নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হতে পারে আজ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে তফসিল ঘোষণা করতে পারেন।
জাতীয় বাজেট ২৩-২৪
ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশন আজ বুধবার সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে।

এ ছাড়া, নির্বাচনের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের পরিবর্তে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবেও ঘোষণা আসতে পারে।

একাধিক নির্বাচন কমিশনার দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনে কোনো ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সম্ভাবনা নেই। কারণ, এতোগুলো ক্যামেরার ফিড পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হবে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করার সময় নির্বাচন কমিশন বলেছিল, তারা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করবে। এ ছাড়া, যতটা সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটানিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল কমিশনের।

দুজন নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সূত্র গতকাল জানিয়েছে, তফসিল চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিশনাররা আজ বিকেল ৫টায় বৈঠকে বসবেন এবং এরপর সন্ধ্যায় একটি টেলিভিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশে ভাষণে তফসিল ঘোষণা করবেন।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ও সচিব জাহাংগীর আলম গতকাল বলেন, কখন ও কীভাবে তফসিল ঘোষণা করা হবে সে বিষয়ে জানাতে আজ সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করা হবে।

তিনি জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণে তফসিল ঘোষণা করবেন।

কোনো শর্ত ছাড়াই আলোচনার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুয়ের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণায় এই চিঠির কোনো প্রভাব পড়বে না।

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে কমিশন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চাইছে তারা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন আয়োজন করবে এবং বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পর একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে দুই নির্বাচন কমিশনার জানান, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে দুর্গম এলাকা ছাড়া সব ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।

জনবলের ঘাটতির কথা উল্লেখ করে গত ৩০ অক্টোবর এক বৈঠকে একদিন আগে ব্যালট পেপার পাঠানোর পক্ষে কথা বলেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা।

নির্বাচনী কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং র‌্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হতে পারে। নির্বাচন শুরুর আগে দুই বা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট নিয়ে যেতে পারবে তারা।

ভোটকেন্দ্রে কখন ব্যালট পৌঁছে দেওয়া হবে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, 'সেটা তফসিল ঘোষণার সময় জানানো হবে।'

নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেছেন, কমিশনের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর অবরোধের কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পর তারা গণপ্রজ্ঞাপন দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ করবেন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তাদের আইনি ক্ষমতা থাকবে।

নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা চেয়ে এবং ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি না করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি আধা-সরকারি চিঠিও পাঠাবে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হলেই প্রচারণা শুরু করা যাবে।

মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন ব্যবহার বা অন্যান্য সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। তাদের সরকারি তহবিল থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো অনুদান দেওয়ারও অনুমতি নেই।

এই সময়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য সরকারকে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন বা উদ্বোধন করতেও দেওয়া হবে না।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও বিলবোর্ড সরানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমাসহ নির্দেশনা দেবে নির্বাচন কমিশন।

তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেছে কমিশন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মন্ত্রণালয়ের প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক সম্পন্ন করেছে।

নির্বাচন কমিশন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জনের হালনাগাদ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে।

প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, নির্বাচন আয়োজনে প্রায় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।

আগামী ৬ থেকে ৯ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো দিন নির্বাচন হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

 

Comments