জামিনে মুক্তির পর যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন কেজরিওয়াল

দিল্লিতে কেজরিওয়ালের রোড শো। সেখানে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের পতাকা। ছবি: অনুশ্রী পদনবীশ/রয়টার্স/ডিডাব্লিউ
দিল্লিতে কেজরিওয়ালের রোড শো। সেখানে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের পতাকা। ছবি: অনুশ্রী পদনবীশ/রয়টার্স/ডিডাব্লিউ

সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ভারতের আম আদমি দলের নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। চলমান লোকসভা নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েই দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানায় দিনভর প্রচারণা চালাচ্ছেন কেজরিওয়াল।

এক বছর আগেও যা অভাবনীয় ছিল, তাই করে দেখিয়েছেন কেজরিওয়াল। একসময় একে অপরের শত্রু হিসেবে বিবেচিত হলেও কংগ্রেস প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দিল্লিতে তিনি রোড শো করছেন।

ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একহাতে কংগ্রেস, অন্যহাতে আম আদমি পার্টির প্রতীক নিয়ে তিনি হরিয়ানায় রোড শো করেছেন।

কেজরিওয়াল যখন কারাগারে ছিলেন, তখন কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের নেতারা দিল্লিতে বিশাল প্রতিবাদ সভা করেছেন। আর এখন কেজরিওয়াল কংগ্রেসের প্রার্থীদের জন্য প্রচার করছেন।

শুধু তাই নয়, কেজরিওয়াল এখন শুধু  দিল্লি বা হরিয়ানায় প্রচার করছেন না। ইতোমধ্যে তিনি উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবেও প্রচার করেছেন। আর সেই প্রচারে নেমে সরাসরি বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আক্রমণ করছেন।

আম আদমি পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র ও বিহার থেকেও ইন্ডিযা জোটের নেতারা কেজরিওয়ালকে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। তিনি সেসব এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। 

কী বলছেন কেজরিওয়াল?

জামিন পাওয়ার পর দিল্লিতে প্রথম রোড শো ও পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ৭৫ বছর বয়স হয়ে গেলে বিজেপি নেতাদের রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে। আডবাণী, জোশী, যশবন্ত সিনহারা সেইমতো অবসর নিয়েছেন।'

'আগামী বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদির ৭৫ বছর পূর্ণ হবে। তিনি যদি এখন আবার প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে তো তখন তাকে অবসর নিতে হবে। নিজের তৈরি করা নিয়ম তো তিনি ভাঙতে পারেন না। তখন অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রী হবেন। আর ক্ষমতায় এলে যোগীকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেবেন মোদি', যোগ করেন তিনি।

কেজরিওয়ালের রোড শো। সঙ্গে তিন কংগ্রেস প্রার্থী কানহাইয়া কুমার, উদিত রাজ এবং জয়প্রকাশ আগরওয়াল। ছবি: রয়টার্স
কেজরিওয়ালের রোড শো। সঙ্গে তিন কংগ্রেস প্রার্থী কানহাইয়া কুমার, উদিত রাজ এবং জয়প্রকাশ আগরওয়াল। ছবি: রয়টার্স

বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশে গিয়ে তিনি বলেছেন, 'বিজেপি ও এনডিএ জিতছে না। তারা ২৫০টি আসনও পাবে না। আর তারা চারশ আসন পেলে সংবিধান বদল করে প্রথমেই দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণ তুলে দেবে।'

হরিয়ানায় তিনি নিজের কারাবরণ প্রসঙ্গে বলেন, 'হরিয়ানার ছেলে যাতে ভোটে প্রচার করতে না পারে, সেই চেষ্টা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।'

তিহার কারাগারে তাকে প্রয়োজন অনুযায়ী ইনসুলিন দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

কেজরিওয়াল বলেন, 'আমি (আবারও) কারাগারে যাব কিনা, তা এখন আপনাদের হাতে। আমায় যদি কারাগারে পাঠাতে চান, তাহলে বিজেপিকে ভোট দিন, না হলে আম আদমি পার্টি বা ইন্ডিয়া জোটের দলগুলোকে ভোট দিন।'

কেজরিওয়াল কৃষক, নারী কুস্তিগির এবং অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে সোচ্চার হন।

'সরাসরি কথা বলছেন'

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে (ডিডাব্লিউ) বলেন, 'কেজরিওয়াল এমন সব প্রসঙ্গে তুলছেন, যা বিজেপি উপেক্ষা করতে পারছে না। তারা জবাব দিতে বাধ্য হচ্ছে। সেই সঙ্গে কেজরিওয়াল এমন বিষয় বেছে নিচ্ছেন, যা সরাসরি ভোটদাতাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।'

শরদ বলেছেন, 'কেজরিওয়াল বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে সেই রাজ্যের প্রসঙ্গ তুলছেন। তিনি আদতে হরিয়ানার মানুষ। তাই সেখানে গিয়ে আবেগের তাস খেলেছেন। উত্তরপ্রদেশে সংরক্ষণ হলো খুব বড় বিষয়। তাই সেটা নিয়ে বিজেপি-কে আক্রমণ করেছেন। তিনি নির্দিষ্ট কিছু বিষয় তুলছেন। যা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।'

আবেদন খারিজ

কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল ইডি। তারা বলেছিল, কেজরিওয়াল জামিনের শর্ত ভেঙেছেন। শর্ত ছিল, তিনি মামলা নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। কেজরিওয়াল বলেছেন, মানুষ যদি চান, তিনি আর কারাগারে না থাকুন, তাহলে বিজেপির বিরুদ্ধে যেন ভোট দেয়।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের সঙ্গে কেজরিওয়ালের রোড শো। ছবি: রয়টার্স
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের সঙ্গে কেজরিওয়ালের রোড শো। ছবি: রয়টার্স

বিচারপতিরা এই আবেদন খারিজ করে বলেন, 'ওটা কেজরিওয়ালের ধারণা হতে পারে। রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, (নির্বাচন শেষে) ২ জুলাই কেজরিওয়ালকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সেদিন তার জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।'

অমিত শাহর মন্তব্য

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, অনেকে মনে করেন, কেজরিওয়ালকে প্রচার করার জন্য জামিন দিয়ে তাকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। অমিত শাহ বলেছেন, 'আইনের ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের আছে। আমার মনে হয় এটা সাধারণ বা রুটিন রায় নয়। অনেকে মনে করছেন এটা "স্পেশাল ট্রিটমেন্ট"।'

কেজরিওয়ালের মন্তব্য নিয়ে অমিত শাহর বক্তব্য, 'এটা আদালত অবমাননা। কেজরিওয়াল বলতে চাইছেন, কেউ যদি জয়ী হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট অভিযোগ সত্ত্বেও তাকে জেলে পাঠাবে না।'

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইঞা বলেছেন, আদালতের রায় নিয়ে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ হতেই পারে। তবে তারা মনে করেন, কেজরিওয়ালকে নিয়ে যে রায় দেয়া হয়েছে, তা কোনো বিশেষ রায় নয়, রুটিন রায় মাত্র।

পিটিআই, এনডিটিভি

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

9h ago