সুনামগঞ্জ-১

এমপি রতনের সভায় সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে ক্ষমা চাইলেন আ. লীগ নেতা

‘এটা না বুঝে স্লিপ অব টাং হয়ে গেছে। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি আর আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির দল। আমিও সেই আদর্শে বিশ্বাস করি। এ বক্তব্যের পর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাকে ডেকেছিলেন, তাকেও জানিয়েছি যে আমার ভুল হয়েছে।’
গত বুধবার ধর্মপাশার গোলকপুরে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা নবী হোসেন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের উপস্থিতিতে নির্বাচনী সভায় ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরবর্তীতে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিয়েছেন জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নবী হোসেন।

তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকার। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত তিনবারের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গত বুধবার ধর্মপাশা উপজেলার গোলকপুরে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সমর্থনে একটি নির্বাচনী সভা আয়োজন করা হয়। এ সভায় প্রার্থীর উপস্থিতিতে জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নবী হোসেন ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখেন যার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে।

বক্তব্যে নবী হোসেন সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়া সেনগুপ্তের পরিবর্তে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদের মনোনয়ন দেওয়া, সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে 'হিন্দু কোটায়' মনোনয়ন, এই আসনের মুসলিমদের ইমানি দায়িত্ব কেটলি (মোয়াজ্জেম রতনের প্রতীক) মার্কায় ভোট দেওয়া ইত্যাদি নানা মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে নবী হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, 'এটা না বুঝে স্লিপ অব টাং হয়ে গেছে। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি আর আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির দল। আমিও সেই আদর্শে বিশ্বাস করি। এ বক্তব্যের পর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাকে ডেকেছিলেন, তাকেও জানিয়েছি যে আমার ভুল হয়েছে।'

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, 'বক্তব্যের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর আমি তাকে তলব করি। ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে তাকে জানিয়েছি।'

'তিনি স্বীকার করেন যে তিনি অজ্ঞতাবশত আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং ভবিষ্যতে আর এ ধরণের আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন না মর্মে লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন। এ কারণে তাকে অভিযোগ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছি,' বলেন তিনি।

নবী হোসেনের সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন প্রথমে তার উপস্থিতিতে বক্তব্য দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

বক্তব্যের ভিডিওতে তাকে সেখানে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে—এ কথা জানানোর পর তিনি বলেন, 'আরেকজন নেতার বক্তব্যের জের ধরে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এমনটা বলেছেন। এটা "স্লিপ অব টাং" বলে আমি মনে করি।'

তিনি বলেন, 'আমি বিগত ১৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করেছি। তাহিরপুরে নবনির্মিত একটি সেতুর নামকরণ আমি হযরত শাহ আরেফিন ও অদ্বৈত মহাপ্রভুর নামানুসারে 'শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতু নামকরণ করেছি। আমি সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।'

যা বলেছিলেন নবী হোসেন

৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নবী হোসেন বলছেন, 'আমাদের মনোনয়ন না দেওয়ার কারণ হলো 'হিন্দু কোটা'। এবার আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু কোটায় ১৫টি সিট দিয়েছেন। তাদের কোটা আছে। এই কোটা প্রথায় ৫০ বছর ধরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কোটাগত নির্বাচন করতেন। তার স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তাও দুইবার নির্বাচন করেছেন।'

'এবার পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে কাকুতি-মিনতি করেন তার আপন ভাই আমীন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে সব কূল রক্ষা করে চলতে হয়। প্রধানমন্ত্রী উনার কথায় জয়া সেনগুপ্তাকে বাদ দিয়ে আল আমীন চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছেন,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আপনারা এখন নৌকার প্রার্থীর জন্য এক হয়ে গেছেন। কিন্তু দিরাই-শাল্লার দিকে চেয়ে দেখুন সেখানে ৩৯ ভাগ হিন্দু ভোট। তারা জয়া সেনগুপ্তার প্রতীক কেটলিতে ভোট দেওয়ার জন্য কাজ করছেন।'

'আমাদের আসনে আমরা মুসলমানরা ৮৭ পার্সেন্ট। সনাতনরা মাত্র ১৩ পার্সেন্ট। এখন আপনারাই সিদ্ধান্ত নেন, ভগবান আমাদের শাসন করবেন, না আমরা ৮৭ পার্সেন্ট মুসলমান ঈমানি দায়িত্ব পালন করব? যদি ঈমানি দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে ৭ জানুয়ারি কেটলিকে ভোট দেবেন,' বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।

Comments