই হেলাল হাফিজের "নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়"। উচ্চমাধ্যমিকে  পড়বার সময় জড়িয়ে গেলাম ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে। আমার কলেজ বদরুন্নেছা হওয়ায়, টিএসসি'র যে কোন কালচারাল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারতাম।

শুরুটা হলো ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে। যে কবিতাটি পাঠ করতে হয়েছিলো তা সেই বিখ্যাত "নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়"। একজন কবির কবিতা যখন পাঠ হয়, তখন সেই পাঠকারী কবির হয়ে বার্তাটি পৌঁছে দেয় জনসম্মুখে। ১৬ বছর বয়সে আমি হেলাল ভাইকে রিপ্রেজেন্ট করলাম সমাজ-রাজনীতি-সংস্কতির যুদ্ধে সামিল হয়ে। ফলে ওই কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে যা হলো, তা নিজের অবস্থান জানানোর কাজটি করে ফেলা। এবং আমার কাছে তাইই কবির সঙ্গে একধরনের যোগসূত্র নির্মাণ হয়ে যাওয়া। 

এরপর এলো দুরন্ত যৌবন আর সেইসঙ্গে তুমুল প্রেম। সেসময় কবিতা ছাড়া প্রেম ভাষা পেতো না। চিঠি বা চিরকুটে প্রেমিকযুগল কবিতার লাইন লিখে পাঠানোর রীতি ছিলো। "তোমার জন্য সকাল-দুপুর/ তোমার জন্য সন্ধ্যা/ তোমার জন্য  সকল গোলাপ এবং রজনীগন্ধা।' সেই সঙ্গে একগুচ্ছ ফুল ছিলো সেকালে উইশ করবার ফ্যাশন। এমন কি প্রেম নিবেদিত হতোও কবিতায়—"তোমাকেই শুধু তোমাকে চাই/ পাবো?" হেলাল হাফিজের এক লাইনই যথেষ্ট ছিলো প্রস্তাব পেশ করবার জন্য। অভিমান বলি, বিরহ বলি বাংলার 'হাফিজ' ছাড়া আমাদের গতি ছিলো না। "আমাকে পাবে না খুঁজে কেঁদে-কেটে, মামুলি ফাল্গুনে।" "আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি" কিংবা "ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মত খুব ব্যথিত ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে!" তারুণ্যের প্রেমের ভাষা তিনি রপ্ত করতে পেরেছিলেন তার কাব্যে বলেই আজো তা টিকে আছে তরুণ পাঠকের মাঝে।   

হেলাল হাফিজের কবিতার বিশ্লেষণ করা আমার কাজ নয়। এজন্য আছেন তাবড় তাবড় সমালোচক। আমি বরং কবির মনোভূমি ধরে টান দেবার চেষ্টা করি। নির্মাতা হিসেবেই তার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। ফলে যা দেখা এবং অনুধাবন তা সকলি নির্মাতার চোখে। এদেশের সৃষ্টিশীল বহু মানুষের সাক্ষাৎকার কিংবা তাদের ওপর প্রামাণ্যচিত্র করবার সুযোগ হয়েছে। এ কাজটি আমি আগ্রহ নিয়েই করে থাকি। তাদের জানবার, বুঝবার একটা অন্বেষণ বলা যায়। কবিরা বাদ যাননি এই তালিকা থেকে।

শামসুর রাহমান, নির্ম্লেন্দু গুণ, আল মাহমুদ সকলের সাক্ষাৎকার নেবার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার বন্ধু তালিকায় বেশীরভাগ দখল দিয়ে আছে এসময়ের কবিরা। কিন্তু, সেই ২০০৫-৬ এর দিকে একটা ডকুমেন্টারির কথা ভাবতাম- "কবি না কবিতা" শিরোনামে।

রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, আল মাহমুদদের নিয়ে একটা পোয়েটিক ফিল্ম। 'কে বেশী পাগল- কবি না কবিতা/ প্রয়োজন নেই তার হিসেব নেবার/ ঘুমোও বাউন্ডুলে, ঘুমোও এবার" – ছিলো সে ছবির থিম সং। শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা কবীর সুমনের গান। এ কাজ সে কাজের চাপে কাব্য করা হয়নি আমার ক্যামেরায়। ১৭' সালের দিকে এসে ভাবনাটা পালটে গেল। তিন ধরনের জীবন যাপনকারী, তিন রকম তাদের বয়েস এরকম তিন কবিকে নিয়ে ভাবলাম এবারে। 
হেলাল হাফিজ, ইরাজ আহমেদ এবং হিজল জোবায়ের। শেষোক্ত দু'জন আমার বন্ধু এবং চেনা। রিসার্চ করবার দরকার নেই। কিন্তু, হেলাল হাফিজের সঙ্গে তখন অব্দি দেখা হয়নি। ইরাজ ভাই ফোন করে দিলেন আমার হয়ে। তো গেলাম এক দুপুরে প্রেস ক্লাবে লিভিং লিজেন্ড হেলাল হাফিজের সঙ্গে দেখা করতে।

প্রামাণ্যচিত্রে প্রোটাগনিস্ট সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের দিনটা খুব জরুরি। অনেকটা ভাগ্য নির্ধারণের মত। নির্মাতার যেমন তার চরিত্রকে রিড করবার বিষয় থাকে, তেমনি চরিত্ররাও নির্মাতাকে বুঝে নেয়। ব্যাপারটা পারস্পরিক। হয় একে অপরকে আস্থায় নেয়, নয়তো রিজেক্ট করে। হেলাল ভাই সম্পর্কে এতদিন যা শুনেছি, জেনেছি তাতে করে আমার শঙ্কা ছিলো উনি আমাকে নির্মাতা হিসেবে মেনে নেবেন কি না। তার কবিতার জগতের নারীরা চারু এবং তাদের অবস্থান প্রেমিকা—যার কোনটাই আমি নই কোনভাবেই। আলাপের কিছুক্ষণ পরেই তিনি আমায় বোন বলে সম্বোধন করলেন। কবিরা তো অন্তর্যামী হয়ে থাকেন বলা হয়, হয়তো সেই বুঝেই আমাকে বোন ডেকে সহজ করে নিলেন সম্পর্কটা। কিংবা, তার মানব পাঠের অভিজ্ঞতায় আমি 'বোন' ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত... কিন্তু, যাই হোক, আমি সেদিন থেকেই তার সঙ্গে খুব নির্মল বোধ করি।

তার কবিতার একটি লাইন- "বেদনা বোনের মত" আমার খুব প্রিয়! আমিও বেদনাকে সহোদরার মতই উপলব্ধি করি। তিনিও হয়তো তার সঙ্গে কোথাও কানেকটেড বোধ করেছেন। আর বেদনাকে কেন্দ্র করেই যখন তার স্বঘোষিত আবর্তন। এ এক স্বেছানির্মিত মোহ যেন! যেন তিনি নিজেকে দুঃখী ভাবতেই সুখী বোধ করেন।  যেন বেদনা তাকে ছেড়ে গেলে কি নিয়ে থাকবেন। মানছি, শৈশবের মা হারাবার বেদনার ট্রমা আজো তাকে ছেড়ে যায়নি। জেদি শিশুর মতই সেই বেদনা বোধকে আকড়ে ধরে আছেন।

অসংখ্য নারীর প্রেম, স্নেহ, মায়ার গল্প তাকে ঘিরে শুনেছি। তিনি কোন বন্ধনেই আবদ্ধ হননি। কেন? ফিলিং অব ইনসিকিউরিটি? মা'কে হারিয়ে ফেলার পর নারীকে ভয়? যাকে আঁকড়ে ধরবেন, সেও যদি তাকে ছেড়ে চলে যায়—সেই আগাম নিঃসঙ্গতার প্রতি চিরন্তন ভয়? নাকি আজন্ম এক হুলুস্থুল মেলানকলিক হয়েই তার জন্ম? সেই বিষণ্ণতার গন্ধ লেগে থাকে তার কবিতার গায়ে। আর সে সকল কবিতাকে তিনি দান করে দেন আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।

মিথিক্যাল চরিত্র হেলাল হাফিজ এক মস্ত বোহেমিয়ান এ কথা জগতের সকলের জানা। মানুষের ভেতর হুলুস্থুল অনটন কাজ করে সেই বোহেমিয়ান জীবনের হাতছানিতে। সংসারি মানুষ তা পেরে ওঠেনা। কিন্তু, ইচ্ছাটা আগুনের নীল শিখার মত জ্বলতে থাকে। হেলাল ভাইকে লোকে অনেক সময় তার কবিতার চেয়েও তার বোহেমিয়ান সত্তাকে অধিক ভালোবেসে ফেলে। তার ভেতরে নিজেদের খুঁজতে চায় অথবা খুঁজে  পায়। ফলে এই যে ১০০'র কম কবিতা লিখে মানুষের মনের কবি হয়ে ওঠা। এটাও একটা কারণ বলে ভ্রম হয়। নইলে এ মাটিতে কম শক্তিশালী কবির তো জন্ম হয়নি। তার সকল কবিতা যে খুব পোক্ত, খুব শানিত, খুব মার্গীয় তাও নয়। বরং তার কবিতার চেয়ে কবিতার লাইন অধিক জনপ্রিয়। সেসব এত মোক্ষম আর এত প্রবল যে আমরা তাকে পারিনা এড়াতে।  

তো সেই ব্যাপক বোহেমিয়ান পুরুষ কবির যখন সাক্ষাত পেলাম, তখন তিনি প্রায় নির্বাণ লাভকারী এক বিনয়ী মানুষ। পরিপাটি গোছালো এবং জেন্ডার সেন্সেটিভ তো অবশ্যই। ফলে তাকে দেখা আমার অসম্পূর্ণ। পরিভ্রমণ শেষে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা এক কেয়ারফুলি কেয়ারলেস যাযাবর। তিনি সকল দেখেন, শোনেন, বোঝেন। কিন্তু, বলেন অন্য কথা। আমি দেখি, তাই নিয়ে সুখী মুখ করে ভক্তের দল চলে যায়। অথচ, কি নিদারুণ রহস্যই না তিনি করেন। এমন কেয়ারলেসলি তা করেন যা হয়তো কেয়ারফুল থেকেও টের পাবে না লোকে। খুব সন্তর্পণে সে থাকা। সংসারে থেকেও না থাকার মত। শোনার ব্যাপারে মাসখানেক আগে হেলাল ভাইয়ের সঙ্গে আলাপের কথা মনে পড়লো।

তিনি বহুকাল ভালো শুনতে পান না, চোখে দেখতে ও পড়তে ভীষণ সমস্যা। যখন কোন কথা শুনতে পান না, তখন মুখে এক চিলতে হাসি হাসি ঝুলিয়ে বসে থাকেন। সব দেখে-টেখে আমি বললাম, একটা হিয়ারিং এইড কিনে আনি? বললেন, "কি দরকার! চারপাশে যা কথাবার্তা হয়, তা না শুনতে পাওয়া আশীর্বাদ।" বলে নিজেই খুব করে হাসলেন। এসব দেখে আমার 'থ্রি ওয়াইজ মাঙ্কিজ' এর ইমেজ মাথায় হানা দেয়। হেলাল ভাই যেন ওই তিনের এক সমম্বয়। এবং তা তার বেছে নেয়া সিদ্ধান্ত।

তার নিজেকে মানুষের কোলাহলে সহজলভ্য করে রাখা নিয়েও আমার প্রশ্ন জাগে। কিভাবে পারেন এত লোকের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখতে? এত মানুষের আনাগোনায় সকলের সঙ্গে এক মাত্রায় আচরণ করে যাওয়া দুষ্কর। তিনি তো কোন রাজনৈতিক নেতা বা ফিল্ম স্টার নন। তবে কিসের এত দায়! একদিন জিজ্ঞেস করেই বসলাম, "বিরক্ত লাগে না আপনার?" উত্তরে সেই মৃদু হাসি। তার হাসির মাত্রা নিরিখ করে বুঝে নিতে হয়, কোন হাসি কত মাত্রার। আমার কাছে সেই হাসির তরজমা ছিলো, "লাগে। কিন্তু উপায়?" এ যেন সেই গান-- "গুরু উপায় বলোনা!/ জনম দুঃখী কপাল পোড়া গুরু আমি একজনা" যদিও আমাদের বয়ানে তিনি তিনি স্রষ্টার আনুকূল্য লাভকারী একজন। নইলে মানুষের ভালোবাসা পাবার আশ্চর্য ক্ষমতা কই পেলেন! কত মানুষ তাকে কাছে নিয়ে রাখতে চান! দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন তার যত্নআত্তি করবার জন্য। এ কি কম কথা এ যুগে। যদিও তারা কেউই এ শহরের অধিবাসী নন। কিন্তু, হেলাল ভাই তো এ শহর ছেড়ে কারো কাছে যাবেন না। শহুরে মানুষ তিনি। যদিও সত্তর-আশির দশকে বেশীরভাগ কবিই ছিলেন শহর কেন্দ্রিক এবং ভীষণ স্মার্ট। তারা সকলেই গ্রাম নিয়ে লিখেছেন বটে, তবে তা দূর থেকে ভালোবাসার মত একটা বিষয়। তারা লালন করেছেন এ শহরকে। তাদের সময়ে এ শহর তো সুন্দর ছিলো। উজ্জ্বল কিছু মানুষের পদচারণা ছিলো যারা মননে আধুনিকতা ও উদারতা একসঙ্গে ধারণ করতেন। তারা শিল্পবোধে যাপন করতেন। লোক দেখানো বিষয়-আশয় তাদের গায়ে বিছুটি পাতার মত জ্বালা ধরাতো। 

সেইসসব অকৃত্রিম কবিরা হারিয়ে গেছেন। এ শহরকে তারা শরীরী এবং আত্মার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিত্যাগ করেছেন। হেলাল হাফিজ অনেকটাই 'দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস'। তার বেদনা যদি দ্রবীভূত না হয়ে এসময়ে এসে আরও ঘনীভূত হয়, তবে অবাক হবার কিছু নেই। তিনি যদি আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, " নিউট্রন বোমা বোঝো, মানুষ বোঝো না!" তাতে করে আমাদের মাথা লজ্জায় হেট হবে কি হবে না, সে কথা অবশ্য আজ আর নিশ্চিত করে বলা যায় না।

 

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

IMF to continue talks with Bangladesh for near-term agreement

The global lender said such an agreement would pave the way for completing the combined third and fourth reviews

14m ago