এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর রেকর্ড

‘এমপি পদ অনেকের কাছে “সোনার হরিণ”।’
election_symbolic-photo_ds
প্রতীকী ছবি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এবার রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেওয়ার কারণে এবার এই পরিমাণ স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলটির অন্তত ৪৪২ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ জন বর্তমান সংসদ সদস্যকে এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

স্বতন্ত্রের উত্থান

মোট কতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে ইসির উচ্চপদস্থ সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, এর সংখ্যা দুই হাজার ৭১১।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের নির্বাচনে মোট ৪৯৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে ১২৮ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

সব প্রধান রাজনৈতিক দলসহ মোট ৩৯টি রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচনে অংশ নেয়।

২০১৪ সালে প্রায় ১৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে ১০৪ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেই বছর বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন করায় কেবল ১২টি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যার ফলে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে ১২০ জন, ১৯৭৯ সালে ৪২২ জন, ১৯৮৬ সালে ৪৫৩ জন, ১৯৮৮ সালে ২১৪ জন, ১৯৯১ সালে ৪২৪ জন, ১৯৯৬ সালে ২৮৪ জন, ২০০১ সালে ৪৮৬ জন ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১৫১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্বাচনকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বেশি প্রার্থী মানে বেশি ভোটার উপস্থিতি, সেটাও আমাদের মাথায় আছে। তবে সুশৃঙ্খল দল হিসেবে প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করবে আওয়ামী লীগ।'

সুশাসনের নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, এবার রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, 'তারা (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থী হিসেবে তাদের নেতাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়ার কৌশল গ্রহণ করেছে, যাতে নির্বাচন নিজেদের মধ্যেই হয়।'

'এমপি পদ অনেকের কাছে "সোনার হরিণ"। তারা এমপি হলে অর্থ ও খ্যাতি যেমন পাবেন, তেমনি এলাকায় আধিপত্যও অর্জন করতে পারবেন। এই কারণে অনেকেই এমপি হতে চান', বলেন তিনি।

এদিকে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও তার মিত্ররা।

কিন্তু সরকার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করায় বিরোধী দলগুলো ১৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে।

দলভিত্তিক প্রার্থী

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ৩০৩ জন। তাদের মধ্যে পাঁচটি আসনে দুইজন করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আর জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনয়নপ্রত্যাশী ৩০৪ জন, যার মধ্যে ১৮টি আসনে দুইজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া, জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) ২০ জন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের ছয়জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩৪ জন, গণতন্ত্রী পার্টির ১২ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ছয় জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১৪ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (ইনু) ৯১ জন, জাকের পার্টির ২১৮ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৪৭ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১৪ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ দুইজন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৪২ জন, গণফোরামের নয়জন, গণফ্রন্টের ২৫ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মুকিত) ১৩ জন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৮ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ৪৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট্রের ৩৭ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (পাঞ্জা) পাঁচজন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের পাঁচজন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের ৫৫ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ১১৬ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৫১ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৪৯ জন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী ৮২ জন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই দলগুলো বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের সহযোগী এবং স্বল্প পরিচিত ও নবগঠিত দল।

Comments

The Daily Star  | English

Asphalt melting due to heat, bargain bitumen

Amid the persisting heatwave, road surface in several districts has melted due to what experts say is the use of bitumen not strong enough to withstand extreme heat.

1h ago