শিশু-গৃহকর্মী হত্যার ঘটনায় এমজেএফের উদ্বেগ
দেশে অব্যাহতভাবে গৃহকর্মী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। গৃহকর্মী নির্যাতনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি মগবাজারের একটি হাসপাতালের সামনে থাকা ফ্রিজিং ভ্যান থেকে ১০ বছরের শিশু-গৃহকর্মীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটির দেহে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। তাকে গোপনে দাফন করার জন্য ফ্রিজিং ভ্যানে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশ ধারণা করছে।
এমজেএফ বলেছে, এই শিশুটিই নির্মমতার একমাত্র শিকার নয়, এরকম নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য উদ্ধৃত করে এমজেএফ জানিয়েছে, চলতি বছরের শুধু জানুয়ারি মাসেই ৩ শিশু-গৃহকর্মী হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে দুই জনের বয়স সাত থেকে ১২ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।
এমজেএফ এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, 'আমরা লক্ষ্য করছি যে অপরাধীরা ধরা পড়লেও শাস্তি হচ্ছে না। ক্ষমতার জোরে বা আইনের ফাঁক গলে তারা বেরিয়ে আসছে। ১০ বছরের এই শিশুটিকে এত নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে যে, কোনো সুস্থ মানুষ তা কল্পনাও করতে পারবে না। নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত ৬৯ বছরের ফরহাদ বাধন মৌ যেন কোনভাবেই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।'
এমজেএফ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের 'গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫' প্রণয়নের লক্ষ্যে বহুদিন ধরে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। সেই নীতিমালায় গৃহকর্মীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, তাদের বেতনভাতা ঠিকমতো পরিশোধ, নির্যাতন না করা, শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা বিধান, ভরণপোষণ, ছুটি ও প্রণোদনাসহ আরও সুবিধার কথা স্পষ্ট করে বলা আছে। বর্তমান বাস্তবতায় এই নীতিমালা থেকে দ্রুত আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে এমজেএফ।
এমজেএফ মনে করে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনার এতো ভয়াবহ চিত্র উঠে আসার পরও যদি একটা মামলারও বিচার আনতে না পারি, তাহলে মানুষ ভাববে যে এই অপরাধ করে পার পাওয়া যায়। অর্থ বিত্ত দিয়ে অপরাধ ঢেকে ফেলা যায়। আর এই কারণেই দিনে দিনে গৃহকর্মী নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে। শুধু পত্রপত্রিকার মাধ্যমে যেসব ঘটনা আমরা জানতে পারি, বাস্তবে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা আরও অনেক বেশি। সব ধরনের পেশাজীবীর বাড়িতেই গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনার খবর ছাপা হচ্ছে।
এমজেএফের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে যত গৃহকর্মী আছেন অধিকাংশই নারী এবং শিশু। যারা ধর্ষণ, হত্যা এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাদের বয়স ১০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। গৃহকর্মীদের আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় তারা মামলা করতে চান না বা মামলা করলেও তা চালাতে পারেন না। এর বাইরের তাদের দারিদ্র্যের সুযোগ গ্রহণ করে সালিশের মাধ্যমে মিটমাট করা হয়।
Comments