সুলতানাকে কোন ক্ষমতাবলে মামলা ছাড়াই র‍্যাব তুলে নিল, প্রশ্ন হাইকোর্টের

সুলতানা জেসমিন
সুলতানা জেসমিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁর সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকা সত্ত্বেও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কোন ক্ষমতাবলে তাকে তুলে নিয়েছিল, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

একটি রিট আবেদনের শুনানিকালে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ প্রশ্ন তোলেন।

নওগাঁর একটি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে গত ২২ মার্চ র‍্যাব আটক করে। ২৪ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। আবেদনে এ ঘটনা তদন্তে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

রিট আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, 'বলা হয়েছে যে র‌্যাব তাকে (সুলতানা) ২২ মার্চ সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে তুলে নেয়। অসুস্থ হওয়ার পর একই দিন দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে তাকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একই দিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়। তাকে আটক থেকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে কোথায় রাখা হয়েছিল এবং সে সময় তার কী হয়েছিল?'

উদ্বেগ প্রকাশ করে আদালত বলেন, 'তিনি (সুলতানা) হয়তো গুরুতর অপরাধ করেছেন। কিন্তু তার সুরক্ষা এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। র‌্যাবকে নিয়ন্ত্রণ করার আইন আছে। বিনা মামলায় র‌্যাব কি কাউকে আটক করতে পারবে?'

'তার (সুলতানা) সঙ্গে র‍্যাবের আচরণ আইনসঙ্গত ছিল কি না, তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে,' হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন।

বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে সুলতানার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন এবং আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য ৫ এপ্রিল দুপুর ২টা নির্ধারণ করেন।

জেসমিন সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় গত ২৭ মার্চ দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলে রিট আবেদন করা আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক হাইকোর্টকে বলেন, ডাকাতি, খুন ও মাদক চোরাকারবারের মতো বিশেষ কিছু অপরাধ প্রতিরোধে র‌্যাবকে একটি বিশেষ এলিট বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'র‌্যাব সদস্যরা ওই নারীকে (সুলতানা) ফেসবুক পোস্টের জন্য তুলে নেয়। যদিও এ ধরনের অপরাধে তিনি অভিযুক্ত ছিলেন না।'

'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে দায়ের করা মামলার তদন্ত করার কোনো কর্তৃত্ব র‍্যাবের নেই,' বলেন তিনি।

এই আইনজীবী আরও বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ১৫৪ ধারা অনুযায়ী এ ধরনের মামলার তদন্ত করার ক্ষমতা পুলিশের আছে। কিন্তু সুলতানাকে আটকের ৩১ ঘণ্টা পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে মামলা করা হলো, র‍্যাব তার তদন্ত করে।'

'র‌্যাব সুলতানাকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করেনি এবং র‌্যাবের এ কাজ অবৈধ ও বেআইনি,' যোগ করেন তিনি।

রিট আবেদনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন হাইকোর্টকে বলেন, 'সুলতানা জেসমিনকে ২৪ ঘণ্টার বেশি র‌্যাব হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি, এমন দাবি একেবারেই ভুল।'

নওগাঁর হাসপাতাল ও র‌্যাব অফিসের কিছু নথি আদালতে উপস্থাপন করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'সুলতানা জেসমিনকে এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় হেফাজতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।'

তিনি বলেন, 'তার কিছু আপত্তিকর মোবাইল ফোন কথোপকথন আছে যা খোলা আদালতে প্রকাশ করা উচিত নয়। তাকে আটকের পর সেগুলো অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে বা প্রকাশিত হয়েছে। এজন্য তিনি হতাশ হয়ে পড়েন এবং মানসিকভাবে চাপ অনুভব করেন।'

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা যে কোনো মামলার তদন্ত করার এখতিয়ার প্রাসঙ্গিক আইনে র‍্যাবের আছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
CAAB pilot licence irregularities Bangladesh

Regulator repeatedly ignored red flags

Time after time, the internal safety department of the Civil Aviation Authority of Bangladesh uncovered irregularities in pilot licencing and raised concerns about aviation safety, only to be overridden by the civil aviation’s higher authorities.

9h ago