দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেড়েছে টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রি

তাঁতীরা সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা দামের শাড়ি তৈরি করেন। ছবি: স্টার

আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে টাঙ্গাইল শাড়ির বিক্রি বেড়েছে। উৎসবের দিনগুলোতে বাহারি রঙ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ডিজাইনের জন্য স্থানীয় দক্ষ কারিগরদের হাতে তৈরি এসব শাড়ির চাহিদা বরাবরই আছে।

এসব শাড়ি বিভিন্ন হাটবাজার এবং শপিংমল ঘুরে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশের গ্রাহকদের কাছে। এমনকি ভারতেও বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা উৎসবের চাহিদা মেটাতে টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় তাঁতীরা সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা দামের শাড়ি তৈরি করে থাকেন। যা সমাজের সব শ্রেণী, পেশা ও সামর্থ্যের গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।

ছবি: স্টার

তবে করোনা মহামারিতে টাঙ্গাইল শাড়ি শিল্পে বিপর্যয় নেমে এসেছিল। তখন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বেকার হয়ে পড়েন। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অনেক তাঁত কারিগররা অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হন।

দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এলাকার তাঁতি সুব্রত রাজবংশী ডেইলি স্টারকে জানান, পূজার বাজার ধরতে গত কয়েক মাসে তিনি ৫০টি তাঁতের মধ্যে ৩৫টি আবার চালু করেছেন।

টাঙ্গাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব বলেন, 'স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শাড়ির সবচেয়ে বড় বাজার সাপ্তাহিক করটিয়া হাটে টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা বেড়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে শাড়ি কিনেছেন। দীর্ঘদিন পর শাড়ি বেচাকেনা ভালো হচ্ছে।'

সরেজমিনে করটিয়া হাটে টাঙ্গাইল শাড়ির ব্যাপক বেচাকেনা দেখা যায়।

রংপুর থেকে আসা পাইকার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'বাহারি ডিজাইন এবং দাম নাগালের মধ্যে থাকায় যে কোনো উৎসব পার্বণে গ্রাহকদের কাছে বিভিন্ন মানের টাঙ্গাইল শাড়ির কদর রয়েছে। এবার পূজার আগে করটিয়া হাটে প্রচুর শাড়ি এসেছে। তুলনামূলকভাবে দামে কম হওয়ায় যেকোনো উৎসবের আগে আমি এখান থেকে শাড়ি কিনে নিজ এলাকায় বিক্রি করে থাকি।'

দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলের 'তাঁত পল্লী' নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক শাড়ি ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যেই ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে।'

স্থানীয় তাঁতিদের কয়েকজন বলেন, বৈধ উপায়ে রপ্তানি ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারতে অবৈধ পথেও অনেকে শাড়ি নিয়ে যান।

টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, 'পূজা উপলক্ষে টাঙ্গাইলের ১০ লাখেরও বেশি শাড়ি ইতোমধ্যে ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে তবে মহামারির আগের তুলনায় রপ্তানি প্রায় ২০ শতাংশ কম।'

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের বাজিতপুর বেসিক সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, 'জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার তাঁতি পরিবারের প্রায় ২০ হাজার হস্তচালিত তাঁতের পাশাপাশি ২৫ হাজার পাওয়ার লুম রয়েছে।'

'বর্তমানে ১ লাখেরও বেশি কারিগর এই পেশায় নিয়োজিত আছেন, যাদের অর্ধেক স্থানীয় এবং বাকিরা সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুড়িগ্রাম ও অন্যান্য জেলার বাসিন্দা,' তিনি যোগ করেন।

ছবি: স্টার

স্থানীয় তাঁতিরা জানায়, মাত্র ৩ দশক আগেও টাঙ্গাইলের সদর দেলদুয়ার, কালিহাতী, নাগরপুর, বাসাইল ও সখীপুর উপজেলায় প্রায় এক লাখ হস্তচালিত তাঁতে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক কর্মরত ছিল। কিন্তু সূতা ও রংসহ শাড়ি তৈরির সব উপকরণের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবং তুলনামূলকভাবে শাড়ির দাম তেমনটা না বাড়ায় বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ তাঁত। বেকার হয়ে যাওয়া অনেক দক্ষ তাঁত শ্রমিক পেশা পরিবর্তন করে চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যান। অনেকে কৃষিকাজ, দিনমজুরি, অটো রিকশা চালানোসহ বিভিন্ন পেশায় চলে যান।'

বর্তমানে দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলের অল্প কয়েকজন ধনী তাঁতি জেলার পুরো শাড়ি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানান তারা।

স্থানীয় তাঁতিদের অভিযোগ, তারা স্বল্প মজুরীতে স্থানীয় ছোট তাঁত কারাখানার মালিকদের দিয়ে নিজেদের দেওয়া ডিজাইন অনুযায়ী শাড়ি তৈরি করিয়ে নিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছেন। অপরদিকে পুঁজির অভাবে তাঁত বন্ধ রাখতে হচ্ছে গরিব এবং ছোট ছোট তাঁত কারখানার মালিকদের।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh investment to GDP ratio 2025

Private investment sinks to five-year low

Private investment as a percentage of the gross domestic product has slumped to its lowest level in five years, stoking fears over waning business confidence and a slowdown in job creation.

11h ago