আবুল মনসুর আহমদের ১২৬তম জন্মদিন আজ

অনুষ্ঠানে আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ ও তর্কজালের উদ্যোগে ১মবারের মতো জাতীয় বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হস্তান্তর করা হবে। অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ। 

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের ১২৬তম জন্মদিন আজ। ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্ম নেন এবং ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় মারা যান।

বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক গল্পের রচয়িতা আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক। তিনি ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক 'কৃষক', 'নবযুগ' ও 'ইত্তেহাদ'র সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন আধুনিক ও প্রগতিশীল সাংবাদিকতার অগ্রপথিক। 

সফল রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের যুক্তফ্রন্ট সরকারে প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী লীগ সরকারে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী। পূর্ববাংলার স্বার্থের স্বপক্ষে শক্ত অবস্থান ও নানাবিধ উদ্যোগের জন্য, বিশেষ করে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।

তার রচনার মধ্যে আছে 'আয়না', 'আসমানী পর্দা', 'গালিভারের সফরনামা' ও 'ফুড কনফারেন্স'। 'বাংলাদেশের কালচার'সহ আরও আছে বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের ওপর বিখ্যাত লেখা। তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হচ্ছে 'আত্মকথা' ও 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর'।

আবুল মনসুর আহমদ ১৯৪০, ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপক্ষে যে অবিরাম প্রচারণা চালিয়েছিলেন, তা তুলনাহীন। পাকিস্তানের প্রথমদিকে বিরোধী দলীয় আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা।

তিনি চল্লিশের দশকে প্রথম থেকেই ভাষা বিষয়ে লিখে আসছিলেন এবং 'ইত্তেহাদ' সম্পাদক হিসেবে ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, তা নিয়ে তিনি দেশভাগের ৪ বছর আগেই (১৯৪৩ সালে) নানান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখতে থাকেন। রচনা করেন ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বাঙালির রাজনীতির ৩ নেতা শেরেবাংলা ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত 'যুক্তফ্রন্ট'র ইশতেহার 'একুশ দফা'র। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করা হয়।

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা ছিল তদানীন্তন পাকিস্তানের পূর্বাংশের বাঙালিদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দাবির প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপস্থাপন। রাজনৈতিক কারণে আবুল মনসুর আহমদকে পঞ্চাশ দশকের শেষ ও ষাটের দশকের প্রথম দিকে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছে।

আবুল মনসুর আহমদের জন্মদিন উপলক্ষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে 'রাষ্ট্রচিন্তক আবুল মনসুর আহমদ স্মরণ বক্তৃতা জুলাই অভ্যুত্থান ও সাংবিধানিক সংস্কার' শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ পাঠ করবেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খান, আলোচক হিসেবে থাকবেন গবেষক ড. জালাল ফিরোজ, লেখক ডা. জাহেদ উর রহমান ও লেখক সারোয়ার তুষার।

অনুষ্ঠানে আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ ও তর্কজালের উদ্যোগে ১মবারের মতো জাতীয় বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হস্তান্তর করা হবে। অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ। 

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago