শোকজের পরেও নজরুল ইসলাম বাবুর নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি কর্মকর্তা স্ত্রী

‘আমরাও এমন অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী সবাইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।’
শোকজের পরেও নজরুল ইসলাম বাবুর নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি কর্মকর্তা স্ত্রী
সায়মা আফরোজ। ছবি: সংগৃহীত

কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাওয়ার পরও আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা আফরোজ ইভা নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়ে তার স্বামী নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর পক্ষে ভোট চেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একইসঙ্গে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন সাতজন ব্যক্তিও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ একই আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটনের।

সোমবার বিকেলে উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সায়মা আফরোজ ইভা।

সায়মার স্বামী নজরুল ইসলাম বাবু নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্যও।

এর আগে উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পান সায়মা। গত রোববার তাকে তলব করেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি সিনিয়র সহকারী জজ ধীমান চন্দ্র মন্ডল।

নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরে তিনি তার প্রতিনিধির মাধ্যমে এই ব্যাপারে কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন।

তবে, স্থানীয় সূত্র জানায়, বিকেলেই খাগকান্দায় তিনি নৌকার পক্ষে উঠান বৈঠকে অংশ নেন। উঠান বৈঠকের এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাহবুব আলম।

মাহবুব আলম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অনুষ্ঠানের ছবি পোস্ট করে লেখেন, 'আমার এলাকায় মা-বোনদের নিয়ে নির্বাচনী আলোচনা সভা করলাম। সবাইকে ধন্যবাদ।'

যুবলীগ নেতার পোস্ট করা ছবিতে ডা. সায়মা আফরোজ ইভাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মাহবুব আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাগকান্দা ইউনিয়নের কয়েকটি জায়গায় আজকে নৌকার প্রচারণা হইছে। আমি নিজে একটা নির্বাচনী উঠান বৈঠকের আয়োজন করছি। বিকেলে ওই অনুষ্ঠান হয়। সেইখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভাবি ডা. সায়মা আফরোজ। তিনি মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়া কথা বলছেন। স্বাস্থ্যখাতে কী কী উন্নয়ন হইছে, সেইটা লোকজনের সামনে বলছেন। উনার স্বামীর ব্যাপারে বলছেন, আমার স্বামী যদি আপনাদের উন্নয়ন করে থাকে, তাহলে ভোটের দিন আপনারা যেইটা ভালো বুঝবেন সেইটা কইরেন।'

এই উঠান বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন খাগকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম, দুপ্তারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহিদা মোশারফ প্রমুখ।

বিষয়টি নিয়ে জানতে ডা. সায়মা আফরোজ ইভার নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

এই আসনের জাপা প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটনের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সরকারি কর্মকর্তা স্ত্রীই শুধু নন, এই আসনে প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, এমন সাতজন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।

'এই কর্মকর্তারা হলেন—দুপ্তারা সেন্ট্রাল করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন সরকার, রোকন উদ্দিন মোল্লা গার্লস ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মইনুল হোসেন মানিক, গোপালদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদেকুর রহমান কামাল, জাঙ্গালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদ হোসেন, জাহানারা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক, গাজীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান হোসেন প্রধান, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার। তারা এর আগেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য তারা কয়েকদিন আগে ট্রেনিংও নিয়েছেন। তারপরও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন', বলেন লোটন।

লাঙল প্রতীকের এই প্রার্থী আরও বলেন, 'শুধু যে প্রচারণা চালাচ্ছেন তা নয়, তারা বলছেন, আমাদের জীবন দিয়ে হলেও বাবুকে (নৌকার প্রার্থী) আমরা পাস করিয়ে আনব। এই বিষয়ে আমরা তালিকা করেছি, মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে আমরা অভিযোগ জানাব।'

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দুপ্তারা সেন্ট্রাল করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন সরকার ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি খাগকান্দা ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে ডা. সায়মা আফরোজ ইভাও ছিলেন। অনুষ্ঠানটি নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছিল।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরাও এমন অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী সবাইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।'

Comments