২১ ফেব্রুয়ারি

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কাল

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় এবং পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকার ছাত্র ও সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
ছবি: ইউএনবি

মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্মরণ করে জাতি মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) 'অমর একুশে', ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায়, বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩-এর প্রতিপাদ্য হলো 'বহুভাষিক শিক্ষা- একটি বহুভাষিক বিশ্বে শিক্ষাকে রূপান্তরিত করার প্রয়োজনীয়তা'।

ভাষা আন্দোলনের সেই বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালি পায়ে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গাইতে গাইতে হাতে ফুল নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাবে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় এবং পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকার ছাত্র ও সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস থেকে ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও কয়েকজন মাটির বীর সন্তান।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, 'অমর একুশের চেতনা এখন বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অনুপ্রেরণার উৎস। তবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঠিক চর্চা ও সংরক্ষণে আমাদের আরও বেশি পরিশ্রমী হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির আশীর্বাদে আমরা এখন একই বৈশ্বিক গ্রামের বাসিন্দা। তাই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে বিভিন্ন ভাষায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যা আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত।'

তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন আমাদের নিজস্ব ভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।'

তিনি আরও বলেন, 'অমর একুশের চেতনাকে ধারণ করে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হোক, বৈষম্যহীন বর্ণিল পৃথিবী গড়ে উঠুক- শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।'

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ অনুসরণ করে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছি। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করব- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলব।

তিনি আরও বলেন, 'এ ছাড়া, আমরা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন করছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের মতো উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন 'সোনার বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।'

অন্যদিকে, রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, ভাষা শহীদ দিবস বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জঙ্গি হামলার কোনো সম্ভাবনা নেই, কারণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে।

কমিশনার বলেন, 'নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা পলাশী থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারিতে নিয়ে এসেছি। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে এলাকাটি পর্যবেক্ষণ করা হবে।'

তিনি বলেন, 'কর্মসূচিকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তারা প্রথমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। তারপর, সাধারণ মানুষের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হবে।'

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষ পলাশী দিয়ে প্রবেশ করবে এবং দোয়েল চত্বর দিয়ে প্রস্থান করবে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোনো ব্যাগ বা অন্যান্য জিনিসপত্র বহন করতে দেয়া হবে না।

দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে এবং বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি রেডিও স্টেশন ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

অমর একুশে উপলক্ষে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
 

Comments