অভিযান চলাকালে কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকা, শেষ হতেই ২৮০

নারায়ণগঞ্জের দ্বিগুবাবুর বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান। ছবি: সংগৃহীত

কাঁচা মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান পাইকারি ও খুচরা বাজার দ্বিগুবাবুর বাজারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। আজ সোমবার এ বাজারে অভিযান চলাকালে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় কাঁচা মরিচ।

তবে কর্মকর্তারা বাজার থেকে চলে যাওয়ার কিছু সময় পরেই আবার ২০০ থেকে ২৮০ টাকায় মরিচ বিক্রি করেন বিক্রেতারা। একই মরিচ গত কয়েকদিন ৬০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দ্বিগুবাবুর বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, মরিচের দাম কমায় স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতাদের মধ্যে। তবে এই মূল্যও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হওয়ায় গত কয়েকদিনের তুলনায় দাম প্রায় ৪ গুণ কমেছে। ক্রেতারা বলছেন, আমদানি নয়, বাজার সিন্ডিকেটের কারণে কাঁচা মরিচের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল।

বাজারের প্রবেশমুখে খুচরা বিক্রেতা মো. হোসেন প্রতিকেজি ২০০ টাকায় কাচা মরিচ বিক্রি করছিলেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে আমদানি কম ছিল, তাই আড়তদাররা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছেন। আমরাও বেশি দামে কিনেছি বলে খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেছি। ভারত থেকে মরিচ আসায় দাম কমে গেছে। আগের দিনও ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ ২০০ টাকায় বিক্রি করছি।'

আরেক বিক্রেতা কামরুল ইসলাম বলেন, 'ঈদের আগের রাতে ৮০০ টাকা কেজিতে বাজারে মরিচ বিক্রি হয়েছে। এখন দাম কমছে। যেমন দামে কেনা, তেমন দামে বিক্রি করি। আজ ২৪০ টাকা কেজি মরিচ।'

দ্বিগুবাবুর বাজারে মরিচের দরদাম করছিলেন আমির হোসেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ যা দাম তা অন্তত চলে। তবে কাঁচামরিচের দাম আরও কমা উচিত।'

সকাল পৌনে ১১টার দিকে দ্বিগুবাবুর বাজারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়। সে সময় ক্রয়মূল্যের রশিদ দেখাতে না পারায় এক মরিচ বিক্রেতাকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পরে ক্রয়মূল্য যাচাই করে ১০০ টাকা দরে মরিচ বিক্রির নির্দেশ দেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান।

এ সময় ভোক্তা অধিকার ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ১০০ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি শুরু হয়। তখন বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যায়।

তবে কর্মকর্তা চলে যাওয়ার আধাঘণ্টা পর থেকে আবার ২০০ থেকে ২৮০ টাকায় মরিচ বিক্রি শুরু করেন বিক্রেতারা।

জানতে চাইলে এক বিক্রেতা মো. ইউসুফ ডেইলি স্টারকে বলেন, '৯০০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) দরে কিনছি। এখন খুচরা বাজারে কেজিতে ২০০ টাকা করে বিক্রি করছি। ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন ১০০ টাকায় বিক্রি করতে। এইটা করলে তো অনেক লসে বিক্রি করতে হবে।'

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুয়েকজন ক্রেতা বেশি দামে কিনেছেন বলছেন। কিন্তু তারা মূল্য রশিদ দেখাতে পারছেন না। বিক্রেতারা বাজারের মধ্যে সিন্ডিকেট করে এখনো মরিচের দাম বেশি রাখছে। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি।'

চট্টগ্রাম

বেশি দামে কাঁচামরিচ বিক্রির দায়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুচরা ও পাইকারি কাঁচাবাজারে অভিযানে কয়েকটি দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে।

আজ দুপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ অভিযানের নেতৃত্ব দেন।

অভিযানে রিয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা বাজারে মেসার্স আনছার ট্রেডার্সকে বেশি দামে কাঁচা মরিচ বিক্রির দায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ছাড়া, ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যে অসঙ্গতি থাকায় প্রণব ট্রেডার্স ও রিয়াজ এন্টারপ্রাইজকে মোট ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভোক্তা অধিকার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়ায় কয়েকটি দোকানকে জরিমানা করা হয়েছে। অনেককে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

ঈদুল আজহার আগে নগরীতে স্থানভেদে কাঁচামরিচের দাম ৭০০-৯০০ টাকা বিক্রি হয়। ঈদের পর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৮০০-১০০০ টাকা।

ফরিদপুর

ফরিদপুরের মধুখালীতে কাঁচা মরিচের আড়ৎ ও চিনির পাইকারি দোকানে অভিযান চালিয়েছে জেলা ভোক্তা অধিদপ্তর।

অভিযানে ৫ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পরিচালিত এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ।

এ সময় কাঁচামরিচের দাম বেশি নেওয়া, কেনা-বেচার রশিদ না থাকা এবং মূল্য তালিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করার দায়ে মেসার্স জান্নাত ভাণ্ডার ও মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সকে ২ হাজার টাকা করে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মধুখালীতে কাঁচামরিচ ও চিনির মূল্য অতিরিক্ত রাখা হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে এ অভিযান চালানো হয়।'

পাবনা

পাবনার বড় বাজার, অনন্ত বাজার, মাসুম বাজারে দেশি মরিচ ২৫০-৩০০ টাকা এবং আমদানিকৃত মরিচ ২০০ টাকার কম দামে বিক্রি হয়। তবে অতিরিক্ত দামে কাঁচামরিচ বিক্রি করায় এসব বাজারের কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

বেশি দামে মরিচ বিক্রি করায় সাচ্চু শেখের আরত, মতিয়ারের আড়ত, মনোয়ার সবজি ভাণ্ডার, কালাম স্টোরকে বিভিন্ন অংকের জরিমানা করা হয়। জেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর।

চাষিরা জানান, এ বছর খরা ও অতিবৃষ্টির কারণে কারণে মরিচের ফলন অনেক কম হয়েছে। এ কারণে সরবরাহ সংকট হওয়ায় দাম বেড়ে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, এ বছর পাবনায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের উৎপাদন হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় কম।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

4h ago