চট্টগ্রাম

নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত আ. লীগ, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

অনেক আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ কারণে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত।
চট্টগ্রাম প্রচারণা
চট্টগ্রাম-৯ আসনে নৌকার প্রার্থী মহিবুল মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্বাচনী সভা। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে যখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তখন বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টিতে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির জন্য চট্টগ্রাম-৫ ও চট্টগ্রাম-৮ আসন ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

এ দুটি আসনসহ অনেক আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ কারণে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত।

এদিকে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পর চট্টগ্রামের অধিকাংশ বিএনপি নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে দেখা যায়নি অনেককে। 

চট্টগ্রাম-১০
চট্টগ্রাম-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমের নির্বাচনী সভা। ছবি: সংগৃহীত

নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির  কার্যালয়সহ বিভিন্ন ইউনিটের কার্যালয় ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তালাবদ্ধ ছিল।    

তবে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর কার্যালয়টি কয়েক ঘণ্টার জন্য খোলা হয়েছিল বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় তালাবদ্ধ, সামনের ফুটপাতে পুলিশের অবস্থান। সেখানে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।    

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাসেম বক্করকে দেড় মাস পর গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে দেখা যায়। 

তারা সে সময় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় দলের ডাকা 'অসহযোগ' আন্দোলনের লিফলেট বিতরণ করছিলেন।   

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২৮ অক্টোবরের পর থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।'

বিএনপির কার্যালয়
বন্দরনগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় তালাবদ্ধ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কার্যালয়। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

তিনি জানান, গত দেড় মাসে চট্টগ্রাম নগরীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪০টি, চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলাগুলোতে ৩২টি এবং উত্তরের উপজেলাগুলোতে ৩৩টি মামলা করা হয়েছে। এ সময়ে মোট ১৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

ডা. শাহাদাত বলেন, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদিও দাবি করেছেন যে, শুধু ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো পুলিশ নির্বিচারে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে এবং পরে বিভিন্ন বানোয়াট মামলায় তাদের আসামি করা হচ্ছে।'

দলীয় কার্যালয় দেড় মাস কেন বন্ধ ছিল জানতে চাইলে শাহাদাত বলেন, 'কোনো কর্মসূচি না থাকায় অফিস বন্ধ। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে অফিসে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন উপলক্ষে আমি নিজেই অফিসের তালা খুলেছিলাম।'

আসন্ন সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এবারের নির্বাচনকে কোনোভাবেই সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। এটা নির্বাচনের কোনো সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে না। নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সব আসনেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। ফলাফল পূর্বনির্ধারিত। ৩০টির মতো আসন তাদের মিত্র ও অন্যদের দেওয়া হতে পারে।'  

বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, 'যেকোনো আন্দোলনের সাফল্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে জনগণের ওপর। আমরা জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছি এবং আমি আশা করি মানুষ এই আহ্বানে সাড়া দেবে।'

নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোন দল নির্বাচনে আসবে আর কোন দল আসবে না, এটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত এবং এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।'

তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মোট ২৭টি  রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এবং তাই নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, এ কথা ঠিক নয়।' 

'বিএনপি কেন নির্বাচনে আসেনি? কারা তাদের নির্বাচনে আসতে নিষেধ করেছে বা বাধা দিয়েছে,' প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাছির বলেন, 'জনগণ বিএনপির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।' 

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছে। নিরপরাধ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ সত্য নয়।'

Comments