বন্দরনগরীতে দুর্গাপূজা উদযাপন: নিরাপত্তা জোরদার, তবুও শঙ্কা

দুর্গাপূজা
এ বছর দেবীদুর্গার আগমন হয়েছে দোলায় বা পালকিতে এবং দেবী কৈলাসে ফিরবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চড়ে। ছবি: রাজীব রায়হান/ স্টার

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে উদযাপিত হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

আজ শনিবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব।

বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে থাকায় চট্টগ্রাম শহর ও উপজেলায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপিত হচ্ছে।

যদিও মানুষ উৎসবের মেজাজে, তবে অনেকেই বলছেন গত বছরের মতো কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কায় তাদের মনে আতঙ্ক রয়েছে।

তবে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে।

এ বছর জেলার ১৫টি উপজেলায় মোট ২০৬২টি মণ্ডপে এবং নগরীতে ২৮৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে।

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে শহর ও উপজেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নগরীতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।

ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স, সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন, বলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।

'মোবাইল টিম এবং গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা ছাড়াও প্রতিটি পূজামণ্ডপে পুলিশ ও আনসারদের সমন্বয়ে একটি দল সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে,' তিনি বলেন।

সিএমপি কমিশনার বলেন, 'প্রতিমা তৈরির স্থান থেকে শুরু করে পূজামণ্ডপ এবং সবশেষে বিসর্জন পর্যন্ত সব জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।'

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মণ্ডপের চারপাশে একটি শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি মণ্ডপে পুরুষ ও নারী দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা প্রবেশপথ রয়েছে এবং ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে।

সিএমপি কমিশনার বলেন, 'যদিও এবারের পুজো নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকির তথ্য গোয়েন্দা রিপোর্টে নেই, তবুও আমরা যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।'

এ বছর প্রতিমা বিসর্জনের দিন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতসহ ৯টি স্থানে আলাদা নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন শেষ করতে হবে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয়েছে। তারা সবাই সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।

সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় রাজনৈতিক দলসহ সব স্তরের মানুষকে ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু মণ্ডপে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ হবে না।

যদিও দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, তবে জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ বলেছেন যে গত বছরের পূজামণ্ডপে সহিংস হামলার স্মৃতি তাদের এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। 

শহরের আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা পম্পি দত্ত বলেন, 'আমরা উৎসবের আমেজে আছি ঠিক, কিন্তু একই সঙ্গে পূজামণ্ডপে গত বছরের সহিংসতার স্মৃতি আমাদের এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকের মনে একটা চাপা আতঙ্ক রয়েছে।' 

'তবে আশা করি, এই বছর কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটবে না। এবং পূজামণ্ডপসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন প্রোএক্টিভ ভূমিকা পালন করবে,' তিনি বলেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

3h ago