ভোটার তালিকা হালনাগাদের সুযোগে তৈরি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের এনআইডি: ডিবি

চট্টগ্রামে ইসির ৫ ডেটা এন্ট্রি অপারেটরসহ গ্রেপ্তার ১০
ইসির ৫ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ও ২ রোহিঙ্গাসহ গ্রেপ্তার ১০ জন। ছবি: স্টার

চট্টগ্রামে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ৫ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ও ২ রোহিঙ্গাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার নগরীর হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই রোহিঙ্গা ছবি তুলতে গিয়ে আটক হয় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। 

পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় অস্থায়ী ভিত্তিতে ইসিতে নিয়োগ পাওয়া ৫ ডাটা এন্ট্রি অপারেটর।

গ্রেপ্তারকৃত ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা হলেন-ইয়াছিন আরাফাত (২২), নুর নবী ওরফে অনিক (২৫), মিজানুর রহমান (২৩), ফরহাদুল ইসলাম (২৮) ও ইমন দাশ (২০)।

গ্রেপ্তার রোহিঙ্গারা হলেন-কামাল হোসেন (৪৫) ও পারভীন আক্তার (২৫)। 

এছাড়া তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রোহিঙ্গা দালাল নুরুল আবসার ও শামসু মাস্টার এবং সিএনজিচালক কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ বুধবার দুপরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, 'ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নেওয়া হচ্ছিল পাহাড়তলী নির্বাচন অফিসের অধীনে হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেই কেন্দ্রেই ২ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া হয় ছবি তোলার জন্য। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের আটকের পর দায়িত্বরত ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের আটক করা হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'ওই কেন্দ্রে ৮ জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে ৫ জনই রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।'

'গ্রেপ্তার ৫ জনের মূলহোতা নুর নবী। তারা বিভিন্ন তথ্য সার্ভারে ইনপুট, ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ সংগ্রহ করেন। এ কারণে তারা রোহিঙ্গাদের সহজেই তালিকাভুক্ত করতে পারেন। আর ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে টাকার বিনিময়ে "আসল" জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গারা,' বলেন পুলিশ কর্মকর্তা আলী হোসেন।

তিনি আরও বলেন, 'আবছার ও শামসু মাস্টার বাংলাদেশি এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনের জন্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের কাছে খুব জনপ্রিয়। তারা রোহিঙ্গাদের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের কাছে পাঠায়।'
জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে রোহিঙ্গাদের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দিতে হয় বলে জানান তিনি।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (বন্দর) সামীম কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ঢাকা থেকেই জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করছে চক্রটি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এক কর্মচারী এই কাজে যুক্ত এবং মাত্র ১০ মিনিটেই জন্ম নিবন্ধন করে দেন তারা যা সার্ভারেও দেখা যায়।'

তিনি বলেন, 'ভোটার তালিকার অন্যতম প্রয়োজনীয় কাগজ অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ। আবছার ও শামসু মাস্টার যেসব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি এনআইডি তৈরি করতে চান তাদের নাম, বাবা-মার নাম, জন্মতারিখ লিখে একজনকে পাঠিয়ে দেন। প্রতিটি জন্ম নিবন্ধনের জন্য নেওয়া হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।'

তবে ডিএনসিসির ওই কর্মচারীর বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি পুলিশ।

এর আগে রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৯ সালে কোতোয়ালী থানায় করা মামলায় ইসির কর্মচারী ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটরসহ মোট ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছিলো নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন।

কাউন্টার টেররিজমের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবসারের নাম আগের ঘটনার সময় এসেছিল। তিনি রোহিঙ্গাদের আনতেন। তখনও তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি।'

কোতোয়ালী থানার ওই মামলায় আবসার ও শামসু মাস্টারকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঞ্জয় সিনহা।

'তারা সব জানতেন'

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার নুর নবী চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে অস্থায়ী ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসাবে প্রায় ৬ মাস আগে যোগ দেন। হাটহাজারী থানা নির্বাচন অফিসে পদায়ন হওয়ার পর সেখানে সাদ্দাম নামের আরেক কর্মচারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। 

পুলিশের দাবি, সাদ্দাম রোহিঙ্গাদের এনআইডি ফর্ম-২ সরবরাহ করে।

নুর নবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাদ্দাম হাটহাজারী থাকতেই কিছু লোক নিয়ে এসে ছবি তোলার কথা বলতেন। আমি তার কথা মতো ছবি তুলতাম। সিনিয়র হিসেবে তাকে আমি কোনো প্রশ্ন করতাম না। তবে ছবি তোলার পর তা সার্ভারে সেভ দিতাম না।'

'পাহাড়তলীতে বদলি হয়ে আসার পর এখানে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এবং কিছু লোক তিনি এখানেও পাঠিয়েছেন। আগের মতোই এখানেও আমি একই কাজ করেছি,' বলেন তিনি।

পুলিশের বক্তব্য, স্বাভাবিকভাবে একটি ফর্ম সার্ভারে ইনপুট দিলে ফর্ম প্রতি ২০ টাকা করে পান ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। তবে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে একটি ইনপুটে দেওয়া হয় ৯ হাজার টাকা।

উপকমিশনার আলী হোসেন জানান, এর সঙ্গে ঢাকার নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের একজনের সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় দুটি মামলা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

US opens door to tariffs on pharma, semiconductors

The trade war is raising fears of an economic downturn as the dollar tumbles and investors dump US government bonds, normally considered a safe haven investment.

57m ago