পশ্চিমবঙ্গে এডিনোভাইরাস সংক্রমণে ১৯ শিশুর মৃত্যু, আক্রান্ত ১২ হাজার
এ বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এডিনোভাইরাসের সংক্রমণে ১৯ শিশু মারা গেছে এবং অসুস্থ অবস্থায় হাজারো মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
গত বুধবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
জানুয়ারি থেকে শুরু করে প্রায় ১২ হাজার মানুষের এডিনোভাইরাসে আক্রান্তের সংবাদ পাওয়া গেছে। এ মুহূর্তে প্রায় ৩ হাজার শিশুর জটিল প্রকৃতির ফ্লু'র উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
ভারতের ডাক্তারদের সংগঠন দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস সতর্ক করে জানিয়েছে, মৃত ও আক্রান্তের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান থেকে বাস্তবচিত্র আরও অনেক ভয়াবহ হতে পারে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চলমান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সংগ্রাম করছে। কিছু হাসপাতাল জানিয়েছে তাদের শিশু ওয়ার্ড পূর্ণ হয়ে গেছে এবং অনেক শিশুকে অন্য শিশুর সঙ্গে হাসপাতালের শয্যা ভা করে নিতে হচ্ছে।
এডিনোভাইরাসের সংক্রমণে শ্বাসযন্ত্র, চোখ ও পাকস্থলী আক্রান্ত হতে পারে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, ২টি এডিনোভাইরাসের মিউটেশনের ফলে সৃষ্ট নতুন ধরনের কারণে এতো শিশু আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যেও এ ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়ে জানা গেছে।
বাড়তে থাকা সংক্রমণের মোকাবিলায় স্থানীয় সরকার বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে। স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ বিভাগ স্বাস্থ্যকর্মীদের সব ছুটি বাতিল করেছে। এছাড়াও, ক্লিনিকগুলোকে দিনে ২৪ ঘণ্টা ও সপ্তাহে ৭ দিন খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে করোনাভাইরাসের সময় অবলম্বন করা নীতি, যেমন মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো উদ্যোগগুলো আবারও চালু করা হচ্ছে। তবে এখনও স্কুল বন্ধের কোনো নির্দেশ আসেনি।
শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, 'এই মহামারির কলেবর ও ভয়াবহতা নজিরবিহীন'।
গত সপ্তাহে বিভিন্ন গ্রাম ও শহর থেকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আসা প্রায় ১০০ পরিবারের সদস্যরা কলকাতার বিসি রায় শিশু হাসপাতালের বাইরে অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। অসুস্থ শিশুদের ভর্তির বিষয়ে খবরের অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার এডিনোভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়টির দেখভাল করার জন্য ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের লকডাউন চলাকালীন সময়ে অনেক শিশু ঠিকমত টিকা নিতে পারেনি বা তাদের দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি। এ কারণে শিশুরা এতো বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
তারা আরও জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিশুদের চিকিৎসার বিষয়টি যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব পায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, 'রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো শিশুদের জটিল রোগের ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুত নয়'।
কলকাতার ইন্সটিটিউট অব চাইল্ড হেলথের শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রধান ড. প্রভাস প্রসূন গিরি জানান, এতো রোগী চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রাজ্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়নি।
'যেহেতু আমরা করোনাভাইরাস পরবর্তী যুগে বসবাস করছি, আমাদের যেকোনো ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের ঢেউর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ বছর এডিনোভাইরাস আঘাত হেনেছে। আগামী বছর তা আরএসভি ভাইরাস হতে পারে, বা ফ্লু হতে পারে', যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসার জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু শিশুদের কথা ভাবা হয়নি। কলকাতার বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালে শিশুদের জন্য আইসিইউর ব্যবস্থাই নেই।
'এ কারণে শিশুদের আইসিইউ সেবা দিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে', যোগ করেন প্রভাস।
Comments