আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমেরিকা যাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চায়, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। আমেরিকা হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা দেয়। এগুলো একদিকে আসে একদিকে যায়। আমরা মোটেও আশঙ্কা করি না। আমাদের আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।

আজ মঙ্গলবার বিআইআইএস ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সঙ্গে আমেরিকার খুবই ভালো সম্পর্ক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়ে। তারা আমাদের পরামর্শ দেয়। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই, আশঙ্কারও কোনো কারণ নেই।'

সাংবাদিকদের আতঙ্কের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, 'আপনারা এতো আতঙ্ক দেখেন কোথায়? এক কানে শোনেন আরেক কান দিয়ে বের করে দেন।'

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কীভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর রোডম্যাপ উদ্ধৃতি দিয়ে মোমেন বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি রোডম্যাপ দিয়েছেন, এর একটি হলো ২০৪১ সালের মধ্যে সত্যিকার অর্থে আমরা সমৃদ্ধ ও সোনার বাংলা গড়তে চাই, তাহলে আমাদের রিসোর্সগুলো কাজে লাগাতে হবে। আমাদের বড় রিসোর্স হচ্ছে মানুষ। দ্বিতীয়ত, এগুলোকে কাজে লাগাতে হলে, কর্মসংস্থান করতে হলে, বাংলাদেশে আমাদের অনেক ম্যানুফ্যাকচারিং হাব করতে হবে। এদের কাজে লাগাতে হলে আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়লে আমাদের রপ্তানি বাড়বে। বিনিয়োগের সঙ্গে রপ্তানির বড় একটা সম্পর্ক আছে। যারা বিনিয়োগ করে তারা কিন্তু সংগ্রাম করে। তৃতীয়ত, মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। এরপর যেটি হলো তা টেকনোলজি, আমি সেই টেকনোলজি আহরণ করব, যা ব্যবসা করার জন্য। টেকনোলজি শুধু মেশিন নয়, জ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়া। আর শেষটি হলো সেবার গুণগত মান।'

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বাজার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা নতুন নতুন দেশে যাচ্ছি, শুধু মধ্যপ্রাচ্য না রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, মাল্টা যাচ্ছি। একটার পর একটা নতুন নতুন বাজার তৈরি করছি।'

উন্নয়নে বাংলাদেশ খুব ভালো করছে উল্লেখ করি মন্ত্রী বলেন, 'যারা নিজের কারণে ভালো অবস্থানে গেছেন, পণ্ডিত ব্যক্তিরা, তারা যদি বলে দেশ ভালো অবস্থানে গেছে, তাহলে ঠিক আছে। তাহলে অন্যরা শুনবে। এতে কোনো জোরাজুরি নেই।'

উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, 'পৃথিবীর কোনো দেশে যদি স্থিতিশীলতা না থাকে, শান্তি না থাকে তার উন্নয়নটা ঠিক সেরকম নয়, আমাদের এই উন্নয়নটা টিকিয়ে রাখার জন্য, আমাদের অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত করার জন্য আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা। আপনি দেখেন- মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা না থাকায় সম্পদে ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও অনেকের ভরাডুবি হয়েছে, ইয়েমেন ও আফ্রিকার লিবিয়া অন্যতম। ছোট্ট দেশ সিঙ্গাপুরে শান্তি-স্থিতিশীলতা আছে, তাই দেশটি এশিয়ার একটি আশ্চর্য।'

বিএনপির ২৭ দফার গুম ও মানবাধিকার সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, 'যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, যারা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে সারা বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, এত সন্ত্রাস যে আদালতের বিচারকও শান্তিতে থাকতে পারেননি। এমনকি বিদেশি এক রাষ্ট্রদূত এক জায়গায় বেড়াতে গেলে সেখানে বোমাবাজি হয়। তিনি বেঁচে গেছেন, কিন্তু অনেক লোক মারা যায়। একইদিনে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩টিতে বোমাবাজি হয়। এরপর বাংলাদেশ পর পর ৫ বার দুর্নীতিপরায়ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হলো। আর সেই সঙ্গে এই সন্ত্রাসের কারণে আমাদের নেতারা মারা গেলেন।'

'তৎকালীন বিরোধী দলীয় কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনার সমাবেশে বোমা হামলা হলো। ২৪ জন মারা গেল, অনেকে আহত হলেন, অনেকে আজীবন পঙ্গু হলেন। এরপর ২০১৩-২০১৪ সালে কতজন লোককে গাড়িতে জীবন্ত জ্বালিয়ে মেরে ফেলেছে, যা অমানবিক। আর ওরাই মানবিকতার কথা বলে। নিজের ঘরেই তো আগে সামাল দেওয়া দরকার। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তারা যদি এসব বলে তাদের এটি ভাঁওতাবাজি', বলেন তিনি।

বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশের কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, 'তারা সারাদেশে সমাবেশ করেছে, শোভাযাত্রা করেছে, আর বাসের কোম্পানি তাদের নিজেদের তাগিদে তা বন্ধ করে দিলো, সরকার তাদের বলেনি। তারা গাড়ি বের করেনি ভয়ে, কারণ তাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেবে।'

ইতালি ও স্পেনের পাসপোর্ট বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, 'ইতালি ও স্পেনসহ আরও দু-একটা দেশে আমাদের বিপুল সংখ্যক জনগণ সমস্যায় আছেন। তারা বয়সের ক্ষেত্রে মিথ্যা বলে কাজ নেন এবং পরে পাসপোর্ট সংশোধন করতে মিশনে আসলে তা নবায়ন করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা বিভিন্ন ছলচাতুরি করেন, বিভিন্ন জায়গায় ঘুষ দেন। কেউ কেউ আবার বাবা ও মায়ের নাম পরিবর্তন করে ফেলেন। আমরা তো আর এই অনৈতিক কাজ করতে পারি না। তখন তারা মিডিয়ায় ভোগান্তির কথা বলেন যে, আমরা পাসপোর্ট দেই না।'

Comments

The Daily Star  | English

Next nat’l polls: BNP urges CA, CEC to disclose what they discussed

The BNP will feel reassured if both the chief adviser and the chief election commissioner disclose to the nation what they discussed about the upcoming national polls during Thursday’s meeting, the party’s Standing Committee member Salahuddin Ahmed said yesterday.

59m ago