পোশাক শ্রমিকের দীর্ঘশ্বাস ‘দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর’

পোশাক শ্রমিক আব্দুল মোমিন। কাজ করেন সাভারের একটি কারখানায়। সর্বসাকুল্যে বেতন পান ১২-১৩ হাজার টাকা। গত কয়েক মাস ধরে কারখানায় কাজ কম থাকায় ওভারটাইম হচ্ছে না। গত মাসে পারিশ্রমিক পেয়েছেন ১১ হাজার টাকা।
সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা বাজারে পোশাক শ্রমিক আব্দুল মোমিন। ছবি: স্টার

পোশাক শ্রমিক আব্দুল মোমিন। কাজ করেন সাভারের একটি কারখানায়। সর্বসাকুল্যে বেতন পান ১২-১৩ হাজার টাকা। গত কয়েক মাস ধরে কারখানায় কাজ কম থাকায় ওভারটাইম হচ্ছে না। গত মাসে পারিশ্রমিক পেয়েছেন ১১ হাজার টাকা।

আজ শুক্রবার সারা মাসের বাজার করতে সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা বাজারে গিয়েছিলেন। বাজারে সব পণ্যের দামই বেড়েছে দেখে সর্বমোট সাড়ে ৩ হাজার টাকার বাজার করে ফিরে এসেছেন।

মোমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একা সাভারে থাকি। বেতন পাওয়ার পর পুরো মাসের বাজার একসঙ্গে করি। প্রতি মাসে আমার আড়াই হাজার টাকার বাজার করলেই হয়ে যায়। কিন্তু আজ সাড়ে ৩ হাজার টাকার বাজার করতে হয়েছে। তারপরও পুরো বাজার করিতে পারিনি।'

ছবি: স্টার

নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই বেড়েছে উল্লেখ করে আব্দুল মোমিন বলেন, 'জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সব পণ্যের ওপরই প্রভাব পড়েছে। গত মাসে ব্রয়লার মুরগি কিনেছিলাম ১৫০ টাকা কেজি, তবে আজ কিনতে হলো ২০০ টাকায়। চাল ছিল ৫০ টাকা কেজি, আজ কিনেছি ৫৭ টাকায়। সয়াবিন তেল ছিল ১৮০ টাকা কেজি, আজ কিনলাম ২০০ টাকায়।'

'তেলাপিয়া মাছ গত মাসে ছিল ১৩০ টাকা কেজি, আজ কিনতে হলো ২০০ টাকায়। ১২০ টাকার পাঙ্গাশ মাছও এখন ১৬০ টাকা কেজি। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৩৪ টাকা থেকে হয়েছে ৪৫ টাকা। বাজারে সবজির দামও বেশ চড়া। ৫০ টাকা কেজির নিচে তেমন কোনো সবজিই নেই। কী খেয়ে বাঁচবো। পেপের দামও বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি', যোগ করেন তিনি।

ছবি: স্টার

মোমিন বলেন, 'আমরা নিম্নআয়ের মানুষ। কী আর করবো। আগে মাস শেষে কষ্টের টাকা কিছু গ্রামের বাড়িতে পাঠাতাম আর কিছু সঞ্চয়ের চেষ্টা করতাম। এখন সঞ্চয় তো দূরের কথা, পরিবার-পরিজন নিয়ে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।'

নিত্যপণ্যের দাম নাগালে এলে জীবন বাঁচবে। আর বেতন না বাড়লে শহরে থাকাই অসম্ভব হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

সাভার তালবাগ এলাকার মুদি ও কাঁচামালের দোকানদার পারভেজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর ৫০ কেজির চালের বস্তা ২৫০-৩০০ টাকা বেড়ে গেছে। পাইকারিভাবেই প্রায় সব ধরনের পণ্য ৮-১০ শতাংশ বেশি দরে আমাদের কিনতে হচ্ছে।'

ছবি: স্টার

মিফরা পোল্ট্রি বিজনেসের মালিকদের একজন মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা মূলত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্রয়লার মুরগি এনে সাভারের বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রি করি। খাদ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া ও খামারির সংখ্যা কমে যাওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে ধীরে ধীরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ছিল।'

'সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের মুরগির দামই বেড়েছে। আমাদের পরিবহন খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া, খামারিদের কাছ থেকেই বেশি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে। আজ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯২ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে', বলেন তিনি।

Comments