সংসদে বিরোধী দল

‘ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে’

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, 'সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষও এর শিকার হচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন।'
ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকরা এই আইনের অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন। ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সরকার এই আইনটি করেছে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে 'এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) বিল-২০২৩' পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান এসব কথা বলেন। তবে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। 

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, 'সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষও এর শিকার হচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন। প্রভাবশালীরা সেটাকে ব্যবহার করছেন। মানুষের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার হরণ হচ্ছে। এই আইন দ্রুত সংশোধন করা দরকার, এই বাতিল করলে আরও ভালো হয়।'

আলোচনায় অংশ নিয়ে মোকাব্বির খান বলেন, 'যদি ডিজিটাল প্রযুক্তি অপব্যবহার রোধ না করতে পারি তাহলে আইন কোন কাজে আসবে না। আবার আইনের অপপ্রয়োগ হলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এমনটি আমরা দেখেছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন ডিজিটাল আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এ আইনে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ হাজার ১টি মামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাংবাদিক কমিউনিটি।'

মোকাব্বির খান বলেন, 'আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৫৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হুমকি, মামলা এবং দায়িত্ব পালনকালে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। গত সাড়ে ৪ বছরে এ আইনটি ভিন্নমত বা সরকার দলের সমালোচনা এবং মুক্ত চিন্তা দমনে প্রয়োগ হয়েছে। এ আইনের কারণে সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়েছে। এ আইন পুলিশকে সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। পুলিশের আইনেও তাদের এত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।'

এ আইনটি দিয়ে সহজে কাউকে হয়রানি করা যায় উল্লেখ করে মোকাব্বির খান বলেন, 'এ বিষয়ে সম্প্রতি রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান ও র‍্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া সরকারি কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের কথা আমরা সবাই জানি। সরকার ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করার জন্য এ আইনটি তৈরি করেছে।'

'এর সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। ফলে নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের প্রবল আপত্তির মুখে আইনমন্ত্রী এটি সংশোধনের কথা বলছেন। আশা করি আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করবেন', যোগ করেন তিনি।  

এটুআই এজেন্সি প্রতিষ্ঠায় বিল পাস

এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) নামে নতুন একটি সংস্থা গঠন করতে জাতীয় সংসদে একটি বিল পাস করা হয়েছে। সরকারি সেবার ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত ও টেকসই করার লক্ষ্যে এই সংস্থা করা হচ্ছে। এটি হবে মূলত বর্তমান এটুআই প্রকল্পের স্থায়ী কাঠামো।

নতুন এই সংস্থা গঠনের লক্ষ্যে 'এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) বিল-২০২৩' আজ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়। বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস করা হয়।

বিলে বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার পর সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে এটুআই নামে একটি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করবে। এজেন্সি হবে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। এই সংস্থার ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী হবেন এর সভাপতি।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার উদ্ভাবন ও উন্নয়ন, উদ্ভাবনী সংস্কৃতির বিকাশ, পাবলিক সার্ভিসের ইনক্লুসিভ ডিজিটাইজেশন ত্বরান্বিতকরণ, জ্ঞানভিত্তিক সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা, জনগণের দোরগোড়ায় বিভিন্ন ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন 'অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)' প্রকল্প এবং বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন 'অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)' প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও দপ্তর/সংস্থাকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সেবা প্রদানসহ ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, ই-নথি, ডি-নথি, শিক্ষক বাতায়ন ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, জাতীয় তথ্য বাতায়ন, জাতীয় কল সেন্টার-৩৩৩ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বল্প সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে উন্নত সেবা প্রদানে 'অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)' মূল চালিকাশক্তি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাবলিক সার্ভিসের ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিতকরণ এবং নাগরিকের জীবনমানে সৃষ্ট সেবা অধিকতর কার্যকর ও টেকসই করার জন্য 'অ্যাসপায়ার টু ইনোভেটে'র প্রতিস্থাপকরূপে স্থায়ী কাঠামো হিসেবে 'এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই)' নামে একটি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা এই আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

Comments