বাপেক্স কেন নিষ্ক্রিয়, বিদ্যুৎখাতের ভর্তুকি কারা পায়, প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের

বাপেক্স কেন নিষ্ক্রিয়
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত “বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট: নাগরিক ভাবনা” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই প্রশ্ন তোলেন। ছবি: স্টার

দেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (বাপেক্স) কেন নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে?- আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত "বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট: নাগরিক ভাবনা" শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই প্রশ্ন তোলেন।

তারা বলেছেন, দেশীয় জ্বালানি উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহ না করে উচ্চ মূল্যে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট ডেকে আনা হয়েছে।

মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, 'এদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যথেষ্ট সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়নি। দেশীয় গ্যাসের স্বল্পতার কারণে আমদানি করা এলএনজি'র ওপর নির্ভরশীল হওয়ার পর থেকেই গ্যাসের দাম বাড়তে থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই বাড়তি ব্যয় আরও বাড়িয়েছে।'

তিনি বলেন, 'দেশের নিজস্ব জ্বালানির অনুসন্ধানে ধীরগতি, উত্তোলন না করা ও বিদেশি জ্বালানির ওপর ক্রমাগতভাবে নির্ভরশীলতা এই সংকটের মূল কারণ।'

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, 'সরকার বলছে দেশের বর্তমান সংকট আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে কেটে যাবে। কিন্তু ভবিষ্যতে জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশয় ও আশঙ্কা থেকেই যাবে। কারণ বিশ্ব বাজারে এলএনজির মূল্য বৃদ্ধি সহসা থেমে যাবে না, বরং ইউরোপিয়ান দেশগুলো রাশিয়ার গ্যাস না পেয়ে এলএনজি বাজারে নামবে যা এলএনজির দাম আরও বাড়াবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকতে পারে দেশের আবিষ্কৃত অথচ উৎপাদন স্থগিত রাখা গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন শুরু করা, পুরনো পরিত্যক্ত কূপগুলোকে সংস্কারের মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্যাস উৎপাদন করা। আর দীর্ঘমেয়াদে দেশের গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধানে অনুসন্ধান কূপ স্থাপন করা।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, 'জ্বালানি খাতের ওপর দেশের জনগণের মালিকানা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত না হলে ওই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয় না। বাংলাদেশে বিদ্যমান জ্বালানি সংকটের কারণেই দেশে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। ভর্তুকি মেটানোর জন্য ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো হবে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার যে বলে বিদ্যুৎ খাতে বড় অংকের ভর্তুকি দেওয়া হয়, কিন্তু জনগণের প্রশ্ন করা উচিত সে ভর্তুকি কারা পায়। সাধারণ মানুষ তো পায় না। বরং বিদ্যুতের সক্ষমতা বাড়ানোর নামে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে গত ১১ বছরে বিভিন্ন কোম্পানিকে ৯০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।'

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট কাটাতে গ্যাস উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। অনেকেই বলেন, আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নেই। কিন্তু সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে পরিকল্পনা নিতে হয়, সরকার কি সেটা নিয়েছে? বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোই তো আমাদের এখানে গ্যাস উত্তোলন করছে, ব্যবসা করছে। তাহলে আমাদের বাপেক্সের সক্ষমতা কেন বাড়ানো হয়নি?'

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক ও লেখক বিডি রহমতুল্লাহ বলেন, 'জল-জমি-জঙ্গল এ তিনটি বাদ দিয়ে আমরা বাঁচতে পারবো না। তাই প্রাণ-প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করে আমরা বিদ্যুৎ চাই না। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দেওয়া দরকার। এর খরচও কম। সরকার চাইলে শতভাগ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সম্ভব।'

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট-সহ বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে পারছে বাংলাদেশ। জ্বালানির তেলের সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে অনেক হিসাব করে সংসার চালাতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৩ কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের রক্ষায় সুনির্দিষ্ট গ্রহণ করা দরকার। সরকার মেগা প্রকল্পের নামে কতগুলো অবকাঠামো তৈরি করছে। অথচ প্রকৃত উন্নয়ন হলো মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন। সরকার এমন সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেগুলো দেখে মনে হয় যা করার দরকার তা করছে না এবং যা করার দরকার নেই তা করছে। সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্যই এসব মতলববাজীর উন্নয়ন করা হচ্ছে।'

গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, মোল্লা এম আমজাদ হোসেন, অরুণ কর্মকারসহ আরও অনেকে অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English

How frequent policy shifts deter firms from going public

If a company gets listed, it will enjoy tax benefits, and this is one of the major incentives for them to go public..However, the government’s frequent policy changes have disheartened listed firms many times, as they faced higher tax rates once they got listed..It gave a clear, nega

2h ago