সাগরে নিমজ্জিত জাহাজের উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি ৮ দিনেও, ফিরে এল পরিদর্শন দল

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬ জুলাই আমদানি পণ্যের কন্টেইনার নিয়ে পানগাঁও এক্সপ্রেস জাহাজটি রওনা দেওয়ার পর ভাসানচরের কাছে বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে এক দিকে কাত হয়ে যায়।
পানগাঁও এক্সপ্রেস
ভাসানচরের কাছে বঙ্গোপসাগরের ডুবোচরে আটকে আছে পানগাঁও এক্সপ্রেস। ছবি: সংগৃহীত

ভাসানচরের কাছে বঙ্গোপসাগরে গত ৬ জুলাই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আংশিক ডুবে যায় আমদানি পণ্যের কন্টেইনারবাহী জাহাজ পানগাঁও এক্সপ্রেস।

গত ৮ দিনেও জাহাজটি উদ্ধার না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা।

তাদের অনুরোধে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের নির্দেশে জাহাজটি পরিচালনাকারী বেসরকারি সংস্থা সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উদ্ধারকাজ শুরুর কথা জানিয়েছিল। 

সে অনুযায়ী উদ্ধারকাজ পরিদর্শনের জন্য দুপুরে রওনা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের হারবার অ্যান্ড মেরিন সদস্যের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। 

দুর্ঘটনাস্থলের কাছে পৌঁছে কোনো উদ্ধার তৎপরতা দেখতে না পেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন তারা।

এ খবর পেয়ে বেসরকারি সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বন্দর ভবনে তলব করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)।

চবক প্রতিনিধিদল বন্দরে ফিরে না আসায় সি গ্লোরি শিপিংয়ের কর্মকর্তারা রাত ১০টা পর্যন্ত বন্দরেই অবস্থান করেন।

গত ৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী ৭২টি কন্টেইনার নিয়ে পানগাঁও ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনালে যাচ্ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন জাহাজটি।

পথে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে জাহাজটি প্রথমে এক দিকে কাত হয়ে যায়। এতে শুরুতেই ৩টি কন্টেইনার জাহাজ থেকে সাগরে পড়ে যায়। 

দুপুরের দিকে জাহাজটি একটি ডুবোচরে আটকে যায়। ২ দিন পর গত রোববার জাহাজটি নিজে থেকেই সাগরের ঢেউয়ের কারণে সোজা হয় বলে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পরে সি গ্লোরির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে বৈরি আবহাওয়ার কারণে তারা উদ্ধারকাজ চালাতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার সকালে তারা উদ্ধারকাজ শুরু করবেন বলে আশ্বাস দেন।

চবক সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর এম ফজলার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সি গ্লোরির কর্মকর্তারা আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। এতটা পথ সাগরে গিয়ে আমরা প্রতারিত হয়েছি।'

দুর্ঘটনার পর থেকে আমদানিকারকরা তাদের পণ্য উদ্ধার তৎপরতা শুরুর জন্য বারবার শিপিং এজেন্ট সি গ্লোরির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো আশ্বাস পাননি বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার আমদানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে উদ্ধারকাজ দ্রুত শুরুর অনুরোধ করেন। পরে বন্দরের পক্ষ থেকে সি গ্লোরির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা আহ্বান করা হয়।

বন্দরের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানান, সভায় সি গ্লোরির কর্মকর্তারা বুধবার রাতে উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস দেন।

কুমিল্লার মেসার্স হালিম টেলিকমের চীন থেকে আমদানিকৃত মোবাইল ফোনের অ্যাক্সেসরিজ বহনকারী একটি কন্টেইনার ছিল ওই জাহাজে।

হালিম টেলিকমের স্বত্বাধিকারী এ কে হাসান টগর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বিভিন্ন আমদানিকারক গত শনিবার থেকে চট্টগ্রাম বন্দর, সি গ্লোরিসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দফায় দফায় যোগাযোগ করে আমাদের পণ্যসহ জাহাজটি উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে আসছি।'

'কিন্তু সি গ্লোরির কর্মকর্তারা প্রতিকূল আবহাওয়া, আইনি জটিলতাসহ বিভিন্ন অজুহাতে উদ্ধার কাজ শুরু হতে দেরি হবে বলে জানাতে থাকেন। দুর্ঘটনার দুয়েকদিনের মধ্যে উদ্ধারকাজ শুরু করা গেলে বেশকিছু কন্টেইনারের পণ্য রক্ষা করা যেত,' বলেন তিনি।

সি গ্লোরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন গত সপ্তাহে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, খারাপ আবহাওয়া ও উত্তাল সাগরের জন্য বারবার চেষ্টা করেও তারা উদ্ধারকারী দল পাঠাতে পারছিলেন না।

চট্টগ্রাম বন্দরের একজন সিনিয়র পাইলট ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করা উচিত ছিল। এখন যত দিন যাচ্ছে পলি জমে জাহাজের নিচের অংশ মাটিতে আরও দেবে যাচ্ছে। এতে করে উদ্ধারকাজ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।'

এছাড়া, যেহেতু দুর্ঘটনাস্থলটি অভ্যন্তরীণ মালামাল পরিবহনকারী লাইটার জাহাজের চলাচলের রুটে পড়ে, তাই দুর্ঘটনা এড়াতে নিমজ্জিত এই জাহাজটির উদ্ধারকাজ দ্রুত শুরু করা দরকার বলে জানিয়েছেন শিপিং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

Comments