যমজ ২ সন্তানসহ ৫ স্বজন হারিয়ে বাকরুদ্ধ হেলাল

জানতেন না এত দ্রুতই তাকে আবার ফিরে আসতে হবে। ২ যমজ ছেলেকে আর জীবিত অবস্থায় পাবেন না, হারাবেন পরিবারের আরও ৩ সদস্যকে।
ছবি: সংগৃহীত

ঈদের ছুটিতে স্ত্রী সোনিয়াকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন হেলাল হোসেন। ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে গিয়েছিলেন স্ত্রী, ১ মেয়ে ও ২ যমজ ছেলেকে রেখে। জানতেন না এত দ্রুতই তাকে আবার ফিরে আসতে হবে। ২ যমজ ছেলেকে আর জীবিত অবস্থায় পাবেন না, হারাবেন পরিবারের আরও ৩ সদস্যকে।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামে বাবুল মুন্সির বাড়ির উঠানে যমজ ২ ছেলে হাসান-হোসেনের (২) মরদেহ সামনে নিয়ে আজ শনিবার সকালে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে ছিলেন হেলাল হোসেন।মরদেহ দুটির পাশে আরও একটি মরদেহ। সেটি হেলালের শাশুড়ি মাহিমা বেগমের (৪৬)।

শুক্রবার রাতে বাসচাপায় মারা যান বাবুল মুন্সির স্ত্রী মাহিমা খাতুন ও তার ২ নাতি হাসান-হোসেন। একই ঘটনায় প্রাণ হারান মাহিমা খাতুনের বোন একই উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের সেকেন্দারপুর গ্রামের প্রবাসী সাইদুল ইসলামের স্ত্রী রাহিমা বেগম (৩২) ও তার মেয়ে জেবা তাহিরা (৫)।

হেলালের স্ত্রী সোনিয়া ও মেয়ে খাদিজাও এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন। অবস্থার অবনতি হলে সোনিয়াকে আজ ভোরে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মেয়ে খাদিজা চিকিৎসা নিচ্ছে যশোর জেনারেল হাসপাতালে।

বাসচাপায় একই পরিবারের এই ৫ জন ছাড়াও মারা যান ইজিবাইকটির চালক একই উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের ওবায়দুর রহমানের ছেলে আবু মুসা (১৮) ও আরেক যাত্রী সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন (২৫)।

আজ সকালে নিহত মাহিমাদের বাড়িতে দেখা যায় শোকের মাতম। শোকের ছায়ায় স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা গ্রাম। বাড়ির উঠানে আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও শত শত মানুষ। ২ সন্তানের মরদেহ সামনে নিয়ে হাসপাতালে থাকা আরেক সন্তান আর স্ত্রীর কথা বলতে বলতে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন হেলাল।

হেলালের বাড়িও যাদবপুর গ্রামেই। তিনি ঢাকার হেমায়েতপুরে একটি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরন কারখানায় চাকরি করেন। দুর্ঘটনার খবর শুনে রাতেই রওনা দিয়ে ভোরে বাড়ি পৌঁছান তিনি।

সোনিয়ার বড় চাচা ছোটন হোসেন বলেন, খাদিজার গলায় টিউমার ছিল। টিউমার অপারেশনের জন্য শুক্রবার বিকেলে ইজিবাইকে যশোর শহরে একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন সোনিয়া। পথে লেবুতলা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা মাগুরাগামী রয়েল পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সোনিয়ার যমজ ২ ছেলে হাসান-হোসেন, মা মাহিমা খাতুন,খালা রাহিমা খাতুন ও খালাতো বোন তাহিরা খাতুন। সোনিয়া ও তার মেয়ে খাদিজা গুরুতর আহত হন।

তিনি আরও জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় যাদবপুর ঈদগাহ মাঠে তার পরিবারের নিহত ৩ জনের জানাজা হয়। জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। জানাজা শেষে তাদেরকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

একই উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের সেকেন্দারপুর গ্রামে প্রবাসী সাইদুল ইসলামের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। সোনিয়ার খালা রাহিমা বেগম ও তার মেয়ে জেবা তাহিরার মরদেহ ছিল সেখানে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা গ্রাম।

সাইদুল ইসলামের বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ১১ টায় জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

যশোর কোতয়ালী থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বাসচাপায় একই পরিবারের ৫ জন সহ ৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে যশোর কোতোয়ালি থানায়। বাসের চালক ও হেলপার এখনও আটক হননি।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago