নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কোথাও শূন্য, কোথাও শতভাগ

রোববার সংসদ নির্বাচনে ২৭ কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি, ২ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, ৬ কেন্দ্রে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, ৫ কেন্দ্রে ৯৪ শতাংশ মানুষ ভোট দেন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভারতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটের দিন দুপুরের আগে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল শতভাগ। দুই কেন্দ্রে ৯৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। 

নির্বাচন কমিশনের ভোটার উপস্থিতির তথ্য থেকে এমনটাই জানা গেছে।

চট্টগ্রাম-৩ আসনের আওতাধীন সন্দ্বীপের মমতাজুল উলুম মাদ্রাসায় ১০০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।

এই কেন্দ্রের ভোটার তিন হাজার ৯৮০ জন। তবে ভোট গণনার সময় দুই হাজার ৩৫৭টি ভোট বাতিল করা হয়।

এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান দল মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

এছাড়া, গাইবান্ধা-৪ আসনে গোবিন্দগঞ্জের শিবপুর ফজরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রেও ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে। 

নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, এই কেন্দ্রে মোট দুই হাজার ৪৫০ ভোট দেখানো হলেও গণনার সময় ৬৬২ ভোট বাতিল করা হয়।

এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ দুই লাখ এক হাজার ১৭১ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাত্র চার হাজার ভোট পান।

এ দুই আসনে গড় ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ ও ৫৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।

ভোট বাতিলের প্রধান কারণ, প্রতীকে স্পষ্টভাবে রবার স্ট্যাম্পের সিল দেখা না যাওয়া।

অন্য কিছু কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোটার উপস্থিতির কথা জানা গেছে।

মৌলভীবাজার-৪ আসনে কমলগঞ্জ উপজেলার তেতইগাঁও রশিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯৮ দশমিক ১২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রের নিবন্ধিত চার হাজার ২০৬ ভোটারের মধ্যে চার হাজার ১২৭ জনই ভোট দিয়েছেন।

একইভাবে মাজাহারুল উলুম গাউসিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় (উত্তর ভবন) নারীদের জন্য নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে ৯৮ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। 

নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-২ এর ফটিকছড়িতে অবস্থিত এই কেন্দ্রের চার হাজার ৯৪ জন ভোটারের মধ্যে চার হাজার ১৫ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে দেখানো হয়েছে।

এই কেন্দ্রের এক হাজার ৫৭৮টি ভোট বাতিল করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ছয় কেন্দ্রে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি দেখানো হয়। এগুলো হলো—শেরপুর ২ আসনের মীরগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের চালিতাডাঙ্গা বেগম বশিরুন্নেসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, মাগুরা-২ আসনের মশাখালী ইউনিয়নের মশাখালী দ্বাদশ পল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মৌলভীবাজার-৩ আসনের তারাপাশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং ময়মনসিংহ-২ আসনের কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

গোপালগঞ্জ-২, লালমনিরহাট-২, সিরাজগঞ্জ-২, বাগেরহাট-১ ও গোপালগঞ্জ-৩ আসনের পাঁচ কেন্দ্রে ৯৪ শতাংশ করে ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছে।

১০০টিরও বেশি কেন্দ্রে ৯০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি কেন্দ্র গোপালগঞ্জ-৩ আসনে। এই আসনটিতে জয়লাভ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপর ১৭টি কেন্দ্র গোপালগঞ্জ-২ আসনে। সেখানে জয়লাভ করেন শেখ সেলিম। 

এ ছাড়া শেরপুর-১ এর ১০টি ও সিরাজগঞ্জ-১ এর সাতটি কেন্দ্রে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির ২৭ কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। সেখানে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ৫২ হাজার ২৪১।

৫১২ কেন্দ্রে ১০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে ৪১ হাজার ৯০৮ জন ভোটার ছিল।

এসব কেন্দ্রের বেশিরভাগই কুড়িগ্রাম-২, কক্সবাজার-১, গাজীপুর-১, গাজীপুর-২, চট্টগ্রাম-১০, চট্টগ্রাম-৫, চট্টগ্রাম-৩, চট্টগ্রাম-১১, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, ঢাকা-১০, ঢাকা-১১, ঢাকা-১৫, ঢাকা-১৬, ঢাকা-১৭, ঢাকা-১৮, ঢাকা-১৯, ঢাকা-২, ঢাকা-৮, নারায়ণগঞ্জ-৪, বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, মৌলভীবাজার-৩, সিলেট-১ ও সিলেট-৫।

নির্বাচন কমিশনের সিস্টেমস ম্যানেজার মো. আশরাফ হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, যে দুই কেন্দ্রে শতভাগ ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছে, সেখানে সম্ভবত প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ভুল করেছেন।

তিনি জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে যতজন নিবন্ধিত ভোটার আছেন, ঠিক ততগুলো ব্যালট পেপার দেওয়া হয়।

'এ দুই ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা যেসব ব্যালটে ভোট পড়েনি, সেগুলোর স্লিপ সংগ্রহ করে সেগুলোকে ভুলবশত বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন। পরবর্তীতে তারা ব্যালটের সংখ্যাকেই ভোটের সংখ্যা হিসেবে ঘোষণা দেন,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments