পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে: গেটম্যান নেই ৭৭১ রেলক্রসিংয়ে

রেলক্রসিং
ছবি: সংগৃহীত

গেটম্যান ছাড়া চলছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৭৭১টি রেলক্রসিং। প্রতিনিয়ত এসব ক্রসিংয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে গঠিত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলে মোট রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩৭৫টি। এরমধ্যে অবৈধ রেলক্রসিং রয়েছে ৯৯১টি। 

এ ছাড়া ৭৭১টি রেল ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান। 

চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায় রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ পর্যটক নিহতের পর রেলক্রসিং নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এরই মধ্যে পূর্বাঞ্চল রেলে যেসব অরক্ষিত অর্থাৎ গেটম্যান নেই, এ ধরনের গেটে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন রেলের (পূর্বাঞ্চল) মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। 

ছবি: সংগৃহীত

তিনি এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ''অনেক অবৈধ রেলগেট আছে। এগুলো একেকটি মরণফাঁদ। এরই মধ্যে বৈধ যে গেটগুলো আছে, সেগুলো আপগ্রেড করার পরিকল্পনা আছে। তবে, লোকবল সংকটের অভাবে ৭৭১টি গেট 'আনম্যান' রয়ে গেছে। অবৈধ গেটগুলোর মধ্যে ১৭৯টি গেট নতুন করে আপগ্রেড করা হয়েছে। ব্যারিয়ার দেওয়া হয়েছে।'

এদিকে বিভিন্ন রেলগেটের দায়িত্বে থাকা গেটম্যানরা জানিয়েছেন, রেলওয়ে তালিকায় বৈধ গেটে অনেকগুলোতেই ব্যারিয়ার নষ্ট হয়ে পড়েছে কিংবা ভেঙে গেছে। তাছাড়া 'এ', 'বি' ও 'সি' ৩ ক্যাটাগড়িতে যে লোকবল থাকার কথা সেটাও নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গেটম্যান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহরের ভেতর স্পেশাল রেল ক্রসিংয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনের দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু কোথাও ৩ জন আবার কোথাও ৪ জন কাজ করছেন।'

জুলাই-২০২১ পর্যন্ত হালনাগাদ করা একটি তালিকায় দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে গেটকিপারের জন্য মঞ্জুরীকৃত পদ ২৪২টি। এর মধ্যে কর্মরত আছে ১৫৭ পদে, বাকি ৮৫টি পদ শূন্য।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান রেলক্রসিংয়ে সংকট কাটাতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী গেটম্যান। তবে, তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন খোদ রেলওয়ে কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কামরুল আহসান জানান, বৈধ রেলগেটগুলোতেই পর্যাপ্ত গেটম্যান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অবৈধগুলো আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এসব গেট বন্ধ করা কিংবা নিরাপত্তা জোরদারের ব্যাপারে রেলওয়ের আপত্তি কানে তুলছে না সংশ্লিষ্টরা।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত গতিতে ট্রেন চলাচলে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব অবৈধ রেলক্রসিং। মূলত অরক্ষিত বা আনম্যান গেট গুলোর কারণেই রেলপথে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ছে। 

লোকো মাস্টার ওমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্বল ট্র্যাক ও পথে পথে অবৈধ রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে সর্বোচ্চ গতিতে নতুন ইঞ্জিন চালানো যাচ্ছে না। যেখানে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি থাকার কথা সেখানে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে চলছে ট্রেন। জনবল সংকটের কারণে রাতে বিভিন্ন রেলপথে গেটম্যান না থাকায় অনুমান করে রেলক্রসিং এলাকায় টানা হুঁইসেল বাজিয়ে ট্রেন চলাচল করছে।'

জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'অবৈধ রেলগেটগুলোর ব্যাপারে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের একটা সভা হয়েছে। যেখানে রেলমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অবৈধ রেলক্রসিংগুলো দ্রুত আপগ্রেড করার চেষ্টা চলছে। বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Banks income from investment in bonds

Bond boom contributes half of bank income

The 50 banks collectively earned Tk 39,958 crore from treasury bonds in 2024, up from Tk 27,626 crore in the previous year, according to an analysis of their audited financial statements.

14h ago