Skip to main content
জানুয়ারি ৩১, ২০২৩  //  মঙ্গলবার
E-paper English
T
আজকের সংবাদ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বিভাগের ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি মাথা থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার প্রকৃত কারণ যা জানা গেল এরশাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহ করে নির্বাচনে অংশ নিই: মুজিবুল হক ‘জোড়া যমজ’ নূহা-নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফল ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী চার্লসের বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে রেকর্ড গড়ে প্লে অফে কুমিল্লা   ‘জনগণের টাকা লুট করতেই সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে’  বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সার্বিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিখোঁজের ৬ দিন পর শীতলক্ষ্যা থেকে স্কুলশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার ‘মাশরাফি-তামিম-সাকিব বলেছে, হাথুরুসিংহে এলে খুবই ভালো’ বাংলাদেশে ৫০ বছর: বিশ্ব ব্যাংকের সফলতার বয়ান কতটা বিশ্বাসযোগ্য? ইসির সেই জয়নাল এবার জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতিতে হাথুরুসিংহের একাধিক সহকারি খুঁজছে বিসিবি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ আমেরিকার বিনিয়োগ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল ফের বাংলাদেশের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে
The Daily Star Bangla
সাহসিকতা • সততা • সাংবাদিকতা
  • E-paper
  • English
আজকের সংবাদ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বিভাগের ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি মাথা থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার প্রকৃত কারণ যা জানা গেল এরশাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহ করে নির্বাচনে অংশ নিই: মুজিবুল হক ‘জোড়া যমজ’ নূহা-নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফল ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী চার্লসের বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে রেকর্ড গড়ে প্লে অফে কুমিল্লা   ‘জনগণের টাকা লুট করতেই সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে’  বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সার্বিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিখোঁজের ৬ দিন পর শীতলক্ষ্যা থেকে স্কুলশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার ‘মাশরাফি-তামিম-সাকিব বলেছে, হাথুরুসিংহে এলে খুবই ভালো’ বাংলাদেশে ৫০ বছর: বিশ্ব ব্যাংকের সফলতার বয়ান কতটা বিশ্বাসযোগ্য? ইসির সেই জয়নাল এবার জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতিতে হাথুরুসিংহের একাধিক সহকারি খুঁজছে বিসিবি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ আমেরিকার বিনিয়োগ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল ফের বাংলাদেশের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে
The Daily Star Bangla
মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ | সাহসিকতা • সততা • সাংবাদিকতা
  • হোম
  • সংবাদ
    • বাংলাদেশ
    • এশিয়া
    • বিশ্ব
  • মতামত
    • সম্পাদকীয়
    • অভিমত
    • সংবাদ বিশ্লেষণ
  • করোনাভাইরাস
  • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • অন্যান্য খেলা
  • বাণিজ্য
    • অর্থনীতি
    • বিশ্ব অর্থনীতি
    • সংগঠন সংবাদ
  • বিনোদন
    • টিভি ও সিনেমা
    • মঞ্চ ও সংগীত
    • অন্যান্য
  • জীবনযাপন
    • ফ্যাশন ও সৌন্দর্য
    • খাদ্য ও সুস্থতা
    • ভ্রমণ
  • সাহিত্য
    • সংস্কৃতি
    • শিল্প
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
  • তারুণ্য
    • শিক্ষা
    • ক্যারিয়ার
    • তারুণ্যের জয়
  • প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ
    • বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গেজেটস
    • স্টার্টআপ
    • অটোমোবাইল
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু পরিবর্তন
    • প্রাকৃতিক সম্পদ
    • দূষণ
  • প্রবাসে
    • অভিবাসন
    • পরবাস
    • যাওয়া-আসা
English T
  • হোম
  • সংবাদ
    • বাংলাদেশ
    • এশিয়া
    • বিশ্ব
  • মতামত
    • সম্পাদকীয়
    • অভিমত
    • সংবাদ বিশ্লেষণ
  • করোনাভাইরাস
  • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • অন্যান্য খেলা
  • বাণিজ্য
    • অর্থনীতি
    • বিশ্ব অর্থনীতি
    • সংগঠন সংবাদ
  • বিনোদন
    • টিভি ও সিনেমা
    • মঞ্চ ও সংগীত
    • অন্যান্য
  • জীবনযাপন
    • ফ্যাশন ও সৌন্দর্য
    • খাদ্য ও সুস্থতা
    • ভ্রমণ
  • সাহিত্য
    • সংস্কৃতি
    • শিল্প
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
  • তারুণ্য
    • শিক্ষা
    • ক্যারিয়ার
    • তারুণ্যের জয়
  • প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ
    • বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গেজেটস
    • স্টার্টআপ
    • অটোমোবাইল
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু পরিবর্তন
    • প্রাকৃতিক সম্পদ
    • দূষণ
  • প্রবাসে
    • অভিবাসন
    • পরবাস
    • যাওয়া-আসা

  • ABOUT US
  • CONTACT US
  • SMS SUBSCRIPTION
  • ADVERTISEMENT
  • APPS
  • NEWSLETTER
সাহিত্য

সাহিত্যের চাওয়া পাওয়া

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন
সাহিত্যের চাওয়া পাওয়া
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সাহিত্যের কাছে আমাদের চাইবার জিনিস আছে। কিন্তু সাহিত্যের নিজের চাওয়া পাওয়ার একটা বিষয় থাকে। আমরা জানি যথার্থ সাহিত্য বারবার পড়া যায়, কখনোই পুরাতন হয় না। উল্টো প্রতিপাঠেই নতুন চেহারায় ধরা দেয়। এর কারণ সাহিত্যের ভেতর একটা রহস্য থাকে। রহস্যটা কী? থাকে সে কোথায়? সেসব কথা একেবারে পরিষ্কার করে বলা যাবে না, বলতে গেলে কারণের একটা ফর্দ তৈরি করতে হবে। ফর্দে উল্লেখ থাকবে লেখকের কল্পনার, তার অনুভূতির, এবং তার দর্শনের। কোনটা আগে কোনটা পরে সেটার মীমাংসাও একটা সমস্যা। কারণ ওই ৩টি মিলেমিশে যায়, অভেদ্য হয়ে পড়ে। তবে এটা খুবই সত্য যে দর্শন ছাড়া সাহিত্য নেই। সাংবাদিকতা যে সাহিত্য নয় তার প্রধান কারণ ওই দর্শন।

সাংবাদিকতা দর্শনকে এড়িয়ে চলে, ওদিকে দর্শনের সন্ধান না পেলে সাহিত্যের একেবারেই চলে না। তা দর্শন বলতে আমরা কী বোঝাবো? দর্শনের মূল কথাটা হচ্ছে জীবন ও জগতের ব্যাখ্যা। সে ব্যাখ্যা অন্যত্রও পাওয়া যায়, কিন্তু দর্শনের ব্যাখ্যাটা আসে যুক্তির পারম্পর্যের ভেতর দিয়ে। এখানে তার আত্মীয়তা আছে বিজ্ঞানের সঙ্গে। কিন্তু বিজ্ঞান যে-পরিমাণে নৈর্ব্যত্তিক দর্শন সে-পরিমাণে নৈর্ব্যক্তিক নয়। দর্শনের চরিত্রটা সর্বদাই মানবিক এবং মানুষের অমঙ্গল যদি করে ফেলে তাহলেও সে মানবিকতার গুণ ও সীমা লঙ্ঘন করে না। আর এই মানবিকতাই সাহিত্যকে দর্শনাভিমুখী করে তোলে।

সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।

২

কবিতাই প্রথমে এসেছে, তার পরে দর্শন। কিন্তু কবিতা দর্শনকে খুঁজেছে। যদিও দু'য়ের মধ্যে ব্যবধান বিস্তর- জন্মসময়গত যতটা তার চেয়ে অনেক বেশী চরিত্রগত। কবিতার তথা সাহিত্যের উপজীব্য হচ্ছে বিশেষ; দর্শনের উপজীব্য নির্বিশেষ। তাদের অবলম্বন ভিন্ন ভিন্ন; সাহিত্য বিশ্বাস করে সংশ্লেষণে, দর্শনের আগ্রহ বিশ্লেষণে। তবু সাহিত্যের জন্য দর্শনানুসন্ধান অপরিহার্য। কেননা মানুষের বিশেষ অনুভূতিগুলোর প্রবণতা থাকে নির্বিশেষ সাধারণীকরণের দিকে; সব সময়েই তাই দেখা যায় তারা কোনো জ্ঞানের অভিমুখে যেতে চাইছে। অন্যদিকে আবার দর্শন যদিও বিশ্লেষণধর্মী ও চিন্তানির্ভর, তথাপি দর্শন বিজ্ঞান নয়, বিজ্ঞানের মতো খণ্ড খণ্ড করে অবলোকন করে না সে জীবন ও জগতকে; সংলগ্ন ও ঐক্যবদ্ধ করতে চায়, অনেক সময় আকাঙ্ক্ষা রাখে সমগ্রকে ব্যাখ্যা করবে একক কোনো মানদণ্ডে। তবে সত্য থাকে এটা যে, দর্শনের তবু সাহিত্যকে বাদ দিলে চলে, কিন্তু সাহিত্যের কখনোই চলতে পারে না দর্শনকে বাদ দিয়ে।

মা ছিলেন বাস্তববাদী, মায়ের অনেক গুণ পেয়েছি: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

Read more

তাই দেখি ইন্দ্রিয়সংবেদী কবি, কীটস, চরমভাবে যিনি আস্থা রেখেছিলেন sensations-এ, তিনিও বারংবার বলছেন দর্শনের কথা, ভয় পাচ্ছেন চিন্তাবিহীন অনুভবকে, দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন মননশীলতার দিকে, এবং গভীরতম অনুভবশক্তির প্রকাশে-সমৃদ্ধ কবিতাসমূহেও অনুপ্রাণিত অথচ যৌক্তিক দার্শনিক উক্তি করছেন। সেটা একটা দিক। অপর দিকে এও অনিবার্য সত্য যে, কোনো মানুষই তার সমসাময়িক দার্শনিক আবহাওয়ার বাইরে নয়, লেখক তো ননই। যেমন করে প্রাকৃতিক জলবায়ু প্রভাবিত করে মানুষের দৈহিক স্বাস্থ্যকে, ঠিক তেমনিভাবে দার্শনিক আবহাওয়া প্রভাব রাখে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। এই প্রভাব একজন লেখক অন্য মানুষের তুলনায় অধিক পরিমাণে গ্রহণ করেন, কেননা লেখক সাধারণ-মানুষের তুলনায় অধিক সংবেদনশীল, গ্রহণসক্ষম। টেনিসনের 'ইন মেমরিয়াম' কবিতায় বিবর্তনবাদী চিন্তার উপস্থিতি কোনো গোপন ব্যাপার নয়; এই কবিতা কিন্তু লেখা হয়েছিল ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের বই প্রকাশের ৯ বছর আগে। ডারউইনের বই প্রকাশের পূর্বেই বিবর্তনবাদী চিন্তা অগ্রসর হয়ে এসে পৌঁছেছিল অগ্রসর মানুষের মনে, এবং সেই অগ্রসর চিন্তা থেকে দূরে ছিলেন না কবি টেনিসন, মূলতঃ যিনি সৌন্দর্যপিপাসু; বিশেষ দক্ষতা যার দার্শনিক ভাবনার চঞ্চল অনুসরণে নয়, অনুভবের অচঞ্চল চিত্রায়নে।

জীবনানন্দ দাশ ও জসীমউদ্দীন পরস্পরের সমসাময়িক। দু'জনেই পূর্ববঙ্গের মানুষ, শ্যামল ও সিক্ত প্রকৃতির প্রতি দু'জনেরই গভীর ভালোবাসা। কিন্তু তাদের কবিতাতে যে পারস্পরিক দূরতিক্রমণীয় ব্যবধান তার কারণটা মূলতঃ দার্শনিক। সময়কে জয় করবার প্রয়োজনে বিপন্ন জীবনানন্দ যে একটি ইতিহাসচেতনা নীরবে গড়ে তুলেছিলেন নিজের মতো করে, জসীমউদ্দীনের লেখায় তেমন কোনো দর্শনানুসন্ধান আমরা পাবো না। এখানে জীবনানন্দ বড় জসীমউদ্দীনের তুলনায়; একই সঙ্গে তিনি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও গভীর। অথবা ধরা যাক কাজী নজরুল ইসলামের কথা। বড় মাপের কবি তিনি। কিন্তু মনে হবে কবিতাতে তিনি বড়ই অগোছালো, অনেক সময় স্ববিরোধী। আসলে নজরুল ইসলামের ভেতরে ন্যায়-অন্যায়ের প্রকারভেদের বোধ আছে, রয়েছে সুন্দর জীবনের জন্য আকাঙ্ক্ষা, আর তার বিপরীতে অসুন্দরের জন্য প্রবল ঘৃণা। দেখা যাবে প্রবহমান ঘটনা ও নির্যাতিতের দুঃখের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত আগ্রহী।

সব মিলিয়ে একটি দার্শনিকতা রয়েছে, যেমনটা আমরা পাই ইংরেজি রোমান্টিক কবিদের লেখায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে একজন কালজয়ী সাহিত্যিক সে কেবল হৃদয়গ্রাহী ও কৌতূহলোদ্দীপক গল্প বলার দরুণ নয়, আরও বড় কারণ তার দৃষ্টিভঙ্গি, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য গভীর মমতা; এবং যে-দৃষ্টিটি উল্লেখযোগ্য এই বৈশিষ্ট্যের কারণেও বটে যে এতে একই সঙ্গে রয়েছে সামন্তবাদের প্রতি ঘৃণা ও ভালোবাসা।

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে সৃজনীকল্পনা ও দার্শনিকতা একেবারে হাত ধরাধরি করে আছে। একই সঙ্গে তিনি ইহজাগতিক ও আধ্যাত্মিক। তার রচনাতে রক্ত মাংসের মানুষেরা রয়েছে, তাদের নিজস্ব দাবী নিয়ে। বহু বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের বৈজ্ঞানিক কৌতূহল।

সমসাময়িক জগৎ ও ঘটনা সম্পর্কে তিনি সজাগ, যেমন সচেতন তিনি অতীত ইতিহাস বিষয়ে। গতির প্রতি তার স্বাভাবিক পক্ষপাত। অন্যদিকে আবার রয়েছে তার ধর্মচেতনা। তিনি উপনিষদের উত্তরাধিকারী। ধর্ম তাঁকে সাম্প্রদায়িক করেনি, বরঞ্চ বাংলা সাহিত্যকে তিনি যে-পরিমাণে অসাম্প্রদায়িক করে গেছেন তার আগে তেমনটি আর কেউ করতে পারেননি। আধ্যাত্মিকতার প্রতি তার স্বাভাবিক টান। এবং এও মোটেই তাৎপর্যহীন নয় যে, তাঁর গান যেমন ভারতের তেমনি বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের বহুমুখিতা ও বৈচিত্র্যকে ধারণ করে রয়েছে একটি দার্শনিকতা, যেটি ছাড়া তার সাহিত্যকে ভাবাই যায় না। রবীন্দ্রসাহিত্য অবশ্যই আদর্শ-নিরপেক্ষ নয়, রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত গভীর ভাবে আদর্শবাদী।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এখনো যার উপর ভরসা রাখি

Read more

সাহিত্যিক-শ্রেষ্ঠ শেক্সপীয়র মত প্রচারক ছিলেন না আদৌ, কোনো বিশেষ দার্শনিক মতবাদের স্থিরপ্রতিজ্ঞ উপস্থাপকও নন তিনি; জীবনের জটিলতাকেই নাট্যায়িত করেছেন এই লেখক- নিরাসক্ত পক্ষপাতবিহীন অবস্থানে দাঁড়িয়ে। তিনি দার্শনিক নন-  দান্তে নন, গ্যেটে নন, নন টলস্টয়- কিন্তু তাই বলে কি তার রচনাতে জীবনের কোনো ব্যাখ্যা নেই, চিন্তা নেই গভীরতম? অবশ্যই আছে। বস্তুত শেক্সপীয়রের রচনায় অনুভূতি ও চিন্তাশক্তি- এই দুই শত্রুর মধ্যে জীবনমরণ, সামনা-সামনি, সমান-সমান মল্লযুদ্ধের যে চিত্র কবি-সমালোচক কোলরিজ দিয়েছেন তা অসত্য নয় মোটেই। সাদায়-কালোয় জীবন আঁকেননি তিনি, শুভ ও অশুভ সর্বক্ষণ আছে তার লেখায়, আছে তাদের ক্ষান্তিহীন রক্তাক্ত দ্বন্দ্ব।

রেনেসাঁ ও রিফরমেশনের যে দার্শনিক আবহাওয়ার মধ্যে শেক্সপীয়রের অবস্থান তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তার সাহিত্যে; শুধু প্রতিফলিত নয়, সেই আবহাওয়া গভীরতর ও সমৃদ্ধতর হয়ে উঠেছে তার রচনার মধ্য দিয়ে। ঈশ্বর নয়, মানুষই থাকবে বিবেচনার ও মূল্যবোধের কেন্দ্রভূমিতে- এই দর্শন রেনেসাঁ শিখিয়েছে তাকে। মানুষের চরিত্র যে অপার বিস্ময়ের এক রহস্যলোক এই বোধও ওই রেনেসাঁই। রিফরমেশন দৃঢ়তর করেছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের এই চেতনাকে, ধর্মের ক্ষেত্রে বিবেকের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিয়ে। সেই সঙ্গে ধর্মনিহিত মূল্যবোধকেও গ্রহণ করেছেন শেক্সপীয়র, এলিজাবেথীয় জগৎ-দৃষ্টিকেও। স্পেনীয়দের পরাজিত করে এবং নাবিকদের সাহায্যে নতুন নতুন দেশ আবিষ্কার করায় যে বহির্মুখী উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিল সেকালে তার প্রভাবও পড়েছে শেক্সপীয়রে।

এক কথায় বলতে গেলে, ইহলৌকিকতার এবং জীবনকে নিরুদ্বেগে নির্দ্বিধায় গ্রহণের ফলে যে-একটি মানববাদী শক্তি তৈরি হয়েছিল, সেই শক্তিই আপন সৃজনক্ষমতা অবারিত করেছে শেক্সপীয়রের অসামান্য রচনাবলীর মধ্য দিয়ে। শেক্সপীয়রের ব্যক্তি-মনীয়ষাকে খাটো করা সম্ভব নয়, কিন্তু তার মনীষা অবশ্যই একটি বিশেষ সামাজিক ও দার্শনিক পরিবেশের আনুকূল্যে বিকশিত হয়েছিল; সেই পরিবেশটি মোটেই উপেক্ষণীয় নয়। গ্রীক নাট্যকাররাও একটি বিশেষ আবহাওয়ার মানুষ, এবং তিনজন শ্রেষ্ঠ গ্রীক নাট্যকার যখন একই বিষয়ের উপর তিনটি সম্পূর্ণ ভিন্ন নাটক রচনা করেন তখন একটি বড় ও সাধারণ দার্শনিক পরিম-লের ভিতরে থেকেও তাদের নিজস্ব দার্শনিক অবস্থানের স্বাতন্ত্র্যকে উদ্ভাসিত করেন তারা। কীটসের মধ্যে শেক্সপীয়রের গুণ ছিল। কিন্তু কীটসের তুলনায় শেক্সপীয়র যে বড় লেখক তার একমাত্র কারণ এটা নয় যে, শেক্সপীয়র দীর্ঘজীবন লাভ করেছিলেন কীটসের তুলনায়; কারণ এটাও যে শেক্সপীয়রের দার্শনিকতা গভীরতর ছিল কীটসের অপেক্ষা। ট্র্যাজেডি গীতিকবিতার চাইতে উচ্চতর রূপকল্প- দার্শনিক গভীরতার কারণে।

মানুষ একটা ভয়ের মধ্যে আছে: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

Read more

মূল কথা দাঁড়ায় তাহলে এই রকম। কোনো লেখকই দার্শনিক বলয়ের বাইরে নন- তখন তো ননই যখন তিনি সেই বলয়কে মান্য করেন, যেমন শেক্সপীয়র করেছেন; তখনো নন যখন তিনি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, যেমন মাইকেল মধুসূদন করেছিলেন।

মাইকেল প্রসঙ্গ এলে স্মরণ করা যায় যে, তার ওপর হোমার-মিল্টনের সাহিত্যিক ও দার্শনিক প্রভাব সক্রিয় ছিল। সেই তুলনায় তার লেখায় শেক্সপীয়রের প্রভাবটা পড়েছে কম। বাংলা সাহিত্যে শেক্সপীয়রের প্রভাব গভীর নয়। শেক্সপীয়রের মৃত্যুর এতো বছর পরেও বাংলায় তার একই সঙ্গে সার্থক ও যথার্থ অনুবাদ হয়নি। এর কারণ ভাষাতাত্ত্বিক তো বটেই, তার চেয়েও অধিক পরিমাণে দার্শনিক।

যে-বিশেষ দার্শনিক পরিম-লে শেক্সপীয়রের অবস্থান বাঙালীর মনন থেকে তার দূরবর্তিতা নিতান্ত সামান্য নয়। শেক্সপীয়রের 'দি টেমপেস্ট' নাটক সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি লিখেছেন, "নাটকের নামও যেমন, তাহার ভিতরকার ব্যাপারও সেইরূপ। মানুষে প্রকৃতিতে বিরোধ এবং সেই বিরোধের মূলে ক্ষমতালাভের প্রয়াস। ইহার আগাগোড়া বিক্ষোভ।" এই বিক্ষোভ পছন্দ হয়নি রবীন্দ্রনাথের। না-হবার কারণটি নিছক ব্যক্তিগত নয়, ব্যক্তিগত হয়েও তা সমষ্টিগত ও আদর্শিক বটে।

এই আদর্শগত কারণেই আমাদের, বাঙালীদের পক্ষপাত গীতিকবিতার প্রতি। নাটক এসেছে ধীরে ধীরে। এবং সেখানেও কমেডি প্রাধান্য পেয়েছে ট্র্যাজেডির তুলনায়। ট্র্যাজেডি চূড়ান্তরূপে ইহজাগতিক, অন্যপক্ষে বাঙালী জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্মভিত্তিক ভাববাদ শিক্ষা দেয় যে জগৎ অনিত্য, নিত্য হচ্ছে মানুষের আত্মা ও তার পরকাল। ইহকালের দুর্ভোগ চূড়ান্ত নয়, বরঞ্চ এই দুর্ভোগের পুরস্কার পাওয়া যাবে পরলোকে- এই যে ধারণা এটি ট্র্যাজেডির জন্মবিরোধী। শুধু ভাববাদের কারণে নয়, দারিদ্র্যের কারণেও 'মরলে বাঁচি'র জীবনদর্শন গড়ে উঠেছে এই দেশে। এই দর্শন ট্র্যাজেডির শত্রু; ট্র্যাজেডি মরার পরে বাঁচার কথা বলে না, বাঁচার মধ্যে বাঁচাকেই চরম ও চূড়ান্ত জ্ঞান করে। তপোবনে দ্বন্দ্ব নেই, কেননা সেখানে প্রতাপান্বিত অশুভ নেই। পরলৌকিক স্বর্গেও ঐ একই ব্যাপার। আমাদের শুভ সংঘর্ষে যেতে চায় না অশুভের সঙ্গে, ফলে তার শক্তি কখনো যথার্থ রকমে বিকশিত ও সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষিত হতে পারেনি। শুভ-অশুভের দ্বন্দ্ব নিতান্তই যখন অনিবার্য হয়ে ওঠে সাহিত্যে, নিরুপায় লেখক তখন পক্ষ নেন, বিপন্ন হয়ে। অশুভ তার ব্যক্তিগত শত্রুতে পরিণত হয়েছে মনে হয়। তিনি সমবেদনা প্রকাশ করেন শুভের প্রতি, এমন কি অশ্রুপাতও করতে বলেন পাঠককে, যেমন শরৎচন্দ্র বলেছেন, 'দেবদাস'-এর অন্তিম লাইনগুলোতে।

স্বকীয়তায় উজ্জ্বল সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

Read more

এই ভাবাদী ও তপোবনপ্রিয় চেতনায় ট্রাজেডি অনাহুত, স্বভাবতঃই। গিরিশ ঘোষ 'ম্যাকবেথ' অনুবাদ করেছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন ঐ নাটক দু-চারদিনের বেশী চলে নি, শূন্য হয়ে গেছে রঙ্গালয়, পরে যখন 'আবু হোসেন' এলো তখন, যেন ভোজবাজি, আবার ভরে গেল আসনসমূহ। পাঠক-দর্শক হাসি চায়, পরিহাস চায়, চায় উৎফুল্লতা; চায় না দুর্ভোগ, চায় না দ্বন্দ্ব। আপন ঘরে দুর্ভোগ যার নিত্যসঙ্গী, কোন দুঃখে সে দুঃখকে খুঁজবে রঙ্গমঞ্চে। পয়সা দিয়ে?

শেক্সপীয়র অনুবাদ-দুর্বলতার ভাষাতাত্ত্বিক কারণটাও দর্শননিরপেক্ষ নয়। ভাষা উপর থেকে আসে না, নীচের থেকেই গড়ে ওঠে; উপর থেকে এলেও টেকে না, টেকে তা-ই যা গড়ে উঠেছে নীচের প্রয়োজনে। বাংলা বাঙালী মানসেরই ভাষা। এই ভাষার বিজ্ঞান-চর্চার ছাপ যেমন অল্প তেমনি অল্প দর্শনচর্চার ছাপও। কারণটা অন্যকিছু নয়। সেটি হচ্ছে এই যে, আমাদের চেতনায় কাব্যের শান্ত ও নিরীহ কিন্তু অচঞ্চল আচ্ছাদনটি ভেদ করে মননশীরতার, বুদ্ধিবৃত্তির অনুশীলনের প্রবল ঐতিহ্য গড়ে ওঠেনি। আমাদের প্রধান গৌরব গীতিকবিতা, প্রধান অগৌরব বিজ্ঞানের ও দর্শনের অভাব। সেই গৌরব ও অগৌরবের যুগ্ম পতাকা ভাষা তার পেলবতা ও কাব্যময়তার মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত আন্দোলতি করছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাকালে একজন সমালোচক বলেছিলেন বাংলা ভাষা কেবলি এলাইয়া এলাইয়া পড়ে, ধরি ধরি করিয়া তাহাকে রাখা যায় না। সে সত্য অপ্রাণিত হয়নি অদ্যাবধি।

রবীন্দ্রনাথ 'ম্যাকবেথে'র অংশবিশেষের অনুবাদ করেছিলেন, তার গৃহ-শিক্ষকের শাসনের মুখে। সে অনুবাদটি রক্ষা করার মতো আগ্রহ কবির ছিল না। ওই অনুবাদের প্রথম দৃশ্যে এই ধরনের পংক্তি আছে, 'পোড়ারমুখী বোল্লে রেগে ডাইনী মাগী যা তুই ভেগে।' ঐ যে শব্দ 'মাগী' তা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ওই পরিবেশে। বিদ্যাসাগর অনায়াসে ব্যবহার করেছেন ওই শব্দ। পরে মধ্যবিত্ত মানসের বর্জনপ্রিয়তা এইসব শব্দকে অশ্লীল জ্ঞানে জিভে কেটে পরিত্যাগ করেছে। বলাই বাহুল্য, এর কারণ ভাষাতাত্ত্বিক নয়, মনস্তাত্ত্বিক। এই প্রবণতা শেক্সপীয়রের নিজের কালে ছিল না এবং ছিল না বলেই তিনি তার রচনাবলী সৃষ্টি করায় আনুকূল্য পেয়েছিলেন। আমরা শেক্সপীয়রের যথেষ্ট ও যথার্থ অনুবাদ করতে পারিনি, কেননা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিধিটা এখনো বিস্তৃতির ও গভীরতার অপেক্ষায় আছে।

Related topic
সাহিত্য / কবিতা / দর্শন / সাংবাদিকতা / সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
Apple Google
Click to comment

Comments

Comments Policy

Related News

৫ মাস আগে | সাহিত্য

দেশভাগের ৭৫ বছর: সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিবেচনা

৬ দিন আগে | সাহিত্য

যারা পেলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০২২

২ মাস আগে | সাহিত্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপই ছিল সবচেয়ে ক্ষতিকর

৫ মাস আগে | বাংলাদেশ

গান কবিতা পথনাটকে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ও চা-শ্রমিক শোষণের প্রতিবাদ

২ মাস আগে | সাহিত্য

'কাজলা দিদি' প্রসঙ্গে যতীন্দ্রমোহন বাগচী

The Daily Star  | English
19m ago|Southeast Asia

Myanmar slapped with fresh sanctions on eve of coup anniversary

The United States and its allies will impose further sanctions on Myanmar on Tuesday, marking the two-year anniversary of the coup with curbs on energy officials and members of the junta, among others..Washington will impose sanctions on the Union Election Commission, mining enterprises, e

32m ago|Bangladesh

Wrong info prompted US to impose sanctions on Rab: Shahriar Alam

The Daily Star
Follow Us
  • ABOUT US
  • CONTACT US
  • SMS SUBSCRIPTION
  • ADVERTISEMENT
  • APPS
  • NEWSLETTER
© 2023 thedailystar.net | Powered by: RSI LAB
Copyright: Any unauthorized use or reproduction of The Daily Star content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.